ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চিনিতে ভয়, চিনির বিকল্প স্টিভিয়া

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিনিতে ভয়, চিনির বিকল্প স্টিভিয়া

লাইফস্টাইল ডেস্ক : খাবারে চিনি আর মিস্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি বাঙালির মজ্জাগত। এরপর একটু বড়বেলায় চা, কফি, শরবত, শহুরে ডেজার্ট জাতীয় খাবার মানেই চিনি। চিনি ছাড়া মজার খাবার ভাবাটাই যেন কঠিন। কিন্তু এত সাধের চিনি-ই আবার অনেক রোগের কারণ। স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই তাই চিনিকে বাদ দিয়ে দিতে চান খাদ্যতালিকা থেকেই।

চিনির বিকল্প বিভিন্ন মিস্টকারক রাসায়নিক পদার্থ বাজারে প্রচলিত আছে। সাধারণভাবে এই পদার্থগুলোকে আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বা বিকল্প চিনি নামে ডাকা হয়। ওজন কমানো এবং সেই সঙ্গে সুস্থ থাকার আপ্রাণ চেষ্টায় স্বাস্থ্যসচেতনররা চা-কফি তো বটেই, খাদ্যতালিকা থেকেই চিনিকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

নব্বইয়ের দশক থেকে বাজারে চালু এসব চিনির বিকল্প নিয়ে অনেকেরই ধারণা-এতে তেমন ক্ষতি নেই, যেমন ক্ষতি চিনিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো জানাচ্ছে ভিন্ন কথা। বলছে, এসব বিকল্প চিনি কিছুক্ষেত্রে বরং বেশি ক্ষতিকর। রক্তচাপ বাড়ানো, টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ চিনির ক্ষতিকর দিকগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতোন এই বিকল্প চিনি বাড়িয়ে দেয় মানবদেহের ওজনও।

এ বিষয়ে কানাডার মানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত গবেষক মেগান আজাদের বক্তব্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে খ্যাতনামা ওই গবেষক জানিয়েছেন, ওজন বাড়াসহ নানা সমস্যা ঠেকাতে চিনি বাদ দিয়ে অনেকেই অ্যাসপার্টেম, সুক্রোজ আর স্টেভিওসাইডের মতো বিকল্প চিনি বেছে নিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে, চিনির চেয়ে এই কৃত্রিম বস্তুগুলোর রাসায়নিক গঠন আলাদা। আর্টিফিশিয়াল সুইটনার থেকে লম্বা সময়ের জন্য কোনো সুফল পাওয়া যায় না। বরং কারো কারো ক্ষেত্রে ওজন বাড়া ও অন্যান্য কার্ডিও মেটাবলিক সমস্যা হতে পারে।

তাহলে উপায় কি? সুস্থ থাকতে যদি চিনিকে ছাড়তেই হবে তবে চিনির বিকল্প কি হতে পারে যা শরীরে ক্ষতির কারণ হবে না! এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো চট করে কেউ দিতে পারবেন না। তবে উত্তর আছে। বিকল্প প্রাকৃতিক চিনিতে আছে চিনির ক্ষতির সমাধান। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার নতুন প্রাকৃতিক চিনি স্টিভিয়া একেবারেই চিনির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে মুক্ত বলে মত গবেষকদের।

স্টিভিয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ওই অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই খাবার ও পানীয়তে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে স্টিভিয়া। মার্কিন গবেষকদের প্রতিবেদনে জানা যায়, স্টিভিয়া সাধারণ পরিশোধিত চিনির চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি, যদিও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় এর কোনোই প্রভাব নেই। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপাদান, কোনোভাবেই কৃত্রিম নয়।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রাকৃতিক চিনি স্টিভিয়ায় কোনো ক্যালরি নেই। নেই শ্বেতসার। এটি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না, বরং সবদিক থেকে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিজ্ঞানী লরা ওয়েনিসের মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে স্টিভিয়া খুবই উপকারী। এছাড়া দাঁত, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বহুমূত্র রোগের ক্ষেত্রে স্টিভিয়া বেশ উপকারী।

চিনির চেয়ে ৪০ থেকে ৩শ গুণ পর্যন্ত বেশি মিষ্টি হিসেবে মিষ্টিজাতীয় সব খাবারেই ব্যবহৃত হতে পারে স্টিভিয়া। এসব খাবারে সাধারণ চিনি ব্যবহার হলে উচ্চ ক্যালরির কারণে তা শরীরে ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে। চিনির বদলে স্টিভিয়া ব্যবহার করলে বাড়তি ওজনের সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। ফলে যারা ওজন কমাতে চান, তারা স্টিভিয়া ব্যবহার করে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়েও বাড়তি ক্যালরি নেওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে পারেন।

স্টিভিয়ার গুনের কথা এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। আর তাই বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে স্টিভিয়ার কদর। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলোর শপিংমলেও পাওয়া যাচ্ছে স্টিভিয়া। প্রায় ৪০ বছর ধরে স্টিভিয়ার প্রচলন রয়েছে জাপানে। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে স্টিভিয়ানির্ভর খাদ্যপণ্যের ব্যবহার ৪৫৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালে তা বেড়েছে ২৫৮ শতাংশ।

খ্যাতনামা কোমলপানীয় কোম্পানি কোকাকোলা বর্তমানে তাদের আরেকটি কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড স্প্রাইটের রেসিপি পরিবর্তন করে ব্যবহার করেছে স্টিভিয়া। খাদ্য প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানি ও কোমলপানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখন পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে বেছে নিচ্ছে স্টিভিয়া। কারণ পরিশোধিত চিনি স্থুলতার জন্য দায়ী।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে বিকল্প প্রাকৃতিক চিনি স্টিভিয়া। খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তৃতকারক প্রতিষ্ঠান রেনাটা লিমিটেডের নন-মেডিকেটেড পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পূর্ণাভা লিমিটেড দেশের বাজারে ‘চিনিগো’ নামে এই বিকল্প চিনির বাজারজাত করছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়