ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফকির ও তারানা || আজহার ফরহাদ

আজহার ফরহাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফকির ও তারানা || আজহার ফরহাদ

তবারক ফকিরের মাথার পাশে একটা লাল শিমুল ফুল ঝরলো। রাতের বেলা। কয়েক ঘর আস্তানা পার হয়ে আবছা গান ভেসে আসছিল। চোখে ঘুম নিয়ে কেউ গাইছে নাকি ঘুম চোখ মুদে দেয়ার জন্য গাইছে সে বোঝা মুশকিল। দোলপূর্ণিমার কিছুদিন বাকি আর। গড়াই নদীর জল তিরতির করে বালুচরের সঙ্গে ছেনালি করছে। দূর থেকে এমন দৃশ্য যে দেখেনি, সে চেনেনি দেহ, চেনেনি বাঁক, চেনেনি মিলনের টানাপোড়েন।

পাশে বসে থাকা মকবুল ফকির কথা বলছিল তারানার সঙ্গে। তারানা, বহুঘাটের জল খেয়ে বেহুঁশ হওয়া মেয়ে; পাথরের মতো জমে আছে। মকবুল ফকির কি একটা আলাপ করছে, তবারক ফকির ঘুমাচ্ছে, মেয়েটা এমনভাবে শুনছে, তা আবার দূর থেকে দেখছে লাবিব; তার একসময়ের প্রেমিক। খুবলে খেয়েছে সব, যা পেয়েছে, যা দিয়েছে তারানা, দেয়নি তা, যা সে নিজেও জানে না।

মকবুল যা বলছে, তার ভেতর কি ওসব আছে? এমনটা ভাবতে ভাবতে লাবিব আরও কাছে শিমুলগাছের নিচে এসে লুকিয়ে সব শুনতে লাগলো। সে ভাবলো ফকিরেরা এমন কিছু মৈথুন ও সম্ভোগের পরিচয় জানে, যা জানলে আরও ভালো করে ভোগ করা যায় নারীদেহ।

কিন্তু বেশিক্ষণ সে থাকতে পারলো না, কুকুরের অত্যাচার আর পাগল-মাস্তানদের খিস্তিখেউড়ে টেকা দায়। এক পাগলি পেছন থেকে ধেয়ে এসে একটা লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়ে বলতে লাগলো, ‘জায়গা ছাড়, মাগির ছাওয়াল...’


দুই

‘শব্দের ঘরে নিঃশব্দের কুঁড়ে, সদাই তারা আছে জুড়ে।’

কারা আছে? তারানা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে ওঠে। মকবুল ঘুমে অচেতন। তবারক ফকির কথাটা শুনলো ঘুমের ঘোরে। পাশ ফিরে দেখে মেয়েটি ঠান্ডায় গুটিয়ে আছে। একটি চাদর তার গায়ে জড়িয়ে দিতেই তারানা আবারও প্রশ্নটি করলো।

দেখো মা, এসব অজানা কথা জানার জন্যই তো আমাদের সংসারধর্ম ত্যাগ করা। বাউল হয়ে ফকিরি করা। একবার জেনে গেলে মরেও সুখ পাবো। আমিও কি সার জেনেছি? তোমার মতো আমারও শব্দের ঘরে প্রশ্ন করতে থাকা, ঘুরে মরা। নিঃশব্দকে ধারণ করতে পারি না বলেই জুড়ে থাকার হদিস পাই নে।

তবে আপনারও কি আমার মতো এত দুঃখ, এত বিপত্তি! তবারক ফকির হেসে বললো, তা নয়, আমাদের যার যার দুঃখের ও সুখের ঘর ভিন্ন। যার গভীরতা ও অনুসন্ধান বেশি তার দুঃখ ও সন্তাপও বড় কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে অগভীর মনের। তুমি যদি বুঝতে পারো যে, তুমি ধীরে ধীরে গভীর হতে গভীরতর হচ্ছো, তোমার বিপত্তি ঘটলেও সেটা গভীর দুঃখের অতলে হারিয়ে যাবে, টের পাবে না।

বুঝি না এসব কঠিন কথা! আপনারা কি এসব কথার ভেতরই নিজেদের আড়াল করে রাখেন? মাঝে মাঝে মনে হয়, নারী হয়ে জন্ম হওয়াটাই পাপ, মনে হয় পাপের জন্যই আমার জীবন। আপনাদের সাথে কথা বলে মনের পাপবোধ আরও বাড়ে, তবু বারবার আসি, কোথায় যাব?

