ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মহান স্বাধীনতা দিবস

নতুন প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হোক জাতি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হোক জাতি

বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন আজ। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দিনে। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে চিরকালীন দাসত্ব ঘুচিয়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘটনাকে।

সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু  পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে। তারা ক্ষমতার বদলে বুলেট আর কামানের গোলায় একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঘুমিয়ে থাকা নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক, কামান নিয়ে হামলা চালায়। শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা। জাতির এ সংকট মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের কবল থেকে স্বাধীনতা রক্ষায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন।

তার আগে ৭ মার্চের বিশাল জনসভায়ও বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন,  ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙালি তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের নির্দেশনামতো যার যা আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। তাদের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধ্বংসযজ্ঞ এবং এর বিরুদ্ধে বাঙালির মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশেরই কিছু লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানি ঘাতকদের সঙ্গে। তারা অংশ নিয়েছিল গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটতরাজের মতো অপরাধে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসের সব বর্বরতাকে হার মানিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ৩০ লাখ শহীদের রক্তসহ বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছি।

একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে। জাতি এ বছর এমন এক সময় ৪৭তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে যখন স্বল্পোন্নত দেশের লজ্জা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হয়েছে। উন্নত দেশে পরিণত হওয়াকে জাতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৬ কোটি মানুষকে অভিন্ন চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পরও স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের নতুন শপথে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজে সর্বস্তরের মানুষকে শামিল হতে হবে। তবেই স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে এগিয়ে যাবে আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বিশ্বের দরবারে।

স্বাধীনতা দিবসে আমাদের অগনিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়