ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কাকরোলের গ্রাম

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাকরোলের গ্রাম

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) সংবাদদাতা: গ্রামের নাম বিরতুল। গ্রামটি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে। এ গ্রামের প্রধান সবজি কাকরোল। তাই অনেকের কাছেই গ্রামটির পরিচয় ‘কাকরোলের গ্রাম’।

বিরতুল গ্রামে পা রাখলেই দেখা যায়, চারদিকে নানা সবজির আবাদ। তবে বেশিই হচ্ছে কাকরোল। খরিপ মৌসুমে  গ্রামটি এখন কাকরোলের গ্রামে পরিনত হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই কাকরোল বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

এখানের সবজির বিশেষত্ব হচ্ছে, চাষের পুরো প্রক্রিয়াই বিষমুক্ত। কাকরোল চাষেও স্থানীয় চাষিরা ব্যবহার করছেন সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। যা ব্যবহার করে চাষিরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারছেন। আর দিন যত যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফাঁদের জনপ্রিয়তা।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে দেখা যায়, কাকরোল চাষে স্থানীয় চাষিরা ব্যাপক হারে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করছেন। ওই গ্রামের কাকরোল চাষি নিহার চন্দ্র দাস বললেন, ‘খরিপ মৌসুমে আমাদের প্রধান ফসল কাকরোল। আমাদের এই উৎপাদিত কাকরোলের চাহিদা এলাকায় তো আছেই ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাতেও আছে এর সমান কদর। এমনকি দেশের চৌহদ্দি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কাকরোল রপ্তানিও করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর ৪০ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করি। এ বছর এক একর জমিতে কাকরোল চাষ করেছি। যেহেতু আমাদের কাকরোল বিদেশে যাচ্ছে তাই কৃষি বিভাগের পরামর্র্শে কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈবসার ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি। এতে উৎপাদন খরচও কমছে, সেই সাথে বিষমুক্ত সবজিও পাচ্ছি।’
 


বিরতুল গ্রামের আরেক চাষি সালামত সরকার বলেন, ‘কাকরোল, লাউ ও কুমড়ায় মাছি পোকার আক্রমণ বেশি হয়। কীটনাশক ব্যবহারে এ পোকা তেমন একটা দমন হয় না। আবার টাকাও বেশি খরচ হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির মোল্লার পরামর্শে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ ব্যবহার করছি। এখন খরচ কমেছে এবং পোকাও বেশি মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিষমুক্ত সবজিও খেতে পারছি।’

এ ব্যাপারে আলাপকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নাদির সিদ্দিকী বলেন, ‘কুমড়া জাতীয় সবজিতে মাছি পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। স্ত্রী মাছি কচি সবজিতে অভিপজিটর ফুটিয়ে ভিতরে ডিম পাড়ে যা থেকে পরবর্তীতে পোকা হয় এবং ফল পঁচে যায়। তাই এ পোকা দমনে বাইরে থেকে কীটনাশক স্প্রে করে খুব একটা কাজ হয় না। বরং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি উপকারী পোকাও মারা যাচ্ছে।’

তিনি জানান, সেক্স ফেরোমন ফাঁদে স্ত্রী পোকার গন্ধযুক্ত একটি লিউর প্লাস্টিকের বয়ামে ব্যবহার করা হয়। চাষিরা যাকে তাবিজ বলে থাকেন। এ লিউরের গন্ধে পুরুষ পোকা ফাঁদের ভিতর প্রবেশ করে উড়াউড়ি করতে থাকে এবং প্লাস্টিকের বয়ামে বাধা পেয়ে পাখায় আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায়। বয়ামের নিচে যেহেতু সাবান গুড়া পানি ব্যবহার করা হয় তাই পোকা আর উড়তে পারে না এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। বয়ামের ভিতরে ব্যবহৃত ফেরোমন লিউরের দাম ৩০-৩৫ টাকা এবং বয়ামের দাম ৩০-৩৫ টাকা, প্লাস্টিক বয়াম বা বোতল কেটেও ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে আলাদা করে বয়াম কেনার দরকার নেই। এক বিঘা জমিতে ১২-১৩টি ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ প্রয়োজন হয়। একটি লিউর এক মৌসুম ব্যবহার করা যায়।

কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, অতিরিক্ত কীটনাশক পরিবেশের পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।  তাই জৈবসার ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। পরিবেশ বান্ধব এ প্রযুক্তিটি জনপ্রিয় করতে রাজস্ব প্রকল্প ও ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ প্রজেক্ট এর মাধ্যমে চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে ‘ফাঁদ’ বিতরণ করা হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/১৭ অক্টোবর ২০১৮/রফিক সরকার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়