ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ছোটগল্প: লাশের যোগবিয়োগ

মাহবুব আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ৬ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটগল্প: লাশের যোগবিয়োগ

|| মাহবুব আলী ||

শেখ রহিম বারান্দার এককোণায় বসে থাকেন। গদি-আঁটা চেয়ার। আয়েশ করে বসেন। রাস্তার পাশে বাড়ি। অগ্নিকোণ-মুখি বারান্দা। সারাদিন বাস-রিকশা-অটো কত যানবাহন চলছে। তিনি কখনো মনোযোগে কখনো আনমনে দেখেন। লোকজনের যাওয়া-আসা আর তাদের চেহারা দেখেন। মানুষের মুখ ভারি অদ্ভুত। একজনের সঙ্গে অন্যজনের কোনো মিল নেই। কারও চেহারা অচেনা-অজানা। কাউকে দেখায় একরকম; আসলে সে অন্য। তিনি কেমন? তার চেহারায় কী আসল ভাব ফুটে ওঠে? তিনি জানেন কিংবা জানেন না। তিনি শুধু চেয়ারে বসে মানুষ দেখেন। হয়তো কারও চেহারা দেখেন না। কেননা এখন তিনি মাঝে মধ্যে নিজের চেহারা নিজের মধ্যে দেখতে পান।

কেউ কেউ তাকে দেখে। তার চেহারায় কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। তিনি নির্বিকার ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে থাকেন। নাকি পেছনে ফিরে তাকান? দিনে দিনে অনেকদিন পেরিয়ে গেল। এখন শুধু অপেক্ষা। অপেক্ষা লাশ হওয়ার। একদিন তিনি লাশ হবেন। তারপর... তখন হয়তো তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, যাদের নিয়ে তিনি ব্যবসা করেছেন। রাজনীতির কৌটিল্য চাল চেলেছেন। তারা তার সঙ্গে কী করবে? চিমটি কাটবে? কামড়াবে? তখন তার কোনো শরীর থাকলে তো! তিনি নিশ্চিত কেউ কামড়াতে পারবে না। কেননা তিনি সেখানেও দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করবেন। যারা ইহকালে দাপট দেখাতে পারে, পরকালেও দক্ষ আর ডাকসাইটে। এটিই পুণ্য...এটিই কাজ...এটিই সফলতা। তিনি একজন সফল মানুষ।

আজ তার মন কেন জানি বিক্ষিপ্ত-বিচলিত। পরশুদিন সেই লোকের সঙ্গে সরাসরি দৃষ্টি সংযোগ ঘটে গেছে। সেই চোখে কী ছিল, তিনি ভাষা বুঝতে পারেন নাই। কিংবা বুঝতে পেরে আত্মর্ভৎসনা দেখা দিয়েছে। বিবেক বেলুনের মতো ফুলেফেঁপে জেগে উঠতে চাইছে। যে তিনি চিরকাল আত্মশ্লাঘার প্রসাদ গুনেছেন, তখন প্রশ্ন জেগে ওঠে; তিনি কী করেছেন এ জীবনে?

এখন এই লোককে প্রায়শ দেখেন। প্রায় প্রতিদিন সকালে সামনে দিয়ে অল্প বয়সে ন্যুব্জ বৃদ্ধের মতো হেঁটে চলে যায়। দু-এক বছর থেকে দেখছেন। সে লোক কোনোদিন মাথা উঁচু করে এ বারান্দার দিকে তাকায়নি। তিনিও তেমন করে তাকে দেখেননি। কত লোক হাঁটছে। তার দুচোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। কেউ শহরে আসছে। কেউ শহর ছেড়ে বাইরে যাচ্ছে। কে কার খোঁজ রাখে? আঠারো কোটি জনসংখ্যার দেশে গিজগিজ মানুষ। পোকার মতো কিলবিল করে। কে কোথায় হাসছে, কে কোথায় কাঁদছে; কে তার খবর রাখে? তিনি কারও কোনো খবর রাখেন না। কোনোদিন রাখেননি। যতদিন রেখেছিলেন পেছনে অন্যকোনো কারণ ছিল। সেটি রাজনীতি হতে পারে। হতে পারে মানসম্মান চরম স্বার্থ কিংবা...। রাজনীতি হলো স্বার্থ উদ্ধারের কৌশল মাত্র। তিনি কৌশলী মানুষ। তাই শহরের মধ্যখানে চমৎকার জেঁকে বসেছেন। তিল তিল শ্রম আর অধ্যবসায়ে বসতে পেরেছেন। সাদ্দাতের বেহেস্তের মতো রত্নপাথরের কারুকাজে প্রাসাদ সাজিয়েছেন। তার বিশাল বাড়ি এক প্রাসাদ ছাড়া কী?

সামনে বাসস্ট্যান্ড। পঁচিশ মিনিট পর পর বাস যাত্রা করে। কত মিনিট গ্যাপে আসে তার ঠিক নেই। তারপর চোখের সামনে কাহারোল সেতাবগঞ্জের বাস আচমকা হুমড়ি খেয়ে থামে। সে বাসগুলো লোক নামায়, লোক ওঠায়; কন্ডাক্টর হেল্পারের হাঁকের মধ্য দিয়ে আবার ছুটে চলে যায়। ফেলে রেখে যায় ডিজেল পোড়া একরাশ কালো ধোঁয়া। শেখ রহিম ভাবেন। পৃথিবী বাসস্ট্যান্ডের মতো। তিনি এক বাস। তার মাথার মধ্যে মনকির-নাকিরের মতো কন্ডাক্টর-হেল্পার আছে। তিনি তার বাসের নিজেই ড্রাইভার। তিনি বাস হয়ে কেমন চলেছেন কিংবা চলছেন? আর কত দূর চলবেন? ফিটনেস কেমন? বুঝতে পারছেন সময় শেষ হয়ে আসছে। ইঞ্জিন কিছুদিন পর রিজেক্ট হয়ে যাবে। তখন একমুঠো ধোঁয়া ফেলে রেখে চলে যাবেন। সে ধোঁয়া ধূসর-সাদা নাকি ডিজেল পোড়া গাঢ় কালো? মানুষের কতটুকু যন্ত্রণা জাগাবে? যতটুকু হোক সব তার স্মরণের শোকসভায় স্তুতিপাঠ আর মজাদার প্যাকেটে বাতাসে মিলিয়ে যাবে।

সেই লোকের চেহারা আবার দুচোখে ভেসে ওঠে। ভেসে উঠবার দরকার কি? কিছুক্ষণ পর তো তার চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যাবে। তিনি তাকে চেনেন। হয়তো একটু একটু মনে করতে পারেন। তখন যেমন দেখেছেন লোকটি তারচেয়ে অনেক বুড়ো হয়ে গেছে। এ লোকের সঙ্গে লাশের এক গল্প আছে। রাজনীতির খেলা আছে। রাজনীতি মানেই তো লাশ। কেউ লাশ না হলে অন্যেরা ভালোভাবে খেতে-পরতে-আরাম করতে পারবে কেন? কীভাবে পথ বের করতে পারবে? তিনি পথ খুঁজে রাজনীতি করেছেন কিংবা রাজনীতির কৌশলে পথ পেয়েছেন। লাশের রাজনীতি নিয়ে লাশ লাশ খেলেছেন। এ খেলা বেশ মজার। তিনি এ খেলায় পরিপক্ব। বিষয়টি তেমন নেতিবাচক হিসেবে না দেখে বলা দরকার তিনি সময়-সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে কৌশলের সমন্বয় এবং প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এতে কাঁধের উপর কোন্ অশরীরি সত্তা বসে বসে হিসাব লিখছে নাকি গালমন্দ করছে, দেখার বা শোনার কী আছে?