তবারক ফকির মাত্র ঘুম থেকে উঠে এমন কথায় কিছুটা বিব্রত বোধ করলো। শিমুলতলায় পাগলি ফের কাকে যেন পেটাতে উদ্যত, অশ্রাব্য গালাগাল তার মধুর সঙ্গীতের মতো মনে হতে লাগলো, ফকিরের না যতটা ততটা তারানার। সে উঠে বসলো। ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে লাগলো পাগলিকে।

আচ্ছা, আমারও কি এমন অবস্থা হবে?

তারানার অদ্ভুত প্রশ্নে ফকিরের চোখ বড় হয়ে এলো- তুমি কি জানো পাগলি সম্পর্কে?

না। তবে তার পরিণতি বরণ করার ধারণা কেমন করে নিলে? মনে হলো তাই।

তোমার কী হবে, কোথায় শেষ তা জানার চাইতে তুমি কী এবং কোথায় আছ, তা বোঝার চেষ্টাই মূল কাজ। যদি বুঝতে পারো তোমার জীবন অর্থহীন, তবে সে অর্থহীনতাকে সাহসের সঙ্গে ধারণ করতে শেখো, কিন্তু এমন ভেবে বসে থেকো না যে এখান থেকে পালাবে। জীবন থেকে পালানো যায় না, তাকে বদলাতে হয়।

কীভাবে? নতুন করে জন্ম নেয়ার শপথ নিয়ে। গাছতলার ওই পাগলিও যে তা নেয়নি, সে কেমন করে বলবে?


তিন

সতীমায়ের নাম করে কাছে এসে লোকটা দাঁড়াতেই লাবিব টের পেলো ওর মুখ দিয়ে বাংলা মদের গন্ধ বেরুচ্ছে। তার কাছে চিঠি লেখার টাকা চাইলো।

মানে? লাবিব প্রশ্ন করতেই লোকটা আবারো ঢেঁকুর তুলে বলতে লাগলো, আমি সতীমায়ের ছেলে, মা’র কাছে চিঠি পাঠাবো, টাকা দ্যাও। লাবিব হাতের ব্যাগ খুলে দশ টাকার একটি নোট বের করে দিল। লোকটা সেটার ওপরেই চিঠি লিখতে শুরু করল। লিখছে তো লিখছেই। লেখা শেষ হওয়ার পর তা পড়ে শোনানোর জন্য আবার কাছে এলো।

ভাষ্যটা এ রকম- ‘মা গো। বেহাল হয়ে মদ খাই। কিছু ভালো লাগে না। বউ ভাত কাপড় দেয় না। বলে, ভিক্ষা করো। আমি কি আর ভিক্ষা করে খাই? শিমুলতলার ওই পাগলির কাছে যাইতে ভালো লাগে। পাগলিও লাঠি দিয়া ভয় দেখায়। তুমি ওরে কও, আমারে যেন ভালোবাসে, নইলে আর তোমারে চিঠি লিখব না...।’

লাবিব হাসতে হাসতে হাতের ব্যাগটা ফেলে দিল মাটিতে। তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা হুইস্কির বোতল। আর পায় কে? সতীমায়ের ভক্ত বেটা নিয়েই দৌড়। টাকা ও মদের বোতল হারিয়ে আক্কেলগুড়ুম! এমন তামাশার সাধুসঙ্গ জীবনে দেখেনি সে।

দুপুরে গোসল সেরে হোটেল থেকে বেরুতে গিয়ে মনে পড়লো তারানার কথা। গতরাতের শিমুলতলার কথা। তারানা এখানে তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না, ঘেঁষতে দিচ্ছে না। উল্টো বলে দিয়েছে যে, এ কয়দিন এখানে অন্তত তাকে পাবে না, হোটেলে একাই কাটাতে হচ্ছে।

মেয়ে দেখলেই যার চোখ মানুষখেকো বাঘ হয়ে যায় তার কেমন করে একা একা রাত কাটে? সে ঠিক করলো এত বড় মেলায় কাউকে বাগিয়ে নেবে। খুঁজতে লাগলো মোক্ষম সুযোগ। সন্ধ্যার পর আসর বসলো কামিনী গাছতলায়। ছেউড়িয়া তখন লোকে লোকারণ্য। কামিনী গাছতলায় বেদম ফকিরের আস্তানা। সেখানে গান গাইছিল তহুরা বেগম। বেশ ভালো গান গায়। বয়স বোঝা যায় না, মনে হয় লুকিয়ে রেখেছে কোথাও।

