ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুজিব ইরমের কবিতা নিয়ে কবিকণ্ঠের বর্ণিল আড্ডা

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ২৯ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুজিব ইরমের কবিতা নিয়ে কবিকণ্ঠের বর্ণিল আড্ডা

প্রবাস ডেস্ক : কবি মুজিব ইরম বাংলা কাব্যধারায় নতুন নির্মাণ কৌশলই শুধু সংযোজন করেননি, তিনি ঘরে ফেরার এক নতুন বার্তাও পাঠক সমাজকে দিতে পেরেছেন, সর্বোপরি বাংলা কাবিতায় নতুন মাত্রাযোগসহ কাব্য নির্মাণে ঈর্ষণীয় বাকবদল ঘটিয়েছেন, যার জন্য তিনি বিশিষ্ট। ‘কবি মুজিব ইরম-এর কাবিতা, আলোচনা, পাঠ ও আবৃত্তি’ অনুষ্ঠানে সুধীজনরা এ মন্তব্য করেন।

গত ২৪ জুন পূর্ব লন্ডনের শাহ কমিউনিটি সেন্টারে কবিকণ্ঠের  আয়োজনে কবি মুজিব ইরমের কবিতা নিয়ে আলোচনা, পাঠ ও আবৃত্তির একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। কবি হামিদ মোহাম্মদের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন কবি মাশুক ইবনে আনিস,  কবি ফারুক আহমেদ রনি, কবি জফির সেতু, কবি টি এম আহমেদ কায়সার, কবি মিল্টন রহমান, লেখক সারওয়ার ই আলম।

কবিতা পাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী পপি শাহনাজ, অজন্তা দেব রায়, মোস্তাফা জামান নিপুন। মুজিব ইরম রচিত পুঁথি পাঠে অংশ নেন কবি মুজিবুল হক মনি। এছাড়া সপাঠ ও কথনে অংশ নেন কবি মুজিব ইরম।

অনুষ্ঠানে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি জফির সেতু বলেন, মধ্যযুগে কবি আলাওল আরকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে যে সাহিত্যের বিকাশ সাধন করেছিলেন, এখন বিলেতে বসে কবি মুজিব ইরম একইভাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। তার ভিন্নমাত্রার এ কাজ অবশ্যই ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত।

কবি মিল্টন রহমান বলেন, মুজিব ইরম আত্ম-অনুসন্ধানের যে নতুন অন্তর্জাগতিকতা নির্মাণ করেছেন, তা দেশকাল পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। তার কবিতায়  ‘হোমসিকনেস’ স্বদেশ প্রেমকে উসকে দিতে পেরেছে।

কবি টি এম আহমেদ কায়সার আলোচনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, প্রথা ভাঙার যে তর্ক-বিতর্ক নব্বইয়ের লিটলম্যাগ  আন্দোলনে আমরা করেছি, সেই বাকবদলের সফল কবি মুজিব ইরম। কবিতার শরীর নির্মাণ কৌশল বদলে দেওয়া, অন্তর জাগতিক কাব্যস্পর্শকে পাঠকের মনে স্পন্দিত করা, নতুনভাবে বলা-সবই মুজিব ইরমকে স্বার্থক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে তার কবিতা। যাকে ‘বিদ্রোহ’ বা চ্যালেঞ্জ বলতে হবে।

 



মুজিব ইরম কবি হওয়ার জন্য ঢাকায় যান। তিনি সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, প্রচলিত ফর্মে বা ধারায় তার স্বপ্নপূরণ হবে না, তাই তিনি চ্যালেঞ্জ নেন। তিনি লিখতে শুরু করেন, নিজের মতো, নিজেকে নিয়ে অর্থাৎ তার জন্মস্থান গ্রাম নালিহুরীর হালটের কাঁদামাটি, ছায়া উজ্জ্বল বটমূল, মনুনদীর জল, আখালুকির থৈথৈ ঢেউ, সেই শৈশবস্মৃতি। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের একঝাঁক লেখকের মধ্যে বাবরিওয়ালা এক ভীষণ জেদি অথচ চুপচাপ স্বভাবের কবি মুজিব ইরমকে এভাবে চিহ্নায়িত করেন বিশিষ্ট লেখক সারওয়ার ই আলম।

কবি মাশুক ইবনে আনিস বলেন, সসমসমায়িক বা বন্ধু কবিদের মধ্যে একটি সুক্ষ্ম প্রতিযোগিতা থাকে, সেটা ভালো। কিন্তু যতটুকু জানি, বেশিরভাগ ঈর্ষাই থাকে এ প্রতিযোগিতার অন্তরালে। কবি মুজিব ইরমের কাব্যকর্ম নিয়ে হামিদ মোহাম্মদ যে ঐতিহাসিক আয়োজন করলেন, এটা বিস্ময়কর, অভিবাদনযোগ্য।

কবি ফারুক আহমেদ রনি বলেন, কোনো প্রকৃত কবিকে নিয়ে বা মুজিব ইরমকে নিয়ে এ ধরনের একক আয়োজন বিলেতে এই প্রথম। কবিকণ্ঠ ইতিহাস সৃষ্টি করলো।

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রাণ ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে পাঠ। পপি শাহনাজের হৃদয়গ্রাহী পাঠ ছিল মুগ্ধ করার মতো। হাসিনা আখতার, অজন্তা দেব রায়ের কবিতা পাঠ উপস্থিত দর্শকদের  মনোযোগ কাড়ে। মুজিব ইরমের কবিতা থেকে কবি মুজিবুল হক মনির পুঁথিপাঠ করেন। কবির জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিবরণ পাঠ করেন কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল।

সবশেষে মুজিব ইরম সপাঠে সকথনে অংশ নেন। তিনি তার প্রিয় স্মৃতিজাগানিয়া একটি কবিতা পড়ে শোনান। সকথনে বলেন, আমি অভিভুত, কবিকণ্ঠ এর হামিদ মোহাম্মদ ভাইয়ের আয়োজনে। আর আপনারা যারা এতে উপস্থিত হয়ে আমার কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন, পাঠ করেছেন এবং আমাকে ভালোবেসে অনুষ্ঠানে এসে ধৈর্য ধরে কবিতা ও আলোচনা শোনেছেন, সবাইকে আমার বিনীত ধন্যবাদ। আপনারা আমার বংশের লোক, কবিবংশের লোক; আপনাদের জয় হোক, কবিবংশের জয় হোক।

অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্রে কবি মুজিব ইরমের জীবন ও কর্ম প্রদর্শন করা হয়। তথ্য চিত্রটি নির্মাণ করেন কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি ভিডিও ধারণ করেন সাংবাদিক রোমান বক্ত চৌধুরী। অনুষ্ঠনাকে কেন্দ্র করে ‘কবিকণ্ঠ’  কুলাচার্য মুজিব ইরম সংখ্যা প্রকাশ করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়