তিনি নিজেকে প্রবোধ দেন। সকাল সাড়ে নয় বেজে আসছে। লোকটি হয়তো এখনই মুখের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যাবে। তার দুচোখ সেই লাশের চোখের মতো। রাইফেলের গুলিতে অনেক রক্ত ঝরে ঝরে রক্তশূন্য। পাঁশুটে হলুদ। পাণ্ডুর বিষণ্ন। শঠতার এই সময়ে প্রতারিত মানুষের ক্লান্তির মতো। কখনো কখনো তিনি ভুল করে বসেন। আসলে লোকটি জীবিত নাকি সেই লাশ যাকে তিনি দেখেছেন আর...। আহ্ আজ আবার সেই কথা কেন? সে ঘটনা তো শেষ হয়ে গেছে। সেই লাশ ভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়াচ্ছে। তার কোনো ক্ষমতা নেই মানুষের পৃথিবীতে আসে। অবশ্য এটি এখন মানুষের কি না কে জানে। শুধু কি একটি লাশ নাকি আর একটি, আরও একটি, আরও আরও...? তিনি হিসাব মেলাতে পারেন না। হিসাব করেই বা কী?

যখন এসআই স্বপন কুমার ভরদুপুরে আপত্তির গুঞ্জন সত্ত্বেও মেয়েটির লাশ পরখ করে, একে একে খুলে ফেলে পরনের কাপড়; প্রায় ফেলেছিল আর জনতার কেউ কেউ মজা পেতে থাকে। মেয়েমানুষের লাশ...যার দেখার মতো সবকিছু ভেতরে। বেআব্রু করার মজাও আলাদা। সেটি লাশ কিংবা জীবিত মানুষ। লোকগুলো বিড়বিড় করে। এই মেয়েটি পাশবিক নির্যাতনের শিকার। তিনি জানেন, এই অপরিপক্ব মৃত শরীর শহরের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। সাংবাদিকেরা ছবি তোলে। নানা এ্যঙ্গেল থেকে ক্লিক ক্লিক। বিশাল আট কলাম খবর তৈরি হয়। খবর নিয়ে দামদর চলে। আগুন চেপে রাখতে হবে। আগুনের মূল্য বেশি। তিনি সব দেখেছেন। হিসাব করে বুঝেছেন। আর সত্যি সত্যি আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। কেননা তা না হলে রাজনীতির পাশা খেলা কী করে হবে? কোনো কোনো মৃত্যু দিয়েই তো দুর্যোধনের চাল চালতে হয়। সেখানে শকুনি থাকে। থাকে প্রমুখ সভাসদ। পরামর্শ দাতা। উপরের নির্দেশ।

তাকে কোনো সলতেয় আগুন জ্বালাতে হয়নি। যারা জ্বালাবার, সময়মতো ঠিক কাজ করেছে। জ্বালিয়ে দিয়েছে আগুন। মল্লিকপুরের শুকনো মাঠ মানুষের রুদ্ররোষে ঘেমে ভিজে গিয়েছে। জ্বলে উঠেছে দাউদাউ আগুন। তারপর শহরের রাস্তায় মোড়ে মোড়ে পাখি মারার মতো গুলি। একটি লাশের জায়গায় আরও লাশ। লাশগুলো গায়েব হয়ে গিয়েছে। লোকটি সেই লুকোন এক লাশ বের করতে তার কাছে এসেছিল। তিনি অবশেষে চিনতে পেরেছেন। সেদিন...যেদিন চোখের উপর চোখ পড়ে যায়, তিনি কি কেঁপে উঠেছিলেন? এই ভেবে যে ক্ষমতার লক্ষ্যে লাশ ফেলেছেন আর এ দেশে এটিই রাজনীতি, কখনো ভাবেননি, আশঙ্কা ছিল না; একদিন তিনিও লাশ হবেন। সে লাশের প্রকাশ্য বাহারি জানাজা হবে। অথচ কফিনে কোনো মানুষ থাকবে না। হয়তো কুকুর কিংবা বীভৎস খবিশ। সেদিন থেকে তিনি তো এক লাশ। প্রমাণ হয়ে গেছে।

লোকটি তার দৃষ্টির অশ্রু শুকিয়ে ফেলেছিল। কেননা যা হওয়ার নয় তেমন কোনো ঘটনা মানুষের সবকিছু অলীক করে তোলে। অবিশ্বাস্য হয়ে যায় বেঁচে থাকা। সে বলে, ‘আপনি আকাশ থেকে তারা খসে পড়ার ঘটনাকে কীভাবে দেখেন?’