তহুরা, সাঁইজীর গানে বেশ ভরিয়ে তুলেছে পরিবেশ। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার দিকেই চোখ আটকে গেল লাবিবের। আর সরলো না। একেই তবে ব্যবস্থা করতে হবে। তার ধারণা বাউল নারীরা পতিতা, চাইলেই পয়সাপাতি দিয়ে ব্যবস্থা করা যায়। লোক মারফত খবর পাঠালো তহুরার কাছে, রাত বারোটার পর যেন তার সঙ্গে দেখা করে। কোথায় করবে সে কথাটাও ভালো করে জানিয়ে দেয়া হলো।

তহুরা কি গান গাইবে? পেছন দিয়ে বেরিয়ে এসে ঠিকই রাত বারোটার পর দেখা করলো লাবিবের সঙ্গে। গড়াইয়ের তীর ধরে যেখানে মানুষ খুব একটা দেখা যায় না সেখানে ওরা চলে গেলো। পেছন পেছন তহুরার স্বামী হীরা ফকির চলছে। আরও কিছুদূরে সতীমায়ের সেই ভক্ত, পিছু নিয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যরাতের নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার অপেক্ষা।

দেখা গেলো, তহুরাকে জড়িয়ে ধরে নদীর দিকে টেনে নামাতে লাগলো লাবিব। এত দ্রুততার সঙ্গে কাণ্ডটি ঘটলো যে, মুহূর্তেই ওরা হারিয়ে গেলো চোখের সামনে থেকে। তহুরা একটুও শব্দ করছিল না। পেছন থেকে তার স্বামী খুব ধীরে কাছে এসে জাপটে ধরলো লাবিবকে। দু’জনে মিলে মুখ বেঁধে ফেলল। হাত-পা বাঁধার কাজটি দিলো সতীমায়ের মাতাল ভক্তটিকে।

হীরা ফকির বলে উঠলো- ও বিষ্ণু ঠ্যাঙ দু’কানা এট্টু ভালো কইরে বাঁধ দিকিনি। শালা মেয়েছেলে দেকলেই আপন মাগি ভেবে বসে, দেকাচ্চি তোর মেয়েমানুষের মজা। বলেই লাবিবকে ওরা বেঁধে ফেললো এবং ফেলে গেলো নদীর ধারেই। জায়গাটা সুবিধের নয়, তাই লোকজনও এখানে কম আসে। লাবিব রাতভর এভাবেই পড়ে থাকে, আর দেখতে থাকে গড়াই নদীর জলের বালুচরের সঙ্গে ছেনালি।


চার

বাজার থেকে ফেরার পথে মনে হলো, যা কেনার কথা, তা ভুলে গেছে। এই কথা মনে হতেই তবারক ফকির গামছাটা ঘোমটার মতো মাথায় দিয়ে ফের বাজারের দিকেই চললো। পথে দেখা হলো বিষ্ণুর সঙ্গে, সতীমায়ের সেই মাতাল ছেলে। দেখেই বিষ্ণু বলে উঠলো- কর্তা, কর্ম কিছু দেন, কইরা খাই।

কী করবি? তোর তো সবকিছু পেটে সয় না।

না না কর্তা, এমন কিছু দেন যেইটা পেটে খাইমু, পিঠেও সইবো। নাইলে তো না খাইয়া মারা যামু। তয় কাইল একটা বিদেশি পাইয়া মন ভইরা খাইসি। সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হইয়া গেলো! এখনও ঠিক হইতে পারি নাই।

কী খেয়েছিস?

ওই যে মাইয়াডার লগে আসা হারামজাদা পোলা, অর ঝোলার ভেতর থেইকা একটা বোতল বাইর হইসিলো, ওইটা।

হুম, এইসব আর কত করবি?

বিষ্ণু হাসতে হাসতে বলে, আরও অনেক কিছু করছি।

কী?

অরে বাইন্ধা ফালাইয়া রাখছি নদীর তীরে।

কী, কখন?

রাইতে। আপনের ভক্ত হীরা ফকিরের বউরে ওর মনে ধরসিল। নিরালায় পাইতে চাইলো। তাই পাওয়াইয়া দিলাম।

তাই বলে এমন কাজ করবি? চল্ চল্ দেখি গিয়ে।

বিষ্ণু হাসি দিয়ে বলে, অয় কি এহনও আছে কর্তা? উদ্ধার হইসে। আমিই গিয়া শেষরাতে খুইলা দিসি। মনটা খারাপ লাগতেছিল। আমিও তো অর মতো ছিলাম এককালে।

তবারক ফকির এবার না হেসে পারলো না; কে বলে তুই খারাপ মানুষ? তোর ভেতর এমন একটা ভালোবাসা আছে যেটা দেখা যায় না।

কিন্তু কর্তা ওইটা আপনে দেখেন, আর কেউ দেখে না। কে দেখে না? ওই যে ময়না পাগলি। অয়তো বোঝে না আমারে।

তোর বউ আছে, ছেলেমেয়ে আছে, তুই আবার ময়নার দিকে কেন মন দিলি?

