ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

১২৮ বছরে ১৮ তথ্য

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৩০ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১২৮ বছরে ১৮ তথ্য

শাহিদুল ইসলাম : ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসকে যদি বলা হয় বিশ্বের সুন্দর ও আধুনিক নগরীগুলোর প্রতীক তবে আইফেল টাওয়ারকে বলা হয় প্যারিসের প্রতীক।

ফরাসী স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন আইফেল টাওয়ার সম্প্রতি পদার্পন করেছে ১২৮ বছরে। আইফেল টাওয়ারের এই ১২৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বিখ্যাত আমেরিকান সাময়িকী রিডার্স ডাইজেস্ট প্রকাশ করেছে আইফেল টাওয়ারের কিছু অজানা তথ্য।

১. গুস্তাভ আইফেল টাওয়ারের মূল নকশাকারী নন
আইফেল টাওয়ারের নকশা কে করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো বলবেন স্থপতি গুস্তাভ আইফেল। তবে গুস্তাভ আইফেলের নামে টাওয়ারটির নামকরণ করা হলেও মূল নকশা ছিল মরিস কেচলিন এবং এমিলি নুগেয়ার নামক দুই স্থপতির।

২. স্পেনের প্রত্যাখান
গুস্তাভ আইফেল তার টাওয়ারটি স্পেনের বার্সেলোনায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাওয়ারটি শহরের সৌন্দর্যের জন্য দৃষ্টিকটু হবে ভেবে স্পেন টাওয়ারের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।

৩. প্রস্তাব লুফে নেয় ফ্রান্স
১৯৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের ১০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য আন্তজার্তিক প্রদর্শনী স্মরণীয় করে রাখতে প্যারিস খুঁজছিল বিস্ময়কর কোনো স্মারক নির্মাণের নকশা। এর জন্য ১০০টিরও বেশি জমা পড়া নকশা থেকে আইফেল অ্যান্ড কোং এর নকশা নির্বাচন করা হয়। ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

৪. স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে আইফেলের অবদান থাকায় নকশা নির্বাচন সহায়ক হয়
১৮৭৯ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টির নকশাকারীর মৃত্যু হলে, স্থাপনাটির নকশার দায়িত্বে পান গুস্তাব আইফেল। আইফেলের নেতৃত্বে দুই বছর ধরে ফরাসি ও মার্কিন ভাস্কররা স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরি করেন।

৫. প্যারিস টাওয়ারটিকে প্রথমে গ্রহণ করেননি
বিশাল টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনাটিকে প্যারিসের সকল অধিবাসীরা প্রথমে ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই এটিকে শহরের জন্য বেহুদা এবং বিকট, দৃষ্টিকটু, উদ্ভট হবে বলে মনে করেছিলেন। এমনকি প্যারিসের ৩০০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি টাওয়ারটি নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিলের জন্য প্রকাশ্যে বিরোধীতা করেছিলেন।

৬. বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ স্থাপনা
নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে আইফেল টাওয়ার বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ স্থাপনার রেকর্ড গড়ে। ১৮৮৯ সালের ১৫ মার্চ নির্মাণ শেষ হওয়ার পর টাওয়ারের উচ্চতা দাঁড়ায় ৯৮৪ ফুট। সে সময় থেকে পরবর্তী ৪১ বছর পর্যন্ত আইফেল টাওয়ার ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা। ১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিং তৈরি হলে তার উচ্চতা দাঁড়ায় ১,০৪৬ ফুট, যা আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যায়।

৭. উচ্চতা আরো বৃদ্ধি
১৯৫৭ সালে আইফেল টাওয়ারে ৬৭ ফুট অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়, যা এর উচ্চতাকে আরো বাড়িয়েছে।

৮. ঋতুর ভিত্তিতে এর উচ্চতা পরিবর্তিত হয়
থার্মাল রড দিয়ে তৈরি করার কারণে গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়লে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা বেড়ে যায় প্রায় ৬ ইঞ্চি।

৯. টাওয়ারের রঙ পরিবর্তন
আইফেল টাওয়ার বর্তমানের নিখুঁত তামাটে রঙ নিয়ে তৈরি হয়নি। বরঞ্চ নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত আইফেল টাওয়ারের রঙ পরিবর্তন করা হয়েছে ১৮ বার। সাধারণত ৭ বছর পর পর টাওয়ারটি রঙ করা হয় যাতে অক্সিডাইজিং থেকে ধাতব টাওয়ারটি সুরক্ষিত থাকে। রঙ করতে প্রায় ৬০ টন রঙ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

