ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চরাঞ্চলের তরমুজ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চরাঞ্চলের তরমুজ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে

বিলাস দাস, পটুয়াখালী : উপযোগী মাটি, সঠিক পরিচর্যা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পটুয়াখালী জেলার কয়েকটি উপজেলায় তরমুজের ভাল ফলন হয়েছে। বিশেষ করে গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, বাউফল এবং কলাপাড়া উপজেলাতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।

চাষিরা খেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন চরাঞ্চল ও পটুয়াখালীর একাধিক উপজেলা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে।  তবে এখন খেত থেকে সম্পূর্ণভাবে তরমুজ সংগ্রহ করেনি কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবিশস্য মৌসুমে অন্যান্য রবিশস্যের পাশাপাশি পটুয়াখালী জেলার এ বছর ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন চাষিরা। এর মধ্যে কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী, ধুলাশ্বর, লতাচাপলি, কুয়াকাটা, চরচাপলি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর, চরমোন্তাজ, কাছিয়বুনিয়া, গলাচিপার আমখোলা এবং বাউফলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রতিবছরের মতো এ বছরও তরমুজের আবাদ করা হয়েছে।

তবে মার্চের প্রথম দিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তরমুজচাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তা না হলে এ বছর তরমুজ ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত বলে দাবি করেন কৃষকরা। বিপর্যয়ের পরও চাষিরা এ বছর দাম ভাল পাচ্ছেন বলে জানান আড়ত মালিকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রলার এবং ট্রাকযোগে গলাচিপা, কুয়াকাটা, কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার করে চাষিরা খেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন স্থানীয় আড়তদার এবং  মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের রাহেলা বেগম জানান, তিনি এ বছর ২ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। তিনি তিন ধাপে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তবে মার্চ মাসের বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তা না হলে আরো ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ তরমুজ তার খেত থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হতো। কিন্তু এ বছর দাম ভাল পাচ্ছেন বলে জানা তিনি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা যুগীরহাওলা গ্রামের চাষি আবু হানিফ জানান, এ বছর তিনি ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন।  এর মধ্যে বৃষ্টিতে ১ একর জমির তরমুজ বিনষ্ট হয়ে যায়। পরে ৩ একর জমির তরমুজ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে তিনি রক্ষা করতে পেরেছেন। তিনি এ পর্যন্ত ৩ ধাপে সাড়ে তিন লাখ টাকার তরমুজ সরবরাহ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তার এ বছর তরমুজ চাষ থেকে তিন লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

তিনি জানান, কৃষি অফিস যদি তাদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করত তা হলে ফলন আরো ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

উপজেলার গাব্বুনিয়া গ্রামের দুদা মুন্সি জানান, তার ছোট ভাই ইমাম মুন্সি এবং তিনি মিলে  ৯ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছন। এতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তারা দুই ভাই এ পর্যন্ত স্থানীয় আড়তদারের কাছে ৪ ধাপে অন্তত ১২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।

চালিতা বুনিয়ার নাসির সিকাদর জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর তার খেতে ফলন ভাল হয়েছে। তিনি এ বছর আমি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করে এ পর্যন্ত ২ ধাপে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি তরমুজ বিক্রি করেছি।

পটুয়াখালী জেলা শহরের আড়ত মালিক মো. খায়রুল হাসান জানান জানান, এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজচাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর কৃষক দাম ভাল পাচ্ছেন।


রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/১৭ এপ্রিল ২০১৭/বিলাস দাস/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়