কর্তা কি কমু, ময়নাই আমার সব। অরে বিয়া করি নাই বইলাই তো আইজ এই অবস্থা! আমি হইলাম বউপোড়া পাগল, ময়না হইলো প্রেমের পাগল। ফকিরের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে এলো- আচ্ছা তুই-ই তাহলে এত বড় সর্বনাশটা করেছিলি? হারামজাদা! ময়নার জীবনটা শেষ করে দিলি!

না কর্তা, শেষ কি আমারটাও হয় নাই? আমি বুঝি। ময়নারে আমি আসলে ভোগ করতাম, তাই তার ভেতর ভালোবাসার কোনো বন্ধন খুঁজতাম না। সংসারের কথা চিন্তা কইরা বিয়া করলাম গেরস্থ ঘরে, ভালো পরিবার, মনে করলাম ময়না তো চাইলেই সব দিয়া দেয়, ওরে বিয়া করলে যদি অন্য কাউরে তা দেয়? মাইয়া মাইনষের স্বভাব, গেরস্থ ঘরের মাইয়া হইলে পরিবারটা ঠিক থাকবো।

তো এখন কী বুঝলি?

কী আর বুঝবো, সবই কপালের দোষ। আমার ভালো ঘরের বউ এখন যারতার সাথে শোয়, অর কথা শুনলেই পুরুষ মাইনষের ভিতরডা কেমন জানি কইরা উঠে। কিন্তু আমার ময়না, আইজ দশ বছর ধইরা শিমুলতলায় একা জীবন কাটায়, পুরুষ মানুষ দেখলে কুত্তার মতো তাইড়া আসে। কর্তা, ময়নারে আমি চিনতে বড় ভুল করছি, ওর মতো সতী আর কেউ নাই, ওই আমার সতী মা, আমি তারে ভক্তি করি।

পাঁচ

পাথরের একটা বাটি, জল আর ফুলের পাপড়িতে পূর্ণ। তারানা শখ করে কিনেছে মেলা থেকে। অনেক শখই তার মেটেনি। শখের বশে শখটাই করা হয়ে ওঠেনি। আজ সারাদিন ঘুরেছে সে মকবুলের সঙ্গে। মকবুল তবারক ফকিরের সঙ্গে সঙ্গ করছে মাত্র কয়েকমাস হলো। তার সঙ্গে হবিগঞ্জের মাছুলী আখড়ায় দেখা হয় প্রথমবার। জগমোহিনী গোস্বামীর সমাধিস্থলে সেবার মেলা বসেছিল। সেখানেই তাদের দেখা হয়, মকবুল সঙ্গ ছাড়েনি তারপর থেকে।

মকবুলের আছে কিছু ঔষধি কারবার, ভেষজ চিকিৎসায়ও তার হাতযশ আছে। নিজে একটা ব্যবসাও খুলেছিল কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল, এখন সারাক্ষণ ফকিরের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। মকবুল চেষ্টা করে, ভেষজ ওষুধের সীমিত ব্যবহারের। তাতে তবারক ফকিরের উপকারই হয়, সাধুসঙ্গে আসা নানান মানুষেরও। একবার মকবুলের হাতে বানানো এক ওষুধ খেয়ে দুরারোগ্য ব্যধি সেরে যায় আহাদ মাস্টারের।

আহাদ মাস্টার সম্পর্কে একটু বলে নেয়া ভালো। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিয়ে করেছেন ছয় কি সাতখানা, কিন্তু বউ মরে যায়। বাচ্চাকাচ্চাও নেই। কেমন করে দেখা হয় মকবুলের সঙ্গে। মকবুল তাকে একটি ওষুধ তৈরি করে দেয়, সেটি খেয়ে এখন তার ঘরে ফুটফুটে দুটি জমজ বাচ্চা, সুন্দরী বউ। মকবুলকে তবারক ফকির প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতো এমন আশ্চর্য ওষুধ সম্পর্কে, কিন্তু সে এড়িয়ে যায়। কিন্তু তবারক ফকিরের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মকবুলকে তিনি ঠিকই স্বীকার করতে বাধ্য করেন যে, তার ওষুধে অতিপ্রাকৃত বা আধ্যাত্মিক অনুষঙ্গ আছে, যা সে বলতে চায় না।

মকবুলের আছে তন্ত্রসাধনার দীর্ঘ ইতিহাস। সেখানে এমন কিছু সমস্যায় সে পড়েছিল, যার ফলে ফকিরের শরণাপন্ন হতে হয়। মাছুলী আখড়ায় সেবার এমনই এক দুরবস্থায় পতিত হয়ে বিপন্নবোধ করছিল সে। কেমন করে তবারক ফকিরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তবারক ফকির সিদ্ধসাধক, নির্মোহ ও নিরহঙ্কারী। তার কথা অনেকের কাছেই শুনেছিল। সে জানতো তন্ত্রসাধনার নানান উপসর্গে প্রয়োজন পড়ে সিদ্ধযোগীর, যার কাছে সারিয়ে নেওয়া যায় সাধনজীবন। তবারক ফকিরের কাছে তাই তার পড়ে থাকা।

পাথরবাটি মকবুলই তারানাকে কিনে দিয়েছিল। একটি ওষুধের প্রয়োজনে। কী অসুখ সেটা মকবুল জানে আর তারানা। তবারক ফকির জানলো কিছুক্ষণ আগেই। জেনে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে তারানার দিকে তাকিয়ে রইলো। দীর্ঘক্ষণ পর বলে উঠলো, মা’রে কেমন করে এলে তুমি, যেমন করে একটা শিলাখণ্ড আকাশ থেকে পড়ে মিলিয়ে যায় মাটিতে। আমি তোমার ভেতরে কেবল শিলাখণ্ডের কাঠিন্যই নয় তার বিগলিত রূপটিও দেখতে পেয়েছি। এখন তুমি গলে গেছো, বিগলিত বাসনার ছড়িয়ে যাওয়া শূন্যতা। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না, ভয় পেয়ো না।

আমি ভয় পাচ্ছি না বাবা, কেবল অসহায় বোধ করছি। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কী হবে? আমার তো একা হওয়ার উপায় নেই, কোথাও নীরব হয়ে বসার সুযোগও নেই। কুকুরটা জীবন খুবলে নিয়েছে, রেখেছে কেবল অস্থিচর্ম!

ফকির স্মিত হেসে বললেন, এই অস্থিচর্মেই ফের জেগে উঠবে জীবন। ময়নার দিকে দেখো, তার পাগলামির দিকে দৃষ্টিপাত করো, দেখবে সেখানে একটা জেগে ওঠার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। খুব সাধারণ চোখ দিয়ে তা দেখা যাবে না। কিছুদির পরই ময়না সেই আত্মনির্ভরতায় পৌঁছে যাবে, যেখানে সে হয়ে উঠবে সবার বিস্ময়ের বস্তু। ময়না স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, যা বলবে তা বাকসিদ্ধ হবে। ময়না তখন কথা বলবে না, কথাই ময়নাকে ধারণ করবে। তোমার মতো সুযোগ-সুবিধা তার পাওয়া হয়নি বলে তার জীবন আরও কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছিল। সেখান থেকে তার মুক্তি ঘটবেই।

আপনার কথা শুনে আমি বুঝতে পারছি আমাকে শান্ত হতে হবে। তারানা পাথরবাটিতে ভেজানো ফুলের পাপড়িতে আঙুল ডুবিয়ে গোলাকার বৃত্ত করতে করতে কথাটি বলছিল।

তোমার মন যে অসুখটি বহন করছে, তার নাম হতাশা, কিন্তু তোমার আঙুল যে আরোগ্যটিকে চিনে নিচ্ছে তার নাম বৃত্ত, ঘূর্ণায়মান বৃত্তের পুনরাবৃত্তি। তুমি জটিল যৌনরোগে আক্রান্ত কিন্তু তোমার মন যৌনতাগ্রস্ত নয়। মকবুলের ওষুধে হয়তো তোমার শরীরের রোগমুক্তি ঘটবে কিন্তু মনে তোমার আগেই সে জটিল রোগমুক্তি ঘটে গেছে। এখন কেবল হতাশাকে আঘাত করো, যা তোমার মনকে আগলে ধরে আছে।

তারানা বলে উঠলো, আমি লাবিবের কাছ থেকে মুক্তি চাই। তবেই সুখী হব।

না, এটা ভুল। লাবিব একটা উপলক্ষমাত্র। তোমার জীবনে এমন অনেক লাবিব আছে, ছিল, আসবে। লাবিবরাও সময়ের হাতে পুতুলমাত্র। ওরা নিজেরাও জানে না কী করছে, কেন করছে? লাবিব যতক্ষণ না সেই গভীর সন্তাপ ও বেদনায় পতিত হবে, ততক্ষণ তার কাছে থেকে তোমার মুক্তি নেই।

