ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নিরাপত্তাহীনতায় নুরু গাজীর পরিবার

সাফিউল ইসলাম সাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপত্তাহীনতায় নুরু গাজীর পরিবার

নিজের ঘরের সামনে অসহায় দাড়িয়ে নিহত খোদেজা বেগমের স্বামী নুরু গাজী

সাফিউল ইসলাম সাকিব, সাভার : নুরু গাজী (৬০)। দীর্ঘ ১৩ বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে অকালে হারানো স্ত্রী হত্যার বিচার পেয়েছেন। কিন্তু নিজ বাড়িতেই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নুরু গাজী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

কেননা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক ও অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বজনরা।

২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার ঝাউচর গ্রামে নিজ পারিবারিক রাস্তায় নুরু গাজীর স্ত্রী খোদেজা বেগম ট্রাক চাপায় নিহত হয়। এ ঘটনায় গত সোমবার ঢাকার একটি আদালত অভিযুক্ত মিরুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর সারাদেশে ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।

এদিকে নুরু গাজীর পরিবার অভিযোগ করেন, রায়ের পর থেকে ট্রাক চালক মিরুর আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা তাদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি ঘটনার বর্ণনা যেন আর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয় সেজন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার নুরু গাজী বলেন, ‘রায় ঘোষণার পরেই মিরু আমাকে বাঁচতে দিবেন না বলে আদালতে থেকেই হুমকি দেন। এখন সেটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক ও মিরুর আত্মীয় স্বজনরা। তারা আমার বাড়ির চতুর্দিকে পাহারা বসাইছে। যেন আমি বাড়ি থেকে বের হতে না পারি। আবার আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা সাংবাদিকদেরকেও তারা বাধা দিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা। মিরুর আত্মীয় স্বজন এবং অচেনা মানুষরা একেক সময় বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে আর প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’

 

ট্র্রাক চাপায় নিহত খোদেজা বেগমের ছবি হাতে তার ছেলে বিল্লাল হোসেন


নুরু গাজীর ছেলে বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘১৩ বছর ধরে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন ছিল। এই সময়ের মধ্যে মিরু জামিনে এলাকায় ছিলেন। প্রায় সময়ই সে মদ্যপ অবস্থায় এসে আমাদের ওপর অত্যাচার চালাতেন। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বারবার হুমকি দিয়েছেন। এখন রায় ঘোষণার পর মিরুর আত্মীয় স্বজন আমাদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে। জিম্মি করে ফেলেছে আমাদের। আমরা এখন হরিণের মত বাঘের রাজ্যে বাস করছি।’

নুরু গাজীর প্রতিবেশী সলিম মিয়া বলেন, ‘এটি একটি হত্যাকাণ্ড হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় পরিণত করতে অনেক চেষ্টা করেছে ট্রাক চালক মিরু হোসেন। এখনো সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তার আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয় শ্রমিকরা। নুরু গাজীর পরিবারটি সত্যিই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’

খোদেজা বেগমের স্বামী নুরু গাজীকে বুধবার রাতে একটি টক শো অনুষ্ঠানে নিতে তার বাড়িতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেন এটিএন নিউজ গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গণমাধ্যম কর্মী আসার খবর পেয়েই নুরু গাজীর বাড়ি ঘেরাও করে ট্রাক চালক মিরুর আত্মীয় স্বজন ও মিরুর সহকর্মী ট্রাক চালক শ্রমিকরা।

টকশো অনুষ্ঠানে নুরু গাজীকে না যেতে দেওয়ার পাশাপাশি ওই টেলিভিশনের গাড়িটি ভাঙচুরেরও চেষ্টা চালানো হয়। পরে সেখান থেকে মিরু গাজীকে ছাড়াই ফিরে যায় টেলিভিশন চ্যানেলের পাঠানো গাড়ি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই চ্যানেলটির সাভার প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কামরুজ্জামান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে পরিবারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম দস্তগীর বলেন, মামলার বাদী নুরু গাজীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় পুলিশের সজাগ হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আদালতের কি করণীয় আছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভয় দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাক চালক মিরুর ভাই রিপন হোসেন বলেন, এই ঘটনায় চক্রান্ত করে মিরুকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে নুরু গাজী। এজন্য তার ওপর এলাকার পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত। গণমাধ্যমের ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা খালি এক পক্ষের কথা টিভিতে প্রচার করে। এজন্য এলাকার মানুষ সাংবাদিকদের ওপরও ক্ষিপ্ত হয়েছে।

 

  

রাইজিংবিডি/ সাভার/ ২ মার্চ ২০১৭/ সাফিউল ইসলাম সাকিব/রুহুল 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়