 

‘মানে?’

‘আমার মা অর্থাৎ সেই লাশেরও মা বলতেন, আকাশ থেকে তারা খসে পড়া খুব অশুভ। নিজেদের মধ্যে কেউ মারা যায়। আমি পীরগঞ্জে কাজ করে যখন ফিরছিলাম, মধ্য-দুপুর; প্রচণ্ড রোদ। গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে অসম্ভব ক্লান্ত। অফিসে ফিরছি। আমার সামনে ওই এলাকার ম্যানেজার। আমি দক্ষিণের আকাশে একটি উজ্জ্বল তারা খসে পড়তে দেখলাম।’

‘দিনের বেলা...দুপুরে?’

‘তারাটি ছিল দিনের চেয়েও উজ্জ্বল। তীব্র আলোকচ্ছটা। সাধারণত এমন হয় না।’

‘তারপর?’

তিনি জিজ্ঞেস করেছেন। তবে বিন্দুমাত্র কৌতূহল ছিল না। এ মহূর্তে এসব রূপকথার গল্পই বা কেন? এসব দুর্বল মানুষেরা অসহায় বিভ্রান্ত মুহূর্তে আরও নিঃসঙ্গ অবলম্বনহীন হয়ে যায়। অদৃষ্টকে স্মরণ করতে থাকে। আকুল দৃষ্টিতে কোনো ফরিয়াদ তোলে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে। আনুপূর্বিক ঘটনা সামান্য কৌতুকপ্রদ লাগলেও মজা করতে ইচ্ছে হয় না। কেননা এই মৃত্যুকে করুণায় ডোবাতে মন চায় তার। লোকটি ব্যাকুল স্বরে কেঁদে ফেলে। কাঁদতে থাকে। সে নিশ্চুপ প্রলম্বিত অশ্রুধারা নদীর মতো বয়ে চলে। সময় থমকে দাঁড়ায়। মনে হয় গাছের পাতারা শুকিয়ে গেছে, পাখিরা ভুলে গেছে গান; শুধু প্রাণ আকুল করা শোকোচ্ছ্বাস বাতাসে ধীরলয়ের ঢেউ তুলে ভেসে ভেসে যায়। সবকিছু ধারহীন ছুরির আঘাতে নিজেকে খুঁচিয়ে তুলতে থাকে। লোকটির মলিন মুখ। দুচোখ রক্তজবা লাল। কোনোদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। একসময় স্তিমিত হয়ে পড়ে অসম্ভব ক্লান্তির ছড় টেনে। হয়তো থেমে যায় অথবা বিরতি। তখন সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মতো বলে উঠে, ‘আমার ভায়ের লাশ বের করে দিন। দাফন কাফন করব। ভাইটা আমার না খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।’

‘আচ্ছা তুমি ভোরবেলা লাশকাটা ঘরে আসো। মনে হচ্ছে কার্ফুতে শহরের অবস্থা ঝিমিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ লুকিয়ে রাখা লাশ ফেরত দেবে। লাশের সুরতহাল না হলে পাবে কী করে?’

