ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ওষুধ সেবনে যত ভুল

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওষুধ সেবনে যত ভুল

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ওষুধের দোকান থেকে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ কিনতে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে না। এ ধরনের ওষুধ ‘ওভার-দ্য-কাউন্টার’ বা ‘ওটিসি’ ওষুধ হিসেবে পরিচিত। যেমন অ্যান্টাসিড, ইবুপ্রোফেন ইত্যাদি।

ওটিসি ওষুধ সবসময় নিরাপদ নয়। অনেক ওটিসি ওষুধের নিয়মিত ব্যবহার বা ওভারডোজ আপনার শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ওটিসি ওষুধ সেবনের ভুল নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* অনেক উপসর্গের ঠান্ডা ও ফ্লু’র ওষুধ
কাশির সিরাপ এবং ঠান্ডা-ফ্লু’র ওষুধ সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর হতে পারে, অনেকেই ভিন্ন মোড়কে একই উপাদান ব্যবহার করেন। কেউ কেউ ভুল করে দুই ব্র্যান্ডের একই ওষুধ কিনে ভাবে যে তারা ভিন্ন ওষুধ কিনেছেন। ফেসিয়াল প্লাস্টিক সার্জন মিশেলে ইয়াগোদা বলেন, ‘এসব ওটিসি ওষুধ যা হাঁচি বা কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, অল্প ব্যথা, জ্বর, সর্দি ও অন্যান্য উপসর্গ উপশম করে তা আপনার অজান্তে অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলতে পারেন। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, হাঁপানিকে আরো খারাপ করতে পারে এবং মূত্র জমে যেতে পারে।’ নিরাপদ থাকতে প্রোডাক্টকে তুলনা করতে সক্রিয় উপাদানের লিস্ট পড়ুন, প্রতিটি ওষুধ পৃথকভাবে নিন, উপসর্গ উপশমের জন্য সঠিক ডোজ গ্রহণ করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এড়িয়ে চলুন। প্রত্যেকটি ডোজ সতর্কতার সঙ্গে পরিমাপ করুন এবং নির্দেশিকায় সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্রহণ করবেন না, ডা. ইয়াগোদা পরামর্শ দেন।

* প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ
মাথাব্যথা অথবা মাংসপেশির ব্যথা দূর করতে ইবুপ্রোফেন ও ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ বিস্ময়করভাবে কাজ করে, কিন্তু এসব ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করা ভালো নয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত অরেঞ্জ কোস্ট মেমোরিয়াল মেডিক্যাল সেন্টারের ইন্টার্নিস্ট ক্রিস্টাইন আর্থার বলেন, ‘এসব ওষুধ ব্যথা ও প্রদাহ হ্রাসের জন্য চমৎকার হলেও তারা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ব্লিডিং ও কিডনি বিকলের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যদি অধিক ঘনঘন ব্যবহার করেন।’ কিডনির ক্ষতি হচ্ছে না এটি নিশ্চিত হতে এসব ওষুধ গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করতে চান, তাহলে পাকস্থলীর স্তরকে আলসার থেকে রক্ষার জন্য অন্য ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এসব ওষুধ এড়িয়ে যাওয়াই সর্বোত্তম, কারণ এসব ওষুধ ভরাপেটে গ্রহণ করতে হয়, ডিনারের পর দেরি করে নয়।

* অ্যাসিটামিনোফেন
এই ওষুধ ব্যথা ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে, তবে এটির ব্যবহার সীমা ছাড়িয়ে গেলে এটি ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে লিভারের জন্য। ডা. আর্থার বলেন, ‘আপনার নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন গ্রহণ করা উচিত নয়, যদি আপনার লিভারের রোগ থাকে এবং আপনি দৈনিক কতটুকু গ্রহণ করছেন তা সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’ অনেকেই ভালো ঘুমের জন্য এই ওষুধের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা হতে পারে, ডা. আর্থার বলেন। যদি আপনার ঘুমাতে সমস্যা হয়, তাহলে ডিফেনহাইড্রামিন সমৃদ্ধ ঘুমের ওষুধ সেবন করাই হবে তুলনামূলক ভালো উপায়, যা সাধারণত শরীরের অভ্যন্তরে মারাত্মক ক্ষতি সৃষ্টি করে না, বলেন ডা. আর্থার।

* ঘুমের ওষুধ
আপনি ওষুধের দোকানে যে দুটি প্রধান ঘুমের ওষুধ পাবেন তা হচ্ছে, ডিফেনহাইড্রামিন এবং ডক্সিলামিন। এরা স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহায়ক, কিন্তু সুপারিশকৃত ডোজের বেশি নয়। ডা. আর্থার বলেন, ‘যদি আপনি একটি পিল সেবনের পরও ঘুমাতে না পারেন তাহলে দুটি পিল গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এটি বুক ধড়ফড়, মাথাঘোরা, দ্রুত হৃদকম্পন ও ঘামের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।’ অন্যকথায়, দুটি পিল একটি পিলের মতো ভালোভাবে কাজ করে না। মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে, ঘুমের আরেকটি ওষুধ যা সঠিকভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, কারণ অনেক ব্র্যান্ড যে ডোজ সুপারিশ করে তা এটি সেবন শুরু করার জন্য বেশি হয়ে যায়। ডা. আর্থার বলেন, ‘যদি মেলাটোনিন দীর্ঘসময় ব্যবহার করা হয়, এটি এই হরমোনের প্রাকৃতিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নিম্ন ডোজ দিয়ে এটি শুরু করাই সবচেয়ে ভালো এবং ডোজের মাত্রা বাড়ানোর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।’

* অ্যান্টাসিড
এই ওষুধটি কিছু খাবার ভোজন জনিত বুকজ্বালা অথবা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল অস্বস্তি উপশম করার ক্ষেত্রে বিস্ময়করভাবে কাজ করে, কিন্তু এটি প্রতিদিন সেবন করা উচিত নয়, বিশেষ করে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া। ডা. আর্থার বলেন, ‘মাঝে মাঝে ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টাসিড সেবন ঠিক আছে। কিন্তু যদি প্রতিদিন ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান। কারণ, আপনার এর চেয়ে শক্তিশালী ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে, যেমন- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর। প্রতিদিন অ্যান্টাসিড প্রয়োজন হলে তা পাকস্থলীর আলসার অথবা আরো তীব্র সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।’ চুষে খাওয়ার এসব ট্যাবলেটে উচ্চ ক্যালসিয়াম কনটেন্ট থাকে, যা কিডনিতে পাথর, কোষ্ঠকাঠিন্য ও কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে, তাই ওভারডোজ যাতে না হয় সতর্ক থাকুন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়