ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বেশি মাংস খেলে যা হয়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেশি মাংস খেলে যা হয়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : প্রত্যেক মানুষের ডায়েটে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। কেউ মাংস বেশি খায়, কেউ আবার শাকসবজি কিংবা ফলমূল।

মাংসে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা আমাদের শরীরের জন্য দরকারী- কিন্তু অত্যধিক মাংস ভোজন স্বাস্থ্যের ওপর নানাধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি সৃষ্টি করতে পারে প্রাণঘাতী ক্যানসারও। তাই মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও অত্যধিক মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এখানে অত্যধিক মাংস খাওয়ার ১১টি প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো।

* ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হয়
শক্তি যোগানোর জন্য প্রোটিন পরিচিত। তাই আপনি বিস্মিত হতে পারেন যে অত্যধিক মাংস খাওয়ার পর কেন ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হয়। এর কারণ হচ্ছে, আপনার শরীরে থাকা প্রোটিন হজম হতে সময় লাগে- তাই আপনি তাৎক্ষণিক শক্তি পান না। আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেট ভেঙে সর্বাধিক দ্রুত সহজলভ্য শক্তির উৎস গ্লুকোজে পরিণত হয়, বলেন আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র ডায়েটিশিয়ান ক্যারোলিন প্যাসেরেলো। যেহেতু আপনার মস্তিষ্ক শক্তির জন্য কেবলমাত্র গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে, তাই প্রোটিন হজম হতে সময় নেয় বলে শক্তির সরবরাহ ধীর হয়। আপনার মস্তিষ্কে এই জ্বালানি পৌঁছতে সামান্য দেরি হবে, ফলে আপনার মনোযোগ একটু কমে যাবে, বলেন প্যাসেরেলো। এটি আপনার মাংসপেশির জন্যও সত্য- এটিও গ্লুকোজ দ্বারা চালিত হয়। ফলাফল: ক্লান্তি ও কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক।

* চুল ও ত্বক খারাপ দেখাতে পারে
যদি আপনি অত্যধিক মাংস খান, তাহলে অন্যান্য গ্রুপের খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। প্রাণীজ খাবারে ভিটামিন সি পাওয়া যায় না বললেই চলে- তাই যদি আপনি কৃষিজাত খাবারের পরিবর্তে মাংস খান, তাহলে ভিটামিন সি’র ঘাটতিতে থাকবেন। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে- কোলাজেন হচ্ছে একটি প্রোটিন যা ত্বক, চুল, নখ, হাড় ও অন্যান্য অংশের স্ট্রাকচার গঠন করে। যদি আপনি ভিটামিন সি’র ঘাটতিতে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন, বলেন মেক হেলদি ইজি ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ডায়েটিশিয়ান জেনা ব্র্যাডক। তিনি যোগ করেন, ‘আপনার ত্বক রুক্ষ, অমসৃণ ও বাম্পি হতে পারে। আপনার শরীরে অস্বাভাবিক লোম গজাতে পারে।’ প্যাসেরেলোর মাংসাহারী গ্রাহকেরা মাংস খাওয়া কমিয়ে বেশি করে উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে ত্বকের প্রাণবন্ত রূপ ফিরিয়ে এনেছিল। ব্র্যাডক প্রতিদিন গাঢ় বর্ণের শাকসবজি খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন- এক বাটি পাতাকপিতে দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়েও বেশি ভিটামিন সি থাকে।

* প্রায়সময় অসুখ হতে পারে
আপনি শুধু ত্বকেই ভিটামিন সি’র ঘাটতির প্রভাব লক্ষ্য করবেন না। যদি আপনি ঠান্ডাকে পরাজিত করতে না পারেন, তাহলে আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার কথা বিবেচনা করুন। ব্র্যাডক বলেন, ‘যদি আপনি কেটো ডায়েটের ওপর থাকেন, তাহলে আপনি সম্ভবত প্রচুর ফল খাচ্ছেন না- ফল হচ্ছে ভিটামিন সি’র অন্যতম সর্বোত্তম উৎস।’ আপনি এই পুষ্টি শাকসবজি থেকেও পেতে পারেন, যেমন- ব্রকলি ও কাঁচামরিচ।

* কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
মাংসে আঁশ থাকে না, যা আপনি সাধারণত ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্য (হোল গ্রেন) থেকে পেয়ে থাকেন। কোষ্ঠকাঠিন্য ও যন্ত্রণাদায়ক বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগ হচ্ছে আঁশের ঘাটতির প্রথম লক্ষণ, বলেন ব্র্যাডক। গোটা শস্যের মতো স্বাস্থ্যকর কার্বস অথবা ফল ও শাকসবজি খেয়ে আপনার সিস্টেমকে আবারো নিয়মিত করুন। ব্র্যাডক বলেন, ‘আঁশ পাওয়ার অন্যতম সর্বোত্তম উৎস হচ্ছে ফল ও শাকসবজি, কারণ আপনি এসব খাবারে অন্যান্য বিস্ময়কর পুষ্টিও পাবেন।’

