ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর থেকে ঋণ আদায়ের চেষ্টা
নেত্রকোনা প্রতিনিধি : অকাল বন্যায় ফসলহারা কৃষকদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে এনজিও কর্মীরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনজিওর ঋণের চাপে বিপাকে আছেন নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণের টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন ও চাপ সৃষ্টি করছেন এনজিও কর্মীরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন খালিয়াজুরীর বোয়ালী, জগন্নাথপুর ও মোহনগঞ্জের বড়খাসিয়া, গাগলাজোড়, করাচাপুর, বেথামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাড়িতে এনজিওকর্মীরা ঋণ পরিশোধের জন্য হাজির হয়েছেন। ঋণগ্রহীতাদের এক জায়গায় জড়ো করে ঋণের কিস্তি আদায় এবং আলোচনা করছেন। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংক ঋণ ও এনজিও ঋণ আদায় স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী খালিয়াজুরীতে এসে ঘোষণা দিয়ে গেছেন, আগামী ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ব্যাংক ঋণ এনজিও ঋণের জন্য যেন কৃষকদের ওপর যেন চাপ প্রয়োগ না করা হয়।
খালিয়াজুরী উপজেলার বোয়ালী গ্রামের মাহবুব মিয়া বলেন, ‘এবারে অসময়ে হাওরে পানি আওনে আমাদের সকল আশা-ভরসা সব কিছু পানিতে তলাইয়া গেছে। কোনোভাবে খাইয়া না খাইয়া বাইচ্ছা আছি। এনজিও থেকে কিছু টাকা আনছিলাম ফসল করার জন্য। টাকা দেওনের লাইগ্যা চাপ দিতাছে তারা। কীভাবে বাঁচব চিন্তায় আছি।’
একই গ্রামের আল আমিন বলেন, ‘আমি আশা এনজিও থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম বোরো জমি আবাদ করার জন্য। পানিতে সব জমি তলাইয়া নষ্ট হওয়ায় এখন নিরূপায়। কিন্তু এনজিওর লোকজন সেই কথা বুঝতাছে না। তারা টাকার জন্য বাড়িতে আইসা বসে থাকে। বার বার না করার পরও শুনছে না। এখন কীভাবে কী করি। এই চিন্তায় চোখের ঘুম হারাম।’ এই ধরনের অভিযোগ অনেকে করেছেন এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে। অনেকে এ সব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আশা এনজিও’র খালিয়াজুরী শাখার ম্যানেজার এ বি এম শাহীন বলেন, তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বরাবরের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মীরা ঋণ আদায়ের জন্য মাঠে যান, কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় না। কৃষকদের তাদের সুবিধামত ঋণ পরিশোধের জন্য বলা হচ্ছে। কেউ ঋণ পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে সময় দেওয়া হচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার বোয়ালী গ্রামে অবস্থিত ব্র্যাক অফিসের সিনিয়র এলাকা উন্নয়ন সমন্বয়কারী মো. আবদুস সালাম বলেন, তাদের কর্মীরা মাঠে রুটিনমাফিক কাজ করছেন। তবে কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে না। যদি কেউ টাকা দিতে চায়, তাহলে নেওয়া হচ্ছে। চাপ দিয়ে ঋণের টাকা নেওয়া হচ্ছে না।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় আপাতত বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশ রয়েছে। এরপরও যদি ঋণের টাকা আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাইজিংবিডি/নেত্রকোনা/২ জুন ২০১৭/ইকবাল হাসান/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন