ছড়া সাহিত্য
রুদ্র দিনের ছড়া
ফারুক নওয়াজ, লুৎফর রহমান রিটন, রহীম শাহ, আনজীর লিটন, রোমেন রায়হান || রাইজিংবিডি.কম
সবুজ বনের আড়াল থেকে ডাকলো কোকিল কুহু...
পাতায় পাতায় দামাল হাওয়া বইলো মুহুর্মুহু!
কে ডেকে যায় দূরের মাঠে
হাটখোলাতে খেয়ার ঘাটে
ডাক শুনে মন আনন্দেতে নাচলো উহু-উহু!
সবকিছুতে নতুন নতুন হাতছানি দেয় পাহাড়-
কাশের বনে বাউল বাতাস কাটলো বিলির বাহার-
সাঁঝের বেলা বকের সারি
ছড়িয়ে ডানা দেয় যে পাড়ি
যায় যে ওরা আপন বাড়ি মিটিয়ে দিনের আহার।
উপচে পড়ে ঢেইরা নদীর লাগল হাওয়া পালে
হুমহুমালো লক্ষ্মীপেঁচা ভাড়ার ঘরের চালে...
জোনাকপোকা জ্বাললো আলো
ধূর্ত শেয়াল খুব চেঁচালো
সন্ধ্যাতারা চুমকুড়ি দেয় চাঁদমামাটার গালে।
সবকিছু আজ নতুন নতুন নতুন আমেজ বনে-
নতুন দিনের নতুন আভা ছড়িয়ে গেল মনে।
নতুন বছর জাগিয়ে দিলো
বৈশাখী ঝোঁক লাগিয়ে দিলো
ভাগিয়ে দিলো অতীত দিনের দুঃখ-ব্যথা-জ্বরা...
সম্ভাবনার বার্তা শোনায় নতুন বসুন্ধরা।
বৈশাখী ঝড়-
তোর কতো আক্রোশ গরিবের ’পর!
ভেঙে দিস টিনসেড আর কুঁড়েঘর!
বৈশাখী ঝড়-
নিষ্ঠুর নির্দয় যেনো বর্বর
গরিবকে কাঁদাতেই সদা তৎপর!
বৈশাখী ঝড়-
ওরে বর্বর
সাহস থাকলে আয় গুলশানে আয়
ধানমন্ডিতে আয় বসুন্ধরায়
ধনীদের বাড়িঘর ধনীদের টিকি
ছুঁতে তুই পারবি না জানি আমি
ঠিকই।
বৈশাখী ঝড়-
অভিশাপ তোকে, তুই এইবেলা
মর...!
বসন্ত শেষে ঘুম থেকে উঠে লেবুরঙা এই ভোরে
বৈশাখ তুমি পাখিদের সাথে এলে কি আমার দোরে!
তোমাকে জানাই স্বাগতম আজ
তোমার পরনে রৌদ্রের সাজ
তোমার পালকে আলোকিত আজ আমার উঠোনখানি
আজকের দিন কেমন যে হবে তুমি জানো, আমি জানি।
বৈশাখ তুমি আবার এসেছ একটি বছর পর
আমি জানি ঠিক তোমার পকেটে লুকিয়ে রেখেছ ঝড়;
যেন তা না হয় দত্যির মতো
মিষ্টিমিষ্টি হোক অবিরত
এই ঝড় দিয়ে মুছে ফেল যত মানুষের হানাহানি
স্বপ্ন রঙিন হবে আজ দিন তুমি জানো, আমি জানি।
কখনো বা তুমি আগুন-মূর্তি, কখনো শীতল থাক
এত রূপ তুমি তোমার শরীরে কীভাবে জমিয়ে রাখো?