* হার্ট ঝুঁকিতে থাকতে পারে
আঁশের অন্য একটি উপকারিতা হচ্ছে, এটি আপনার শরীরকে কোলেস্টেরল শোষণ থেকে দূরে রাখতে পারে, যা আপনার হার্টকে রক্ষা করতে পারে। যদি আপনার মাংস নির্বাচন লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস হয় (বিশেষ করে গোটা শস্য ও অন্যান্য আঁশের উৎসের পরিবর্তে), তাহলে আপনার হার্টের ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ধরনের মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্যালামি, হট ডগস ও ব্যাকনের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস যে হার্টের ক্ষতি করে তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন স্যাচুরেটেড ফ্যাট সীমিত করতে পরামর্শ দিচ্ছে- মোট ক্যালরির ৫ থেকে ৬ শতাংশ অথবা ২০০০-ক্যালরি ডায়েটের মধ্যে ১৩ ক্যালরি।

* শরীরে প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে
মাংসের স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, গবেষণা অনুসারে। এছাড়া কৃষিজাত খাবারের তুলনায় মাংসে প্রদাহ-বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পেতে বিভিন্ন বর্ণের ফল ও শাকসবজি খান, কারণ বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন উপকার করে, বলেন ব্র্যাডক। পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট নিশ্চিত করতে প্রতিদিন একটি অতিরিক্ত ফল বা শাকসবজি খান। প্রতিদিন দুই বাটি (লাঞ্চে এক বাটি ও ডিনারে এক বাটি) শাকসবজি খান এবং স্ন্যাকস হিসেবে ফল খেতে পারেন।

* কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
অত্যধিক প্রোটিন কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, প্রাণীজ প্রোটিন পিউরিন নামক কম্পাউন্ডে পূর্ণ থাকে যা ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়- অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড কিডনি পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, বলেন প্যাসেরেলো। অধিকাংশ লোকের প্রোটিন ভাঙতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না- কিন্তু যদি আপনার কিডনি সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে প্রোটিন গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

* ওজন বেড়ে যেতে পারে
শরীরকে কাঙ্ক্ষিত শেপে রাখতে চাইলে প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। এটি সত্য যে শরীর মাংসপেশি পুনর্গঠনের জন্য প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু অত্যধিক প্রোটিন অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। ব্র্যাডক বলেন, ‘যদি আপনি শরীরের প্রয়োজনের বেশি প্রোটিন খান, এটি প্রোটিন হিসেবে নয়, চর্বি হিসেবে জমা হয়। এটি উপকারী নয় যদি না আপনি শরীরের চাহিদাও না বাড়ান।’

* ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়
গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৮ আউন্সেরও বেশি লাল মাংস ভোজন কোলরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে; নিয়মিত যেকোনো পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজন পাকস্থলি ও কোলরেক্টাল ক্যানসার বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে, আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ অনুসারে। এসব খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের সঙ্গে ক্যানসার সংযোগ থাকতে পারে, বলেন প্যাসেরেলো। ডায়েট থেকে গরুর মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কমিয়ে পোল্ট্রি অথবা লেগিউমের মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাওয়ার চেষ্টা করুন।

* ডিহাইড্রেটেড হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
মাংসের প্রোটিন প্রক্রিয়াকরণ থেকে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়- যদি আপনি অত্যধিক মাংসের ডায়েট অনুসরণ করেন, তাহলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করতে পারেন। প্যাসেরেলো বলেন, ‘এসব বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ দূর করতে কিডনির আরো বেশি পানি প্রয়োজন হয়। মূত্র উৎপাদন করতে আমাদেরকে বেশি করে পানি পান করতে হয়।’ যদি আপনি সচেতন না হন, এটি আপনাকে ডিহাইড্রেটেড করতে পারে- তাই হাইড্রেটেড থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন।

* জলবায়ু পরিবর্তন হয়
এমনকি আপনি আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে চিন্তিত না হলেও অন্য একটি কারণে আপনাকে মাংস খাওয়া কমাতে হবে: পরিবেশ। এক কিলোগ্রাম গরুর মাংস ফার্মিং করতে এক কিলোগ্রাম শাকসবজি উৎপাদনের তুলনায় ৫৪০ গুণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। আপনি ডায়েট থেকে মাংস কমিয়ে ফল ও শাকসবজি দ্বারা প্রতিস্থাপন করে গ্রীনহাউজ গ্যাস হ্রাসে অবদান রাখতে পারেন। এমনকি প্রাণীজ প্রোটিন ভোজন অল্প কমিয়েও আপনি বসবাসযোগ্য পরিবেশের স্থায়িত্ব বাড়াতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়