ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দিল্লিকা লাড্ডু || তাপস রায়

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দিল্লিকা লাড্ডু || তাপস রায়

বিখ্যাত মনীষী ফ্রয়েডের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল শতকরা কত জন মেয়ে বিয়ে করতে চায়? ফ্রয়েড বলেছিলেন, শতকরা নিরানব্বই জন।

 

প্রশ্নকর্তা পুনরায় যখন জানতে চাইলেন বাকি একজন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ফ্রয়েড তখন মুচকি হেসে বলেছিলেন, সে তো মিথ্যা কথা বলে।

 

এই একটি মিথ্যা কথা বলতেই বাঙালি নারীদের নাকি বুক ফেটে যায় তবুও মুখ ফুটতে চায না। বিবাহিত পুরুষদের অবস্থা আরও করুণ। তাদের কিডনি ফেটে যাওয়ার উপক্রম তবুও কণ্ঠ ফোটে না। আর কণ্ঠ ফুটলেই কি? সে তো ওই বিয়ের দিন পর্যন্ত। তারপর থেকে স্বামী বেচারা বলার সুযোগ পেলে তো! কারণ কে না জানে-বিয়ের পর স্ত্রীদের কণ্ঠ সব সময় টগবগ করে ফুটতেই থাকে।

 

একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপার পরিষ্কার বোঝা যাবে। এক ভদ্রলোক শখ করে বাজার থেকে একটা তোতা পাখি কিনে আনলেন। কিছুদিন পর প্রতিবেশী একজন তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই, এটা কি কথা বলতে পারে?’

ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, ‘আমি জানি না। আমার স্ত্রী পাখিটাকে এখনও সে সুযোগ দেয়নি।’

 

জ্ঞানীজন বলেন, বিবাহিত পুরুষদের মাথা হচ্ছে দরজার হাতলের মতো, সব স্ত্রীরাই নাকি ওটা ঘোড়াতে ভালোবাসেন। সবকিছুতেই তখন স্ত্রীদের পুরোপুরি অধিকার জন্মে যায়। বিয়ের পর আপনি যদি হন সংসারের রাষ্ট্রপতি তাহলে জেনে রাখুন, পারিবারিক সংসদে তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিলই পাস হবে না! এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি যদি তাকে অর্থমন্ত্রী বানিয়ে দেন তবুও নিস্তার নেই। তখন সে উল্টো সুযোগ পেলেই আপনার সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো আচরণ করবে। এ কারণেই হয়ত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- বিবাহ কিংবা কৌমার্য পুরুষের পক্ষে কোনটি শ্রেয়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘সে যে পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন পরিণামে তাকে পস্তাতেই হবে।’

অবস্থা অনেকটা সেই দিল্লিকা লাড্ডুর মতো। খেলেও পস্তাতে হবে, না খেলেও পস্তাতে হবে। সেক্ষেত্রে খেয়ে পস্তানোই ভালো। বিজ্ঞ পাঠক কী বলেন?

 

একবার বিয়ে করা কর্তব্য। দ্বিতীয়বার বিয়ে করাটা ভুল। আর তৃতীয়বার বিয়ে করাটা হচ্ছে পাগলামি। তারপরও অনেকেই কিন্তু এরকম পাগলামি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথাই বলি। দুদিন আগেও তাকে ‘পাগল’ বলার লোকের অভাব ছিল না। আমি হলফ করে বলতে পারি এখনও ঘাপটি মেরে এই তালিকায় অনেকে আছেন। এর কারণ কী এই নয় যে, তিনিও তিনটি বিয়ে করেছেন! অথচ পুরুষদের একাধিক বিয়ে করা চলবে না- এ কথা তো উন্নত বিশ্বের কাছ থেকেই আমরা শুনেছি। একবার  হলো কি, ‘পুরুষদের একাধিক বিয়ে চলবে না’- এই স্লোগানের পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহে বেরিয়েছেন একদল মহিলা সমাজকর্মী। এক বিখ্যাত ব্যক্তির কাছে স্বাক্ষর নিতে এসে দলনেত্রী জানতে চাইলেন, ‘আপনি নিশ্চই পুরুষদের একাধিক বিয়ে পছন্দ করেন না?’ স্বাক্ষর দিতে দিতে বিখ্যাত লোকটি বললেন, ‘অবশ্যই, নইলে কি আর স্বাক্ষর দিতাম!’

‘কেন পছন্দ করেন না বলবেন কি?’ দলনেত্রী বললেন, ‘আপনার মন্তব্যটা আমরা কোটেশন হিসাবে ব্যবহার করব।’ এবার বিখ্যাত লোকটি গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘দ্বিতীয় বিবাহ উচিত নয় কারণ কোনো লোকই একসঙ্গে দু’জন প্রভুর সেবা করতে পারে না।’

 

রম্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিয়েকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন বিয়েটা হচ্ছে পারস্পরিক বন্ধন। যেখানে একজন শ্রোতা অন্যজন বক্তা। এক্ষেত্রে শ্রোতা যদি বধির হয় তাহলেও সমস্যা নেই। কেননা একজন বধির স্বামী এবং একজন অন্ধ স্ত্রীই হচ্ছেন আদর্শ সুখী দম্পতি। স্ত্রীরা যা বলেন তা স্বামীদের এ কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে মুহূর্তেই বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে স্বামীরা যা বলেন তা স্ত্রীদের দুই কান দিয়ে ঢুকে তৎক্ষণাত মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এ কারণেই হয়ত বিয়ের পর পুরুষরা হয়ে ওঠে নরম নদী, নারীরা জ্বলন্ত কাঠ। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল। গল্পটি এরকম-

 

ছেলে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে রাজি হয়েছে শুনে খুশি হয়ে মা ছেলেকে আশীর্বাদ জানিয়ে চিঠি লিখলেন, ‘সুগৃহিণী ঈশ্বরের দান বলে জেনো। সে তোমার সব মন্দ দূর করে তোমার জীবন কল্যাণে ভরিয়ে দেবে। এবং আমি খুব খুশি হয়েছি।’ চিঠি পেয়ে ছেলে দেখলো যে চিঠির শেষে পুরুষালি হাতের লেখা দু’লাইন যোগ করা। সেখানে লেখা ‘তোমার মা এখন ডাক টিকিটি আনতে গেছে। পারলে সারাজীবন একলা থাকার চেষ্টা করো। ড্যামফুল কোথাকার।’

 

লেখাটি যে তার বাবার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ রইলো না ছেলেটির। এবং ঠিক তখনই তার মনে পড়ে গেল ছেলেবেলার সেই ঘটনার কথা। বাবার হাত ধরে একবার সে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিল। সব জায়গা ঘুরে গাধার খাঁচার সামনে আসতেই সে কৌতূহল নিয়ে বাবার কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘বাবা, ওটা কি?’

‘ওটা গাধার বাচ্চা’-বাবা তাকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। বাবার মুখে একথা শুনে সে সবিস্ময়ে বলেছিল, ‘গাধারাও বিয়ে করে!’

বাবা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ বাবা, গাধারাই বিয়ে করে।’

 

ছেলেটির মনে পড়ে গেল বাবার সেই নরম নদীর মতো অথচ বিধ্বস্ত চেহারার কথা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ নভেম্বর ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়