তবে আমি কেমন করে বাঁচব? তবারক ফকির তারানার উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, বাঁচার চেষ্টা কোরো না মা, কেবল অনুভব করতে শেখো যে, তুমি আছো, ছিলে, থাকবে অনন্তকাল। এটিই তোমার শক্তি। জীবন এতটা ক্ষুদ্র নয় যে, সবকিছুর হিসাব এখনই করে নিতে হবে, মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ মুক্তিলাভ করতে পারে। সে মুক্তির ভেতর বাঁচার প্রচেষ্টা থাকে না, বাঁচা-মরার জীবনকে পার হওয়ার প্রচেষ্টা থাকে।

আপনি কি তবে জন্মান্তরবাদের কথা বলছেন বাবা?

না, এ হলো রূপান্তরবাদ, সৃষ্টির বিবর্তন। তুমি যা তুমি ঠিক তা নও, তুমি অন্য কিছু, বিবর্তনের প্রতি মুহূর্তের শৃঙ্খলা তাই। মানুষ মরে ও বাঁচে, কিন্তু মুক্তিলাভ ঘটে খুব সামান্যই। যার ঘটে তার জন্য জীবন কঠিনেরে আগলে ধরা, তুমি ধরতে পারবে মা, লাবিবময় পৃথিবীতে সর্বংসহা মহাতেজি আদ্যাশক্তিরূপে।


ছয়

সকালবেলা ঘুমের ঘোরে বিষ্ণু কী যেন বলছিল! কথার ভেতর ময়নার নাম একাধিকবার শুনতে পেয়ে তার স্ত্রী পানি ঢেলে দিলো মুখে। বিষ্ণু ধড়মড় করে উঠে কিছু বুঝতে না বুঝতেই দেখে তার ছেলে হাসছে। ভেতর থেকে গলা শোনা গেল- অরে বল শিমুলতলার মাগির লগে সংসার করতে, পাগলির হাড়গোড়ের ভেতর এহনও রস আছে, খেজুর গাছের মতন কলসী বাইন্ধা রাখতে।

বিষ্ণু গাইতে লাগলো, খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন। গাইতে গাইতে ভেজা মুখে বেরিয়ে পড়লো ঘর থেকে। পেছন থেকে তার বউ গালাগাল দিতে লাগলো, ঘরে যেন ফিরে না আসে সে কথাও বললো। বিষ্ণুর মেয়ের বয়স দশ বছর, স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছে। বাবাকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বললো, মায়ের সাথে তোমার মিল খায় না বাবা, তুমি ঘরে আইসো না, তোমার কষ্ট দেখলে আমার ভালো লাগে না।

বিষ্ণু জড়িয়ে ধরে মেয়েকে বলে, তুই ওর পেটে কেমনে আইলি ক দেহি? আমিও যে তোর বাপ, সেইটাও চিন্তা করলে বুঝ পাই না। তুই স্কুলে যা, মন দিয়া পড়, মা’র কথা শুনবি না, আমার কথাও না। তুই খালি তোর মনের কথা শোন।

আমি পড়াশোনা করবো বাবা।

করবি, করবি, নিশ্চয় করবি। এমন সংসারে তোর মতো মেয়ে কেমন কইরা আইলো জানি না। যা, ইস্কুলে যা।

বিষ্ণুর মেয়েটির নাম রানু, যাওয়ার আগে তাকে বলে উঠলো, আমারে নিয়া তুমি ভাইবো না, আমি অনেক কিছু বুঝি, অনেক কিছু দেখি, ইস্কুলের আপা আমারে ভালোবাসে, বলছে আমি অনেক বড় হমু।

বিষ্ণু দূর থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়ের দিকে। কেমন ঘরে এমন মেয়ে এলো, তার হিসাব করতে না পেরে ভাবলেশহীন তাকিয়ে রয়। মেয়েটা স্কুলের পথে মিলিয়ে যেতেই পা বাড়ালো বাজারের দিকে। বাজার তার কাছে ভালো লাগে। শব্দ ও মানুষের আধিক্যে একটা নীরবতার সন্ধান পায়। এমন সে নীরবতা যা তাকে চিন্তাহীন আনন্দ দেয়। বাজারের শেষ প্রান্তে একটা মাংসের দোকানের পাশে বসে থাকে মনোয়ার পাগল। সারাদিন তার কাজ হলো বসে থেকে মাথা ডান-বাম করা। একবার ডানে একবার বামে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে কাটিয়ে দিল গোটা সাত বছর।

