ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের ৭ উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৬ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের ৭ উপায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিডিসি) অনুসারে, প্রতি ৩৩ জন শিশুর মধ্যে একজন জন্মগত ত্রুটি (বার্থ ডিফেক্ট) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অধিকাংশ বার্থ ডিফেক্ট প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাসেই হয়ে থাকে এবং কিছু জন্মগত ত্রুটি এরপরে গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে। কিছু বার্থ ডিফেক্টের কারণ অজানা, কিন্তু অন্যান্য বার্থ ডিফেক্টের কারণ সম্পর্কে বোধগম্য হওয়া গেছে।

প্রত্যেক গর্ভবতী নারীই চায় একটি সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চা জন্ম দিতে, কিন্তু গর্ভবতী নারীর কিছু ভুলের কারণে নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি হয়ে থাকে। এখানে শিশুর বার্থ ডিফেক্ট প্রতিরোধের ৭টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা।

* ফলিক অ্যাসিডসহ মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করুন
যদি আপনি গর্ভধারণের চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার জন্য পরামর্শ হচ্ছে: প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিডসহ একটি মাল্টিভিটামিন সেবন করুন। ফলিক অ্যাসিড হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বি ভিটামিন, যা জন্মগত ত্রুটি হ্রাস করতে পারে, প্রধানত স্পিনা বিফিডা ও অ্যানেনসেফালি। সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়ার জন্য গর্ভধারণের পূর্বে পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করাই সর্বোত্তম, কিন্তু আপনি যে প্রেগন্যান্ট এটা জানার পর যত দ্রুত সম্ভব ফলিক অ্যাসিড সেবন শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।

* পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খান
আপনার অনাগত সন্তান পৃথিবীতে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আসবে এটা নিশ্চিত করা বা সম্ভাবনা বাড়ানোর অন্যতম সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, ভালো খাবার খাওয়া। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান, যেখানে ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব ভিটামিন যথাসম্ভব খাবার থেকে পাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ শরীর সাপ্লিমেন্টের চেয়ে খাবারের ভিটামিন অধিক ভালোভাবে শোষণ করে। গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্লেটে প্রচুর ফল ও শাকসবজি রাখুন এবং সেইসঙ্গে চর্বিহীন প্রোটিনও। অবশ্য প্রেগন্যান্সি নতুন ডায়েট শুরু করার সময় নয়, যদি না আপনার চিকিৎসক পরামর্শ দেন। সারকথা হচ্ছে, প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খান এবং অত্যধিক ক্যালরি এড়িয়ে চলুন- তাহলে নবজাতকের বার্থ ডিফেক্টের সম্ভাবনা কমে যাবে।

* অ্যালকোহল, তামাক ও ড্রাগ বর্জন করুন
অ্যালকোহল, তামাক ও ড্রাগের ব্যবহার প্রিটার্ম বার্থ (সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব), নবজাতকের নিম্ন ওজন, মৃত বাচ্চা প্রসব ও গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। একারণে গর্ভধারণ করার পূর্বে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ধূমপান না ছাড়া অবস্থায় যদি কেউ গর্ভবতী হয়ে যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এ অভ্যাস ত্যাগে এখনো বাচ্চাকে কিছু সুরক্ষা দেওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় মাঝেমাঝেও অ্যালকোহল সেবন করা যাবে না, এমনকি অল্প পরিমাণেও। গর্ভাবস্থায় মদপানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই এবং যেকোনো ধরনের মদপান গর্ভের বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন- মদপানের ফলে গর্ভপাত অথবা শিশুর বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

* অপ্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করবেন না
কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন হতে পারে, যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো ক্রনিক কন্ডিশন নিয়ন্ত্রণ করে এমন ওষুধ। অন্যান্য ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য সুপারিশকৃত নয়, কারণ এসব ওষুধ গর্ভের ফুলকে অতিক্রম করে এবং জন্মত্রুটি সৃষ্টি করে। অধিকাংশ ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন নিরাপদ কিনা তা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করা হয়নি। কিছু ওষুধের সঙ্গে জন্মত্রুটির সংযোগ পাওয়া গেছে, যেমন- থ্যালিডোমাইড (থ্যালোমিড) এবং আইসোট্রেটিনয়েন (অ্যাকিউট্যান)- এসব ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য ন্যাচারাল হার্ব বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে কিছু হার্ব এড়িয়ে চলতে হবে- কারণ তারা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করে অথবা প্রেগন্যান্সির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অবশ্যই ওষুধ গ্রহণ করতে হবে এমন কন্ডিশনে ওষুধ সেবন না করে থাকা যাবে না। যেকোনো ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ, প্রেসক্রিপশন ওষুধ ও হার্বাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* পারিবারিক ইতিহাস বিবেচনা করুন
ওয়েবএমডি ডটকম অনুসারে, অনেক বার্থ ডিফেক্ট হয়ে থাকে বংশগত কারণে। যদি বার্থ ডিফেক্টের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে অনাগত সন্তানের জন্মত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে জেনেটিক গঠন পর্যবেক্ষণ করা উচিত। বংশগত কারণে হওয়া সর্বাধিক কমন বার্থ ডিফেক্ট হচ্ছে হার্ট ডিসঅর্ডার, সিকেল সেল ডিজিজ ও ডাউন সিন্ড্রোম। আপনার অনাগত সন্তানের জেনেটিক রিস্ক অথবা বার্থ ডিফেক্টের ঝুঁকি নিরূপণের জন্য কোনো জেনেটিক কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হোন।

* স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখুন
স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রেগন্যান্সির সময় এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেসব নারী প্রেগন্যান্সির পূর্বে ও গর্ভাবস্থায় স্থূল থাকে, তাদের বার্থ ডিফেক্ট আছে এমন শিশু প্রসব করার সম্ভাবনা বেশি, বিশেষ করে ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ড সংক্রান্ত বার্থ ডিফেক্ট। স্বাস্থ্যসম্মত ওজনের নারী এবং স্থূল নারীদের বাচ্চার বার্থ ডিফেক্ট হওয়ার সার্বিক পার্থক্য সামান্যই, যেমন- স্বাস্থ্যসম্মত ওজনের নারীদের প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৩ জনের বার্থ ডিফেক্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং স্থূল নারীদের প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৪ জনের জন্মত্রুটির সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব নারী স্থূল তাদের অনাগত সন্তানের স্পিনা বিফিডা হওয়ার ঝুঁকি স্বাস্থ্যসম্মত ওজনের নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ। স্পিনা বিফিডা হচ্ছে একটি কন্ডিশন যেখানে ভ্রুণের স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গর্ভধারণের পূর্বে ও গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করে স্পিনা বিফিডা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যেসব নারী ওজন-সম্পর্কিত শিশুর জন্মত্রুটির ঝুঁকি কমাতে চান, তাদের গর্ভধারণের পূর্বে ডায়েট ও লাইফস্টাইল সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

* বয়স বিবেচনা করুন
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বয়স আসলেই ম্যাটার করে। ৩৫ বছরের ওপরের নারীদের শিশুর বার্থ ডিফেক্ট হওয়ার বর্ধিত ঝুঁকি রয়েছে, যা প্রধানত জেনেটিক মিউটেশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এ সম্পর্কিত সর্বাধিক কমন কন্ডিশন হচ্ছে ডাউন সিন্ড্রোম। পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন এবং তা সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, অ্যামনিওসেন্টেসিস অথবা কোরিয়োনিক ভিলাস স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়