বাজুক তোমার সুরের সানাই
প্রাণটা জুড়াক কানাই-কানাই
তুমি এলে তাই ভুলে যেতে চাই পুরনো দিনের গ্লানি
এ বছর হবে আলোকিত খুব তুমি জানো, আমি জানি।
তুমি কি পাহাড়, সাগর, নদী ও বনানীর মহারাজ
আমি যে দেখেছি তোমার মাথায় বারো সূর্যের তাজ;
শোনো বৈশাখ তোমার কাছে
আমার একটা মিনতি আছে
তুমি আসলেই যে আকাশ নাচে, সে হোক তোমার রানি
সামনের দিন শঙ্কাবিহীন তুমি জানো, আমি জানি।
বাংলা সনের এই ইতিহাস সবার জানা চাই
মহারাজা আকবরেরই আমলে তা পাই।
খাজনা আদায় করতে রাজা দিলেন নতুন জারি
ক্যামনে পেলাম বাংলার সন করব বয়ান তারই।
মক্কা থেকে মদিনাতে ছিল নবীর পথ
মানব মনে আলো দিলেন, করেছেন হিজরত।
হিজরত তাই হিজরি হলো শুরু নতুন তাল
সূর্য দেখে হিসেব করার পাল্টালো দিনকাল।
প্রচলিত হিজরি সনের সঙ্গে এ মিল রেখে
রাজ্য জ্যোতিষ পণ্ডিতজী মাত্রা দিলেন এঁকে।
ফতেহউল্লাহ সিরাজী তাঁর ছিল জানি নাম
তাঁর কারণেই আমরা সবাই বাংলার সন পেলাম।
রঙ ছড়ানো ষড়ঋতু পেলাম বাংলা সনে
বাংলা তারিখ জায়গা নিল বাঙালিদের মনে।
হিজরি চন্দ্রবর্ষটাকে সৌরবর্ষের সাথে
মিল করিয়ে ফতেহউল্লাহ হিসাব মেলান তাতে।
নয়শত তেষট্টি সালের হিজরি গোড়ায় এসে
বাংলা সনের প্রথা শুরু আমার বঙ্গদেশে।
বৈশাখ নাম কেমন করে এলো বাংলা সনে?
এমন প্রশ্ন কারো কারো থাকতে পারে মনে।
বলছি এবার, বিশাখা এক নক্ষত্রেরই নাম
সেখান থেকে বৈশাখ নাম আমরা যে পেলাম।
বাংলা একাডেমি পরে দিল যে সংস্কার
ড. শহীদুল্লাহ্ পেলেন কাজের গুরুভার।
তাঁর কথাতে একাডেমি মিটিং করে জানায়
চৈত্রমাসের অতিবর্ষ একতিরিশেই মানায়।
ফেব্রুয়ারির মতো যে তাই চৈত্র মাসের ঘরে
একটা করে দিন বেড়ে যায় চারটা বছর পরে
বৈশাখ জৈষ্ঠ্য আষাঢ় শ্রাবণ ভাদ্রের পাঁচ মাস
হিসাব মতে একতিরিশের ঘরেই তাদের বাস।
আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসের হিসাব বড় সোজা
সাতটি মাসের ঘাড়ে থাকে তিরিশ দিনের বোঝা।
বাংলা সনের মাসগুলো ঠিক ইংরেজিরই মতো
বারো মাসে ছন্দ তুলে ঘুরছে অবিরত।
বৈশাখ এলে চারুকলার সকল ছেলেপুলে
দিনরাত্রি সব একাকার নাওয়া-খাওয়া ভুলে
প্যাঁচা বানায়, সূর্য বানায়, বানায় ঘোড়া, হাতি
বৈশাখকে বরণ করায় দারূণ মাতামাতি।
পাড়ায় পাড়ায় বুটিক শপে রঙের বাড়াবাড়ি
খুশির চোটে ঢোলের গায়ে ধিমিক ধিমিক বাড়ি।
মোড়ে মোড়ে কদমা, নাড়ু, প্রাণ খুলে গান, হাসি
সত্যি আমি বৈশাখকে বড্ড ভালোবাসি।
উৎসবটার অনেক ভালো, কিন্তু আছে কিছু
জ্বালা এবং যন্ত্রণা নেয় আনন্দটার পিছু।
বৈশাখ আসার অনেক আগেই পড়ি আমি চাপে
বউয়ের দেয়া লিস্টটা দেখে চোখের পাতা কাঁপে।
লাল ও সাদার শাড়ি দুটি, ব্লাউজ ম্যাচিং করা
গয়নাগাটির লিস্টও বড়, সবই মাটির গড়া।
পেটের ভেতর প্রজাপতির ব্যস্ত উড়াউড়ি
দু’হাতে কি আট রকমের রঙিন কাচের চুড়ি?
টিপ লাগবে, এক দু’টি নয়, সেটাও কয়েক পাতা
সত্যি বলি বৈশাখ এলে ঘুরতে থাকে মাথা।
বৈশাখ আসার কী যাতনা আমি ভালোই বুঝি
বাজার থেকে বাজার ঘুরে সস্তা ইলিশ খুঁজি।
বৈশাখ এলো...বৈশাখ এলো...ঐ বৈশাখ এলো
বোকা বাঙাল পেট নামিয়ে পান্তা ইলিশ খেলো!
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৮/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন