ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

ভারতকে মাটিতে নামাল শ্রীলঙ্কা

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভারতকে মাটিতে নামাল শ্রীলঙ্কা

প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত

ক্রীড়া ডেস্ক : নিজেদের শেষ ১২ ওয়ানডে ম্যাচেই হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। এ বছর ২৬ ওয়ানডেতে তাদের জয় মাত্র চারটি। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তিনবার। র‍্যাঙ্কিংয়েও আছে আট নম্বরে। অন্যদিকে র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থাকা ভারত এ বছর ২৬ ওয়ানডের ১৯টিতেই জিতেছে। সেই ভারতকেই কিনা আজ একদম মাটিতে নামাল শ্রীলঙ্কা। ধর্মশালায় প্রথম ওয়ানডেতে ভারতকে মাত্র ১১২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে।

৪ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান পেসার সুরঙ্গা লাকমাল। ৪৬ বলে ৪৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ১৭৬ বল বাকি থাকতেই দলকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দিয়েছেন উপুল থারাঙ্গা। তিন ম্যাচের সিরিজে লঙ্কানরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। শ্রীলঙ্কার টানা ১২ ম্যাচ হারের ধারাও ভাঙল।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। দলের ৭ রানেই ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেটকিপার মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দানুস্কা গুনাথিলাকা (১)। তিনে নামা লাহিরু থিরিমান্নে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে থিরিমান্নে যখন বোল্ড হলেন, শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৯। 



তবে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে দারুণ একটি বিপিএলে কাটিয়ে যাওয়া থারাঙ্গা ছিলেন অবিচল। উইকেটে থিতু হয়েই ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ১৬ রান করতে তিনি খেলেছিলেন ২৭ বল, পরের ১৯ বলে করেন ৩৩ রান! ৪৬ বলে ১০ চারে থারাঙ্গা যখন ৪৬ রান করে ফিরলেন, ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা জয়ের অর্ধেক পথ পেরিয়ে গেছে।

বাকি কাজটা সেরেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও নিরোশান ডিকভেলা। চতুর্থ উইকেটে ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এই দুজন। ডিকভেলা ২৬ ও ম্যাথুস ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচের প্রথম উইকেট নিয়েছিলেন ম্যাথুস, চার হাঁকিয়ে জয়সূচক রানও নেন তিনিই।

এর আগে ভারত যে ১১২ রান করতে পেরেছে, তার পুরো কৃতিত্ব ধোনির। অন্য ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে লড়েছেন প্রাক্তন অধিনায়ক। একটা পর্যায়ে ভারত ২৯ রানেই হারিয়েছিল ৭ উইকেট।



ভারতীয়রা নিজেদের সর্বনিম্ন ওয়ানডে রানের নতুন রেকর্ড করে কি না, তখন চলছিল সেই আলোচনা। ২০০০ সালে শারজাহতে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ৫৪ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। ধোনির কল্যাণে আজ নতুন সর্বনিম্ন রানের লজ্জাটা কোনোমতে এড়াতে পারে তারা।

নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছাড়াই ওয়ানডে সিরিজ খেলছে ভারত। ধর্মশালায় টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। সবুজ উইকেটে বোলাররা বাউন্স ও সুইং পাবেন, এই ভাবনাতেই পেরেরার এমন সিদ্ধান্ত। তার সিদ্ধান্তটা যে সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করতে বেশি সময় লাগেনি লাকমাল, ম্যাথুসদের।

ম্যাথুস নিজের প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন শিখর ধাওয়ানকে। ৬ বল খেলে ধাওয়ান মেরেছেন ডাক। পঞ্চম ওভারে লাকমালের বলে উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত শর্মাও (২)। ভারতের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ২!



অভিষিক্ত শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন দিনেশ কার্তিক। কিন্তু লাকমালের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন কার্তিক। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি! ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানের  সবচেয়ে বেশি বল খেলে শূন্য রানে আউট হওয়ার নতুন রেকর্ড এটি। ১৯৭৪ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ বল খেলে ডাক মেরেছিলেন একনাথ সোলকার।

এরপর দ্রুতই ফেরেন মনিশ পান্ডে ও আইয়ার। ভারতের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১৬! প্রথম ৫ উইকেট হারিয়ে এটিই ভারতের সবচেয়ে কম রান। সর্বশেষ ২০ রানের কমে ভারত প্রথম ৫ উইকেট হারিয়েছিল ১৯৮৩ বিশ্বকাপে। সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ভারত।

খানিক বাদে পরপর দুই ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ও ভুবনেশ্বর বিদায় নিলে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ২৯! এরপরই কুলদীপ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ধোনি। অষ্টম উইকেটে দুজন গড়েন ৪১ রানের মহামূল্যবান জুটি। তাতে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা এড়ায় ভারত। কুলদীপ ১৯ রান করে স্টাম্পড হয়ে গেলে ভাঙে জুটি।



এরপর শেষ দুই উইকেটে জাসপ্রিত বুমরাহ ও যুজবেন্দ্র চাহালের সঙ্গে ১৭ ও ২৫ রানের আরো দুটি মূল্যবান জুটি গড়ে দলের স্কোর একশ পার করেন ধোনি। শেষ উইকেট জুটির ২৫ রানই আসে ধোনির ব্যাট থেকে। ৯ বল মোকাবিলায় শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন চাহাল। ৮৭ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ রানের ইনিংসটি সাজান ধোনি।

শ্রীলঙ্কার ছয় বোলারের সবাই উইকেট পেয়েছেন। লাকমাল ১০ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন নুয়ান প্রদীপ। ম্যাথুস, পেরেরা, ধনঞ্জয়া ও পাথিরানা নেন একটি করে উইকেট। বোলারদের দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় অসাধারণ এক জয় পেল শ্রীলঙ্কা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৩৮.২ ওভারে ১১২ (রোহিত ২, ধাওয়ান ০, আইয়ার ৯, কার্তিক ০, পান্ডে ২, ধোনি ৬৫, পান্ডিয়া ১০, ভুবনেশ্বর ০, কুলদীপ ১৯, বুমরাহ ০, চাহাল ০*; লাকমাল ৪/১৩, প্রদীপ ২/৩৭, ধনঞ্জয়া ১/৭, ম্যাথুস ১/৮, পাথিরানা ১/১৬, পেরেরা ১/২৯)

শ্রীলঙ্কা: ২০.৪ ওভারে ১১৪/৩ (গুনাথিলাকা ১, থারাঙ্গা ৪৯, থিরিমান্নে ০, ম্যাথুস ২৫*, ডিকভেলা ২৬*;  বুমরাহ ১/৩২, পান্ডিয়া ১/৩৯, ভুবনেশ্বর ১/৩৯)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সুরঙ্গা লাকমাল। 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ডিসেম্বর ২০১৭/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়