ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিদ্যুৎ দুর্ভোগে নেত্রকোনার কৃষক

ইকবাল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদ্যুৎ দুর্ভোগে নেত্রকোনার কৃষক

নেত্রকোনা সদরের বাঘরুয়া গ্রামের বোরো ফসলের মাঠ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনা জেলায় বিদ্যুতের দৈনন্দিন চাহিদা ৫২ মেগাওয়াট হলেও সরবরাহ মাত্র ১৮ মেগাওয়াট। এতে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সেচের ওপর নির্ভরশীল কৃষক।

সরবরাহে টানাটানি থাকায় নেত্রকোনা সদরসহ জেলার ১০ উপজেলায়ই বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেনা কৃষকরা। এতে করে জেলায় বিপুল পরিমান ইরি বোরো জমি অনাবাদী ও ফসলহানীর আশংকা দেখা দিয়েছে। 

চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ অনেক কম থাকায় জেলার গ্রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের মারাত্মক লোডশেডিং চলছে। সময়মতো সেচ দিতে না পারায় পানির অভাবে শুকিয়ে ফেঁটে যাচ্ছে অনেক কৃষকের জমি। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার দশ উপজেলায় বিদ্যুতের দৈনন্দিন চাহিদা ৫২ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত। সরবরাহে ঘাটতির কারণে জেলায় এক তৃতীয়াংশ চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না। দিন-রাত সবসময়ই লোডশেডিং হচ্ছে।

জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় সাড়ে ৮ হাজার সেচযন্ত্র রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কোনটিই নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারছে না। কোনটি রাতে দু-চার ঘন্টা চললেও দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। জমিতে পানি সেচ দেওয়ার জন্য কৃষকদের রীতিমতো লাইন ধরতে হচ্ছে। আবার সময়মতো সেচ দিতে না পারায় অনেকের জমি শুকিয়ে চৌচিরও হয়ে যাচ্ছে।

 

বারহাট্টা উপজেলার চৌচির হয়ে যাওয়া বোরো ফসলের মাঠ


জানা গেছে, জেলার বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, কেন্দুয়া, দুর্গাপুরসহ সব কটি উপজেলায় চলতি ইরি বোরো মওসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এতে করে জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জমিতে পানি সেচ দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার ইরি বোরো আবাদ।

সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের ৬নং ফিডারের আওতাভূক্ত বাঘরুয়া গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, দিনে এক ঘন্টারও কম সময় বিদ্যুৎ থাকে। তাও আবার কখন বিদ্যুৎ দেওয়া হবে তা ঠিক করে জানার কেন উপায় নেই। এতে করে জমিতে পানি সেচ দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে।

সিংহের বাংলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাদল মজুমদার বলেন, ‘সেচের অভাবে আমার প্রায় ছয় একর জমির পুরোটাই শুকিয়ে গেছে।  লোডশেডিংয়ের কারণে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দেয়া সম্ভব হয় না। এলাকায় বিকল্প পানির কোন উৎসও নেই। আমাদের এলাকার আরও বহু কৃষক সেচ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। সেচের অভাবে কেউ কেউ জমিতে সারও দিতে পারছেন না।’

সদর উপজেলার দুধকুড়া গ্রামের শুক্লয় সেন এবং কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রামের সোহাগ মিয়া জানান, দিন-রাত সব সময়ই লোডশেডিং হচ্ছে। সারাদিনে দু-তিন ঘন্টাও বিদ্যুতের দেখা মিলছে না। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় কর্মচারীরা কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না। ওদিকে সেচের চাহিদা মেটাতে না পারায় সেচযন্ত্রের মালিকরাও চরম বেকায়দায় আছেন। চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারাও।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ও জামালপুরের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে। কিন্তু কেন্দ্র দু’টির জ্বালানি হিসেবে পর্যাপ্ত গ্যাস ও ফার্নেস ওয়েল সরবরাহে ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। আর এ কারণেই চাহিদামত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টির সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

 

 

রাইজিংবিডি/নেত্রকোনা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইকবাল হাসান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়