ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নির্বাচিত পদ বাতিল হয় কী করে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নির্বাচিত পদ বাতিল হয় কী করে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : সংসদ সদস্য একটি নির্বাচিত আসন। এই আসন পুরো মেন্ডেট পিরিয়ড সময় পর্যন্ত বহাল থাকে। নির্বাচিত ব্যক্তি পুরো সময়টা তার এই আসনে থাকার যোগ্যতা রাখেন। এমনকি তার নিজ রাজনৈতিক দল থেকে কোনো কারণে বহিষ্কৃত কিংবা নিজে থেকে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলেও তিনি সংসদ  সদস্য পদ কখনো হারাতে পারেন না। একমাত্র নিজে থেকে কেউ পদত্যাগ করলে  তার  আসন  শূন্য  ঘোষণা করা যেতে পারে।

 

অন্যদিকে নির্বাচিত ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা অর্থাৎ আইনবিরোধী এমন কোনো কাজ করেন বলে প্রমাণিত হয় এবং আদালত তাকে এ কারণে পদ ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যভাবে দেখা যেতে পারে।

 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদলের সংসদ সদস্য পদ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামের শেখ শহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তার পক্ষে আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা এই নোটিশ পাঠান। জানি না বিষয়টি এখন কী পর্যায়ে আছেl প্রশ্ন হলো, তিনি তার নির্বাচিত সংসদ সদস্য পদ ছাড়বেন কেন? কী করেছেন তিনি? তিনি কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেছেন? অবশ্যই নয়। তিনি যে রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচন করেছেন সেই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দল ভেঙে আরেকটি দল যদি হয়ে  থাকে তাতে হয়েছে কী? শুধু দল ভাঙাভাঙির কারণে সদস্য পদ বাতিল হওয়ার প্রশ্ন আসে কী করে? বিষয়টির সঙ্গে তার নির্বাচিত সংসদ সদস্য পদের তো কোনো সম্পর্ক নেই। তার দল তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকার যোগ্যতা রাখেন। শুনেছি এর পূর্বে টাঙ্গাইলের লতিফ সিদ্দিকীর সদস্য পদও নাকি বাতিল করা হয়েছেl কাজের গাফিলতির জন্য মন্ত্রিত্ব যেতে পারেl কারণ মন্ত্রী পদে ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়l  কিন্তু সংসদ সদস্য পদ একটি নির্বাচিত পদl নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য তার সময়কালের আগে কখনো সংসদীয় পদ হারাতে পারেন নাl এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবের কিছুই করার নেই।

 

মঈনউদ্দিন খান বাদল জাতীয় সংসদের আসন নং-২৮৫, চট্টগ্রাম-৮ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের দল জাসদ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। তার এই নির্বাচিত পদে তিনি আগামী ২০১৯ নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকার সম্পূর্ণ যোগ্যতা রাখেনl গত ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে জাসদ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যার একাংশের নেতৃত্বে আছেন হাসানুল হক ইনু এবং অপর অংশে রয়েছেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া। আর শরীফ নুরুল আম্বিয়া অংশের কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন বাদল। এরপর দলীয় প্রতীক মশাল প্রাপ্তি প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনে শুনানি হয়। যেখানে ইনুর অংশ মশাল প্রতীক বরাদ্দ পান। সুতরাং এ অবস্থায় বাদলের জন্য জাসদ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পদে থাকা অবৈধ, বেআইনি ও বাংলাদেশ সংবিধানের বিরোধী। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চট্টগ্রাম-৮ আসন শূন্য ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে নোটিশে। এখানে দল ভাঙাভাঙির সঙ্গে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পদ হারানোর প্রশ্ন আসে কী করে? দলের সঙ্গে  সংসদ সদস্য পদের সম্পর্ক এখানে  কোনো  গুরুত্ব  রাখে  নাl নির্বাচিত  হওয়ার পর নির্বাচিত ব্যক্তি সংসদে দলের প্রতিনিধিত্ব করে না, করে দেশ ও জনগণের প্রতিনিধিত্বl  বাংলাদেশের সংবিধানে যদি দলের সম্পর্কের সঙ্গে নির্বাচিত পদের সম্পর্ক এক করে দেখা হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছেl 

 

সুইডিশ জাতীয় সংসদ, কাউন্টি কাউন্সিল ও ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে কেউ স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হতে পারে নাl সবাইকে নমিনেশন দেওয়া হয় স্ব স্ব রাজনৈতিক দল থেকেl নির্বাচিত হওয়ার পর পুরো চার বছর সময়কালের মধ্যে যদি কেউ কোনো কারণে তার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেড়ে দেন কিংবা দল তাকে বহিষ্কার করে তবুও তার নির্বাচিত পদ বহাল থাকেl তখন তিনি দলবিহীন অবস্থায় সংসদ, কাউন্টি কাউন্সিল ও ইউনিয়ন কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনl  নির্বাচিত সদস্য পদে থাকা আর না-থাকা সম্পূর্ণ নির্বাচিত সদস্যের নিজের ওপর নির্ভর করেl এখানে সুইডেনের একটি উদহারণ টেনে আনা যেতে পারেl রিকার্ড ভাল নামের একজন নির্বাচিত স্টকহোম কাউন্টি কাউন্সিলরকে তার রাজনৈতিক দল সুইডিশ ডেমোক্রেট সম্প্রতি বহিষ্কার করেl যেহেতু তিনি একজন নির্বাচিত কাউন্টি কাউন্সিলার সুতরাং দলবিহীনভাবেই তিনি কাউন্টি কাউন্সিলে কাউন্সিলার হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছেনl আগামী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি তার এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেনl এ সময় একজন কাউন্টি কাউন্সিলার হিসেবে সম্মান, ভাতাসহ যাবতীয় সব সুযোগ-সুবিধা তিনি পাবেনl

 

বাংলাদেশের বেলায় নির্বাচিত পদ হারানোর বিষয়টি সত্যি সত্যি যদি অন্যভাবে দেখা হয়ে থাকে তাহলে তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারেl কারণ একটি নির্বাচিত পদ তার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পূর্বে কখনো হারানোর কথা নয়l নির্বাচিত ব্যক্তি দল থেকে নমিনেশন পেলেও জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেনl এই পদ থেকে সরে আসার অধিকার শুধু নির্বাচিত ব্যক্তির, অন্য কারো নয়l

 

লেখক : নির্বাচিত কাউন্টি কাউন্সিলার স্টকহোম কাউন্টি কাউন্সিল

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৬/ডাবলু/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়