তারপর লোকটি তার পায়ের কাছে কুকুরের মতো বসে থাকে। এদিক-ওদিক অর্থহীন ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি ফেলে যায়। সে আসলে কী দেখছিল? কোনো স্মৃতি...সুখের না দুঃখের? নাকি অপরিণত বয়সে মৃত ছোট ভাইয়ের লাশ তার কাঁধে ভারী হয়ে বসেছিল? কিংবা ঘোরের মধ্যে বসতে চায়। তিনি তখন সে-সব দেখে অন্যকিছু ভাবছিলেন। আজও মনে আছে। আসলে সবকিছু ক্যারামবোর্ড খেলার নিয়ম-ছক বেঁধে চলে না। কাজ এগোচ্ছে। ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তনে অনেককিছু করতে হয়। এরজন্য দু-একটি লাশ পড়তেই পারে। কিন্তু এ লাশ...না না হিসাব মিলছে না। লুকিয়ে থাকা একটি মানুষের লাশ বের করে আনা অনেক শক্ত। তিনি নিজেও জানেন না আসলে সেটি হবে কি না কিংবা পারবেন কি?

পরদিন সেই লোক সূর্যের জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষে প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় লাশকাটা ঘরে পৌঁছে যায়। না লাশকাটা ঘর সে চেনে না। সে এসে পড়েছে মেথরপাড়ায়। সেখানে হোলি উৎসব। মানুষ এত কান্নার মধ্যেও উৎসব করতে পারে! সেখান থেকে দৌড়ে যায় সে। এখানে ওখানে। স্খলিত পদ শোকাকুল উন্মাদনায়। না কোনো লাশ আসেনি। লাশ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

এর দু-দিন পর গভীর ভোররাত। শহর নিথর ঘুমিয়ে আছে। প্রতিবাদের উত্তপ্ত আগুনের শিখা নিয়ন্ত্রণে। হয়তো স্তিমিত। তখন খুব গোপনে লাশ দাফন হয়ে গেল। পুলিশের গুলিতে প্রতিবাদী মানুষের মরে যাওয়া অনন্ত এক পাপ। সার্থক চতুর মানুষের কৌশল। লাশ লাশ খেলার রাজনীতি অনেক পবিত্র কর্ম। শেখ রহিম দুপুরে দেখলেন, সদ্যপ্রোথিত কবরের পাশে লোকটি প্রাণহীন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। জনতার বিচ্ছিন্ন কথাবার্তা-চিৎকার-হুংকারের মধ্যে তার দুচোখ অসম্ভব ঘোলাটে। নির্নিমেষ ধূসর দৃষ্টি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে পশ্চিমের দূর দিগন্তে সেঁটে রয়েছে। সেখানে কি ঈশ্বর? লোকটি কি তার দেখা পেয়েছে? নাকি এখনো খুঁজে চলেছে? কেননা তারা তখন কবরের ভেতরে আরও লাশ আছে সন্দেহে খুঁড়ে দেখতে চাইছিল। তাদের আক্রোশ উল্টোদিকে ঘুরে গেছে আর লোকটি অসহায়ের মতো ছোট ভাইয়ের ঘুম ভাঙাতে চাইছিল না। তিনি তখন রাস্তায়। গাড়িতে বসে সবকিছু দেখলেন। তারপর পাঞ্জাবির ডান পকেট থেকে প্রচণ্ড সাদা রুমাল বের করে মুখ মুছে ফেললেন। এখন দাবার পরবর্তী চালের হিসাব।

শেখ রহিম পরে এমপি হলেন। আইনসভায় বসে কত আইন তৈরি করলেন। টাকা-সম্মান-সমৃদ্ধি কামালেন। এখন আলিশান প্রাসাদে থাকেন। নিয়মমতো বারান্দায় বসেন। গদি-আঁটা চেয়ার। অবসর জীবনে আনন্দ-ফুর্তির সঙ্গে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় মানুষ দেখেন। তিনি দেখেন মানুষ। তারা দেখে কৌশলী-সফল-সার্থক-সুখী এক মহামানুষ। নাকি তারা লাশ দেখে? তিনি যেমন ওই লোকটিকে দেখেন, কখনো চিনে নেন; পোড়-খাওয়া ন্যুব্জ বৃদ্ধের মতো অসহায় ব্যক্তি, যার দুচোখে মৃত মানুষের ফ্যাকাশে হলুদ। সে তো আসলে এক লাশ!




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়