১০ টাওয়ারের রঙ কখনো সবুজ করা হবে না
আইফেল টাওয়ারের রঙ ১৮ বার পরিবর্তন করা হলেও টাওয়ারটির রঙ কখনোই সবুজ করা হবে না। কেননা স্ট্যাচু অব লির্বাটির রঙ সবুজ।

১১. টাওয়ারে আইফেলের নিজের একটি গোপন কক্ষ রাখা হয়েছিল
১০০০ ফুট ওপরে টাওয়ারের তৃতীয় লেভেলে আইফেল তার নিজের জন্য একটি রুম নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এটি স্মৃতিকক্ষ হিসেবে পরিদর্শন করা যায়।

১২.  মাত্র ২০ বছরের জন্য নির্মিত হয়েছিল
যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক মেলার স্মারক উপলক্ষ্যে প্যারিস কর্তৃপক্ষ টাওয়ারটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সুতরাং নির্মাণকালীন পরিকল্পনায় টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিল ২০ বছরের জন্য। কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ফরাসি সামরিক বাহিনীর রেডিও যোগাযোগের জন্য সুউচ্চ টাওয়ারটি সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এটিকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৩.  মিত্র বাহিনীর জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আইফেল টাওয়ার মিত্র বাহিনীর জয়ে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছিল। এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। এছাড়া নাৎসি বাহিনীর বেতার সিগন্যাল প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি, ভুয়া খবর ছড়িয়ে নাৎসি বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা ইত্যাদি কাজে আইফেল টাওয়ার থেকে প্রেরিত সিগন্যাল ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।

১৪. আইফেল টাওয়ার জয়ে ব্যর্থ হিটলার
১৯৪০ সালে জার্মানরা যখন প্যারিস দখলে নেয়, তখন ফরাসিরা আইফেল টাওয়ারের লিফটের তার কেটে দিয়েছিল, যাতে জার্মান সৈন্যরা টাওয়ারের চূড়ায় পৌঁছে নাৎসি বাহিনীর পতাকা লাগাতে না পারে। জার্মান সৈন্যরা অবশ্য পদব্রজে ১,৭১০টি ধাপ পার করে পতাকা লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা বাতাসে উড়ে যায়।

লিফটের তার কেটে দেওয়ার একই কারণে হিটলার প্যারিস ভ্রমণের সময় আইফেল টাওয়ারে উঠার সৌভাগ্য তার হয়নি। বরং তাকে ভূমি থেকেই টাওয়ারটি দেখতে হয়। এজন্য ফরাসিরা মজা করে বলে- হিটলার ফ্রান্স দখল করলেও আইফেল টাওয়ার দখল করতে পারেনি।

১৫. আইফেল টাওয়ার ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন হিটলার
১৯৪৪ সালে হিটালার প্যারিসে পৌঁছে তার এক জেনারেলকে টাওয়ারটি ধংস করে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু জেনারেল হিটলারের কথা অমান্য করে টাওয়ারটি বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।

১৬. বিবাহিত আইফেল টাওয়ার
একবার বিয়ে হয়েছে আইফেল টাওয়ারের। ২০০৭ সালে আমেরিকান নারী এরিকা ল্যাব্রি আইফেল টাওয়ারকে বিয়ে করেন এবং নিজের নাম পাল্টে এরিকা আইফেল রাখেন।

১৭. ৩০টির বেশি রেপ্লিকা রয়েছে আইফেল টাওয়ারের
সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আইফেল টাওয়ারের ৩০টির বেশি রেপ্লিকা রয়েছে। অন্য কোনো স্থাপনার এত বেশি রেপ্লিকা (আসল স্থাপনার আদলে তৈরি) আছে বলে জানা যায়নি।

১৮. দুইবার আইফেল টাওয়ার বিক্রি করেছিলেন এক ব্যক্তি
ভিক্টর লাস্টিগ নামের এক ব্যক্তির অপরিচিত মানুষদের কথার জালে ফেলে ধোকা দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। তিনি দুইজন ব্যক্তির কাছে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। প্রথম ক্রেতা প্রতারিত হয়ে লজ্জায় পুলিশের কাছে যাননি। তবে দ্বিতীয় ক্রেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিক্টর গ্রেপ্তার ও সাজার মুখোমুখি হন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়