ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভয়াবহ সব অগ্ন্যুৎপাত

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয়াবহ সব অগ্ন্যুৎপাত

প্রতীকী ছবি

আহমেদ শরীফ : গুয়াতেমালায় ফুইগো আগ্নেয়গিরি থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অগ্ন্যুৎপাতের পর দ্বিতীয়বারের মতো আবারো ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। গত রোববার মধ্য আমেরিকার দেশটিতে এই অগ্নুৎপাতে মারা গেছে অন্তত ৬৫ জন। আগ্নেয়গিরির পার্শ্ববর্তী অন্তত ১০ লাখ ৭০ হাজার মানুষ এই অগ্ন্যুৎপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে হাওয়াইয়ে কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে গত মাসে শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাত এখনো চলছে। চলমান অগ্ন্যুপাতে প্রায় ১০০টির মতো ঘরবাড়ি লাভায় চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অগ্ন্যুৎপাত বড় ধরনের বিস্ফোরণের আভাস দিচ্ছে।

ইতিহাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু ভয়াবহ অগ্ন্যুপাতের ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া উত্তপ্ত লাভার নদীতে যেমন অনেক মানুষ মারা গেছে, নষ্ট হয়েছে অনেক সম্পদ। তেমনি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বের হওয়া অবারিত ধোঁয়াতেও বিষাক্ত হয়েছে নির্মল পরিবেশ। ইতিহাসের কিছু ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের কথা জানি চলুন।

* মাউন্ট তামবোরা : মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুপাতের ঘটনা ঘটে ১৮১৫ সালে। ইন্দোনেশিয়ার সামবাওয়া দ্বীপে মাউন্ট তামবোরা থেকে যে ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে, তাতে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যায়। প্রথম অগ্ন্যুপাতের পর ছয় মাস টানা এমনকি তিন বছর থেমে থেমে অগ্ন্যুপাতের ঘটনা ঘটেছে ওই আগ্নেয়গিরি থেকে। এর ফলে ৪০০ মিলিয়ন টন ধোঁয়া ও গ্যাসের মেঘ তৈরি হয়েছিল। এতে সেখানকার তাপমাত্রা কমে যায়। এর ফলে ১৮১৬ সাল পরিণত হয় ‘গ্রীষ্মবিহীন বছর’ এ। এই অগ্ন্যুৎপাত চাষাবাদে বিপর্যয় নিয়ে আসে।

* ক্রাকাতুয়া : ইন্দোনেশিয়ারই দ্বীপ জাভা ও সুমাত্রায় ১৮৮৩ সালে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত। সেই অগ্ন্যুৎপাত ১৯৪৫ সালের হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার চেয়েও ১৩ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। এতে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এই অগ্ন্যুপাতের সময় যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ হিসেবে স্বীকৃত। আগ্নেয়গিরিটি থেকে ৩০০০ মাইল দূরে থাকা মানুষও ওই বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। বিস্ফোরণে সাগরের পানিতে ১৩০ ফুট উঁচু সুনামির ঢেউ তৈরি হয়। মারা যায় সে এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষ।

* মাউন্ট ভিসুভিয়াস : ইউরোপে একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ভিসুভিয়াসে ৭৯ সালে হয়ে যায় ভয়াবহ এক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা। ইতিহাসে খুব আলোচিত এই অগ্ন্যুৎপাতে পম্পেই ও হারকিউলেনিয়াম নামের দুটি উন্নত শহর ধ্বংস হয়ে যায়। মারা যায় অন্তত ১৬ হাজার মানুষ। ১৯ শতকে ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় খননের কাজ শেষে উদ্ধার করা হয় মৃতদের কঙ্কাল। এরপর আরো ৩০ বারের মতো অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে এই আগ্নেয়গিরি থেকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরপর ভিসুভিয়াস থেকে যে অগ্ন্যুৎপাত ঘটবে, তা হবে আরো  ভয়াবহ। এতে অন্তত ৬ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

* মাউন্ট পেলি : ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মার্টিনিংকে অবস্থিত মাউন্ট পেলি আগ্নেয়গিরি থেকে ১৯০২ সালে যে অগ্ন্যুপাত হয়, তা বিশ শতকের  সবচেয়ে ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাত ছিল। এতে অন্তত ২৯ হাজার মানুষ মারা যায়।

* নেভাদো দেল রুইজ : বিশ শতকের দ্বিতীয় ভয়াবহ অগ্ন্যুপাতের ঘটনা ঘটে কলম্বিয়ার নেভাদো দেল রুইজ আগ্নেয়গিরি থেকে। ১৯৮৫ সালের ওই অগ্ন্যুৎপাত আরমেরো ট্র্যাজেডি নামে বিবেচিত। কারণ আরমেরো শহরেই মারা যায় ২০ হাজারের মতো মানুষ। এই অগ্ন্যুৎপাতে মোট মারা যায় অন্তত ২৩ হাজার মানুষ।

* লেকি : আইসল্যান্ডের লেকি আগ্নেয়গিরি থেকে ১৭৮৩ সালে ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। আট মাস ধরে যে অগ্ন্যুৎপাত হয়, তাতে ১২০ মিলিয়ন টন গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই অগ্ন্যুৎপাতে বিস্তীর্ণ ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যের অভাবে মারা যায় আইসল্যান্ডের ২০ শতাংশ মানুষ। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ভারতে খরা, জাপান ও মিশরে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরিবেশবিদরা এমনটাও বলেন যে, লেকি আগ্নেয়গিরির ওই অগ্ন্যুৎপাত কৃষি ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার কারণেই ফরাসি বিপ্লব উস্কে দিয়েছিল।

তথ্যসূত্র: র‌্যাংকার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুন ২০১৮/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়