বিষ্ণু এখানে আসে রোজ। মনোয়ারের পাশে বসে থাকে, নীরব হয়ে। সামনে পড়ে থাকা টাকা-পয়সাগুলো গুছিয়ে দেয়, হিসাব করে। এ পর্যন্ত কুড়িয়ে সে প্রায় দশ হাজার টাকা জমিয়েছে। একটি টাকাও খরচ করেনি। রেখে দিয়েছে গোপন করে। মনোয়ারও একটিবার বলেনি তাকে টাকার কথা। যখন বিষ্ণু সতীমায়ের গান গেয়ে ওঠে তখন তার মাথা ডান-বামে না ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে দোলাতে থাকে। বিষ্ণু বুঝতে পারে যে মনোয়ার গানে আনন্দ পায়।

মনোয়ারকে কিছু খেতে দেখেনি কেউ কখনো। কিন্তু বিষ্ণু জানে যে প্রতিরাতেই ময়না এসে মনোয়ারকে খাইয়ে যায়। যখন খাওয়ায় তখনই কেবল মনোয়ার থামে, শিশুর মতো তাকিয়ে থাকে ময়নার দিকে। ময়না যেন তার মা, জগতজননী!

মাংসের দোকানে ঘুরঘুর করে বেশ কয়েকটি কুকুর। কাঁচা মাংস ও হাড় খেয়ে কোলবালিশের মতো শরীর। মনোয়ার যেখানে বসে তার পেছনে সে থাকে। মাঝে মাঝে মনোয়ার কুকুরটির সঙ্গে ঘুমায়। ময়নাকে দেখা যায় কখনো বালিশ ধরে নদীতে গোসল করিয়ে আনতে। এই কুকুর, মনোয়ার ও ময়না এক অদ্ভুত পরাবাস্তব জীবন কাটায়, যা অব্যক্ত ও অনুভব ক্ষমতার বাইরে। বিষ্ণু বুঝতে পারে কিছু কিছু। এদের সঙ্গ ছাড়ে না। ময়না যদিও তাকে দেখলেই তেড়ে আসে, তবু সে ময়নাকে প্রশ্নাতীত ভালোবাসে।

কী যেন ভাবছে সে! কুকুরটা এসে দাঁড়ায় তার সামনে। বিষ্ণুর এক পা ঘা হয়ে আছে। সেখানে জিভ দিয়ে চাটতে থাকে। সে আরাম পায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে দেখে, ময়না মনোয়ারকে খাওয়াচ্ছে। রাত অনেক। বাজারে কেউ নেই। বৃষ্টি হবে হবে করছে। বিষ্ণু ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে। হঠাৎ মনোয়ার বলে ওঠে- আজ আমার পূর্ণ হলো কাজ। আজকেই আমি চলে যাবো জামালপুর। সেখান থেকে মেঘালয়। বিষ্ণুকে দেখে রেখো মা। তাকে মেনে নাও। তোমার সাধনা একার নয়, দুইয়ের মিলন। আমি যাওয়ার সময় বালিশকে নিয়ে যাবো সঙ্গে। আজ রাতে বৃষ্টি হবে খুব। মিলনের রাত।

মনোয়ারের কথা শুনে লাফ দিয়ে ওঠে বিষ্ণু। ময়নার ভয় না করেই বিস্ময়ে বলে ওঠে, ওমা এতদিন কথা কন নাই যে! কথা যে কইতে পারেন তা তো জানতাম না! ময়না চোখ বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রয়। সে চোখে রাগ নেই, অনুরাগ মেশানো। বলে- বিষ্ণু, তুই কি এহনও আমারে চাস্?

চাইতো মা।

কী আছে আমার?

আছে, আর কেউ না থাক, তোমার সন্তান বিষ্ণু তো আছে...


সাত

চাঁদ একটু করে বাড়ছে। তার সঙ্গে মেলা। ধুলো বাড়ছে, সঙ্গে শব্দ। শব্দের ঘরে নিঃশব্দ করা সাধুরা আসছেন ধীরে ধীরে, মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গিয়ে। শিমুলগাছটির তলায় আজ পাগলি নেই, কয়েকটি কুকুর সেখানে চাঁদ পোহাচ্ছে। আস্তানায় তবারক ফকির নেই, মকবুলও নেই, তারানা বসে বসে গান শুনছে, তাড়া নেই কোনো কিছুর, ভয় নেই লাবিবের।

মরা কালিগঙ্গার যে ধারটিতে পাগল-মাস্তানরা কল্কে টানছে, যেখানে ভদ্রলোকের সমাগম নেই, সেখানে দেখা গেলো লাবিব প্রায় নগ্ন দেহে মিশে গেছে। একটা লাল গামছা কেবল লেংটির মতো। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে বালা, চোখ অচেনা। পাশে তার বসে আছে সুরুজ লেংটা। নাটকটা যে তার এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কোথা থেকে যে কী হলো বেমালুম! সুরুজ পাকা জহুরি, লাবিবকে ধরে এনেছে শ্মশান থেকে, বেহাল অবস্থা!

হীরা ফকির দূর থেকে ব্যাপারটি দেখতে পেয়ে কাছে এসে বোঝার চেষ্টা করলো। দু’দিন আগে তাকে ফেলে রেখে এসেছিল গড়াইয়ের তীরে। এরপর চেষ্টা করেও কোনো খবর পায়নি। একটা উদ্বেগ কাজ করছিল, ছেলেটার কী হলো? ঝোঁকের বশে অনেক কিছুই ঘটে, পরে অনুতাপ বাড়ে। কিন্তু এখন যা দেখছে তার কোনো ক‚লকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না সে। আরও কাছাকাছি এসে সুরুজ লেংটার ডেরায় গিয়ে বসলো। বোঝার চেষ্টা করলো, ব্যাপারটি কী?

ব্যাপারডা আর কিছু না বুঝলায়নি? কামডা যে তুমার করা হেইডা জাইনা কষ্ট পাইলাম। আইচ্চা কও তুমার বউরে হের কাছে পাডাইলা কেরে? একই দুষে তুমরা দুষি। কিন্তু একটা কাম হইসে, পোলাডার মনে বিরাট পরিবর্তন আইছে। শেষ রাইতে বিষ্ণু অরে না ছুটাইলে মইরা যাওনের দশা ছিল। বিষ্ণু অরে দড়ি খুইলা দিয়া নাকি কইসে, কামের ঘরে দড়িডা বান্ধো, তাইলে নারীরে পাইবা পুরাটা। আধামাধা খাইয়া ক্ষিদা বাড়াইয়া কী লাভ? বিষ্ণু যে এমন সেয়ানা অইলো কবে, হেইডাই তো বুজতারলাম না।

সুরুজের কথা শুনে হীরা ফকির তাজ্জব! যা ঘটেছে তার বিবরণ অবিশ্বাস্য। এমন পাঁড় মাতালের এই কর্ম চিন্তার বিষয়। তাহলে বিষ্ণু ভেতরে ভেতরে কিছু একটা হয়ে উঠছে, যা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। লাবিব তখনো অন্যমনস্ক, তার দিকে তাকিয়ে হীরা বোঝার চেষ্টা করছে, ব্যাপরটি এত তাড়াতাড়ি কেমন করে ঘটলো? এরই মধ্যে খবর এলো, ময়না পাগলি আর বিষ্ণুকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষ্ণুর মেয়ে এসে খবরটি দিয়ে গেছে। কী আশ্চর্যের কথা! শেষমেষ দু’জনই গায়েব!

তালগোল পাকিয়ে যাওয়া হিসাব মেলাতে গিয়ে হঠাৎ শোরগোলের শব্দ শোনা গেলো। সবাই গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা কী? পুলিশ বেশ কটি ছেলেকে বেঁধে রেখেছে নেশাদ্রব্য বহনের অভিযোগে। কিছু মানুষ তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, সেখানে গোপনে চলছে দর কষাকষি, পুলিশের এই দৃশ্যমান লোক দেখানো খবরদারিকে ভালো চোখে দেখছে না পাগলরা। এরই ভেতর এক পাগল চেঁচিয়ে গালাগাল শুরু করলো, হারামির দল, বুইড়াগুলানের লগে মাল খাস, পোলাপাইনরে লোক দেখাস।

আস্তানা থেকে শোরগোলের শব্দে বেরিয়ে এলো তারানা। কিছু বুঝতে না পেরে এদিক সেদিক দেখতে লাগলো। হঠাৎ চোখ পড়লো সুরুজ লেংটার আস্তানায়। সেখানে একা একটা মানুষ বসে আছে, প্রায় নগ্ন, চেনা চেনা লাগছে, আবার অচেনা। নিজের অজান্তেই কাছে গেলো, পাশে বসলো, চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো, লাবিব, এ কী অবস্থা! কোথায় আছো তুমি?

দীর্ঘ অন্যমনস্কতা ভেঙে লাবিব বলে উঠলো, তোমার কাছে, কেবল তোমারই কাছে, আর কোথাও নই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়