ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

গ্রহাণু বলয় নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রহাণু বলয় নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য

অহ নওরোজ: গ্রহাণু বলয় সৌরজগতের এমন একটি অংশ যাকে সৌরজগতের সারকমসটেলার চাকতি বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। সারকমসটেলার চাকতি বলা হয় তারার চারপাশে কক্ষপথে সংঘর্ষের দ্বারা টুকরো টুকরো হয়ে গঠিত রিং-আকৃতির গ্যাসের বৃত্তাকার ক্ষেত্রকে।

সর্বকালের অন্যতম প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিস্ত্রিয়াম কস্মোগ্রাফিকাম’ (১৫৯৬)-এ যেদিন সর্বপ্রথম মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে অবস্থিত কিছু থাকার ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত এই গ্রহাণু নিয়ে বিভিন্ন মত বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে চলেছে।

সর্বপ্রথম মানুষের চোখে গ্রহাণুর অস্তিত্ব ধরা পড়ে ১৮০১ সালের জানুয়ারিতে, ইতালিয়ান যাজক, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিউসেপ পিয়াজী সর্বপ্রথম যে গ্রহাণু আবিষ্কার করেন তার নাম রাখা হয় ‘সেরেস’। এই আবিষ্কারের প্রায় পনের মাস পরে জার্মান পদার্থবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরিচ ওলবারস আবিষ্কার করেন আরেকটি গ্রহাণু, নাম ‘পালাস’। গ্রীকদের জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী ‘প্যাল্যাস’ এর নামে এই নামকরণ করা হয়। এরপর ১৮০২ সালের শেষের দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল আবিষ্কৃত নতুন এই বস্তুগুলোকে নতুন একটি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। কারণ নতুন আবিষ্কৃত এই বস্তুগুলো গ্রহ, উপগ্রহ কিংবা সৌরজগতের অন্য যেকোনো বস্তুর থেকে আলাদা। গ্রিক শব্দ ‘অ্যাস্ট্রোয়েডিস’ থেকে ক্যাটাগরির নাম রাখা হয় ‘অ্যাস্ট্রোয়েড’ যার অর্থ তারার মতো, বাংলায় গ্রহাণু। পরবর্তীতে বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝখানে পাওয়া যায় হাজারো গ্রহাণুর সন্ধান। যার সমস্তগুলোকে একসঙ্গে গ্রহাণু বলয় বলে আখ্যা দেন বিজ্ঞানীরা।

১৯৭২ সালের জুলাইয়ের ১৬ তারিখে মহাকাশযান পায়োনিয়ার ১০ সর্বপ্রথম কোনো মহাকাশযান, যা গ্রহাণুর তথ্য আবিষ্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২টি মহাকাশযান গ্রহাণু বলয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। সে সবের মধ্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এই আয়োজন।

* সংজ্ঞা : গ্রহের অণু থেকে গ্রহাণু। বেশিরভাগ গ্রহাণু মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝখানে অবস্থান নিয়ে অন্য সকল গ্রহের মতো সূর্যের চারিদিকে নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে। এই সকল গ্রহাণুকে একত্রে গ্রহাণু বলয় বলা হয়। প্রতিটি গ্রহাণুর দৈর্ঘ্য কয়েক ফিট থেকে শুরু করে হাজার মাইল পর্যন্ত। গ্রহাণু বলয়ে প্রায় লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু রয়েছে যাদের সকলের গড় ব্যাস প্রায় আধা মাইলের মতো। গ্রহাণু বলয়ে সবচেয়ে বড় গ্রহাণু হল ‘সেরাস’ যার ব্যাস ৯৪৫ মাইল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘ভেস্তা’ যার ব্যাস ৩২৬ মাইল। আবার ভরের দিক থেকে বিষয়টি অন্যরকম- ‘পালাস’ এবং ‘হাইজিয়া’ গ্রহাণু দুটির মোট গড় পুরো গ্রহাণু বলয়ের ভরের অর্ধেক। আবার সমস্ত গ্রহাণু বলয়ের মোট ভর আমাদের চাঁদের থেকেও কম। গ্রহাণু বলয়ের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ গ্রহাণু রয়েছে যারা বিভিন্ন রঙের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘য়েওস’, ‘ফ্লোরা’, ‘থেমিস’।

* অবস্থান : গ্রহাণু বলয়ের অবস্থান মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যখানে। এরা সবাই একত্রে অন্যান্য গ্রহের মতো নিজের চারিদিকে আবর্তনের পাশাপাশি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।

* গ্রহাণুর সৃষ্টি : অধিকাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করেন একটি গ্রহ কোনো কিছুর আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রহাণু সৃষ্টি হয়েছে। এবং এই গ্রহের অবস্থান ছিল বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝখানে। কেপলার যখন সৌরজগতের সকল গ্রহের পর্যায়ক্রমিক দূরত্ব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তখন মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে বিশাল শুন্য অঞ্চল দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন এবং তার গ্রন্থে বলেছিলেন আমরা এখনো পর্যন্ত মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে কিছু দেখতে না পেলেও আমি আশা করি পরিবর্তীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখানে কিছু আবিষ্কার করবেন। পরবর্তীতে সেখানে লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয়। তবে গ্রহাণুর জন্ম নিয়ে সকল হাইপোথিসিস-ই বলছে গ্রহাণুর সৃষ্টি একটি বিচূর্ণ গ্রহ থেকে।

* কি দিয়ে তৈরি গ্রহাণু? : গ্রহাণু বলয়ের বেশ অনেক গ্রহাণু সম্পূর্ণরূপে শিলার। তবে কিছু কিছু গ্রহাণু ধাতুর- যেমন লোহা বা নিকেলের মতো ধাতুর গ্রহাণু। বাকি সকল গ্রহাণু বিভিন্ন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত যার মূল উপাদান কার্বন। এছাড়া বলয়ের সীমারেখায় থাকা বেশকিছু গ্রহাণু বরফ এবং অন্য বেশকিছু কঠিন পদার্থের সৃষ্টি। তবে গ্রহাণু বলয়ের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ মূলত কার্বন সমৃদ্ধ। গ্রহাণু সমূহের মধ্যে যেগুলো শিলার তৈরি সেগুলো দেখতে কিছুটা ভি-আকৃতির আর এই শিলাগুলোর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে এগুলো আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন শিলার বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ। তবে গ্রহাণু বলয়ে কতগুলো গ্রহাণু রয়েছে এখনো পর্যন্ত তার সংখ্যা জানা যায়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা লক্ষ লক্ষ কোটি গ্রহাণু রয়েছে এই গ্রহাণু বলয়ে।

* সূর্য থেকে গ্রহাণু বলয়ের দূরত্ব : সূর্য থেকে গ্রহাণু বলয়ের অবস্থান ২.২ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট থেকে ৩.২ অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট। দূরত্বের ভিত্তিতে বলয়টিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। ২.২ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত সূর্যের কাছাকাছি যেসকল গ্রহাণুর অবস্থান তাদের গড় তাপমাত্রা -৭৩ ডিগ্রি। আর ৩.২ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত দূরে যে গ্রহাণুগুলোর অবস্থান তাদের গড় তাপমাত্রা -১০৮ ডিগ্রি।

গ্রহাণু বলয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে আরো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরো নতুন কিছু জানা যাবে গ্রহাণু নিয়ে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়