ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তীব্র শীত-ঘন কুয়াশায় হুমকির মুখে বোরো আবাদ

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তীব্র শীত-ঘন কুয়াশায় হুমকির মুখে বোরো আবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানের বীজতলা। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে যশোর জেলার বোরো আবাদ ।

শৈত্যপ্রবাহ প্রলম্বিত হলে এ অঞ্চলের শতভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ।  এমন হলে বোরো চাষে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

চলতি জানুয়ারির ৪ তারিখ  থেকে যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে টানা শৈত্যপ্রবাহ। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমে আসে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই সাথে প্রকৃতি ঢেকে যাচ্ছে ঘন কুয়াশায়।  শীত-কুয়াশার এই বিপদসঙ্কুল সময়ে মাঠে মাঠে প্রস্তুতি চলছে বোরো আবাদের। বিস্তীর্ণ মাঠে রয়েছে বোরোর বীজতলা। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা সহ্য করতে পারেনি বীজতলায় থাকা এসব ধানের চারা। বেশিরভাগ স্থানেই তা নষ্ট হয়ে গেছে । যেগুলো ভালো আছে তা নিয়েও চিন্তায় কৃষক।

এ অঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, বিগত আমন মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তারা লাভের মুখ দেখতে পারেননি। বোরো আবাদ করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাই তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। গতবছরের চেয়ে বেশি দামে ধান বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করেন তারা। কিন্তু তাপমাত্রার এ বিরুপ প্রভাবে ধান চাষ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফা চারা তৈরি করা নিয়েও শঙ্কিত চাষিরা।

যশোর জেলার সদর উপজেলার বীর নারায়নপুরের চাষি জামাল হোসেন জানান, তিনি ৫ বিঘা জমির জন্য বীজতলা তৈরি করেন। যশোর বিএডিসি থেকে গত বছরের চেয়ে (১০ কেজির বস্তা) ১০০ টাকা বেশি দিয়ে ধান বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করেছেন। গত কয়েকদিনের তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা সাদা হয়ে গেছে। কোল্ড ইনজুরির কারণে ধানের চারা গজাচ্ছে না।

জামাল হোসেন বলেন, ‘শীত বিলম্বিত হলে বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।’

একই কথা জানান, ইছালী এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন।  তিনি বলেন, ‘বোরো চাষের জন্য কৃষকরা আমন ও বোরো মৌসুমে নিজস্ব উদ্যোগে ধানের বীজ সংগ্রহ করে আসলেও বিগত কয়েক বছর ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সম্ভব হয়নি। আমন ও  বোরো মৌসুমে কয়েক দফা টানা বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধান বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় বিএডিসি ও বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে ধানের বীজ কিনে বীজতলা দেওয়া হয়েছে। অথচ সেই বীজতলা এখন তীব্র শীতের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বীজতলা নষ্ট হলে কৃষককে দ্বিতীয় দফা বীজতলা তৈরি করে বোরো আবাদ করা ঝুঁকি হয়ে যাবে।’

কৃষক রফিউদ্দীন বলেন, ‘এমনিতে ধান আবাদে তেমন কোন লাভ নেই। তারপর যদি বীজতলা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আর উপায় থাকবেনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জেলায় এবছর ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ধান আবাদকে টার্গেট করে কৃষক ইতিমধ্যে ৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় ধান রোপণের কাজও শুরু করেছেন কৃষক। তবে সাম্প্রতিক যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈতপ্রবাহে কিছু কিছু বীজতলা নষ্ট হলেও অধিকাংশ এলাকার কৃষক কোল্ড ইনজুরি  থেকে রক্ষা পেতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।’

তিনি বীজতলাকে কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করতে কৃষককে জমিতে সেচ ও পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেন । তিনি বলেন, ‘দু’একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়লে কৃষকের চিন্তা থাকবে না।’

 

 

রাইজিংবিডি/যশোর/১৬ জানুয়ারি ২০১৮/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়