রাউধার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলল মালদ্বীপের পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের মালদ্বীপের শিক্ষার্থী মৃত রাউধা আতিফের সহপাঠীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন মালদ্বীপের পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে তারা প্রথমেই রাউধার কক্ষটি পরিদর্শন করেন। এরপর তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিকেল পর্যন্ত তারা পৃথক পৃথকভাবে রাউধার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিশেষ করে মালদ্বীপের আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তারা দীর্ঘ সময় কথা বলেন। এ সময় কোনো সংবাদকর্মীকে কলেজের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মালদ্বীপ পুলিশের দুই কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও পরিদর্শক আহমদ আলী। সোমবার বিকেলে তারা ঢাকা থেকে আকাশপথে রাজশাহী আসেন। এরপর তারা সার্কিট হাউজে যান। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে তারা যান রাউধার কলেজে। বিকেলে তারা সার্কিট হাউজে ফেরেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন।
সূত্র জানায়, মালদ্বীপের পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরাই সেখানে নিয়ে যান। তবে ‘তদন্ত’ চলাকালে তাদের সঙ্গে রাজশাহী পুলিশের কাউকে থাকতে দেওয়া হয়নি। তারা একান্তে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তদন্ত করেন। রাউধার হোস্টেল কক্ষ পরিদর্শনের সময়ও তারা কোনো সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার আল আমিন হোসাইন বলেন, ‘তারা তো পথঘাট চেনেন না। তাই আমরা তাদের কলেজে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাদের কলেজে রেখে আমরা চলে এসেছি। তারা সেখানে কী করেছেন তা বলতে পারব না। তাদের অনুসন্ধানের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই।’
মালদ্বীপ পুলিশের এ কার্যক্রমকে ‘তদন্ত’ হিসেবেও দেখছে না রাজশাহী পুলিশ। নগরীর শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, মালদ্বীপ পুলিশের কার্যক্রমকে তদন্ত বললে ভুল হবে। তারা ভিনদেশ থেকে এসে এখানে তদন্ত করতে পারেন না। তারা কলেজে সে দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ‘সাহস’ দেওয়ার জন্য আসতে পারেন। তাছাড়া রাউধার পরিবারের সদস্যরাও এখনো রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। তাদের সহায়তার জন্যও তারা আসতে পারেন।
ওসি বলেন, ‘মালদ্বীপের পুলিশ কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে রাজশাহী পুলিশকে পরামর্শ দিতে পারেন। তাও সেটা মালদ্বীপ দূতাবাস লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। সরাসরি আমাদের তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তারপরেও আমরাই তাদের সহযোগিতা করছি। তারা কোনো পরামর্শ দিলে সেটা গ্রহণও করা হবে।’
গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে নিজের কক্ষে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় রাউধা আতিফের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর ৩১ মার্চ তার পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত শেষে নগরীর হেতেখাঁ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাউধা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে উঠেছিলেন তিনি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে বিখ্যাত ‘ভোগ’ সাময়িকীর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের ‘নীলনয়না’ এ মডেল। উঠতি মডেল হিসেবে রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলায় দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম তদন্ত করছেন।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তথ্য দেওয়ার মতো কিছু এখনো পাওয়া যায়নি। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন, এটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে। আমরা আত্মহত্যার কারণ খুঁজছি। পাওয়া গেলেই জানানো হবে।’
রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৪ এপ্রিল ২০১৭/তানজিমুল হক/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন