পাঁচ কবির পদাবলি
মহাদেব সাহা, ফারুক মাহমুদ, মারুফ রায়হান, শুভাশিস সিনহা, গিরীশ গৈরিক || রাইজিংবিডি.কম
আমি কেউ নই, আমি শরীরের
ভেতরে শরীর
গাছের ভেতরে গাছ,
এই অনন্ত দিনরাত্রির মধ্যে একটি বুদ্বুদ;
আমি মানুষের মতো কিন্তু মানুষ নই
শুধু মুখচ্ছবি
মানুষের একটি আদল
ছায়ার মানুষ;
আমি কেউ নই, কোনো কিছু নই
আমি মানুষের মতো
এক মুখোশ মানুষ
হয়তো জন্মেই মৃত আমি, হয়তো এখন
কেবল ছায়া,
মানুষের মতো
এই ছায়া-মানুষ;
আমি কেউ নই, আমি কোনো কিছু নই,
আমি ছায়ার ভেতরে শরীর
আমি কেউ নই, আমি মানুষের ভেতরে
মানুষ, ভেতর-মানুষ।
ছোট্ট হোক, তবু থাকি জলাশয় বুকে নিয়ে
দৃষ্টির ছন্দটি আঁকি পাখিদের ওড়াউড়ি দিয়ে
সরল প্রজ্ঞার হাসি ধরে রাখি সবুজের গানে
একটাই আকাশ, তার কত বর্ণ, কতকিছু মানে
রাস্তার সান্নিধ্য পেলে ঢুকে যাই তোমার গলিতে
সোজাপথে ভ্রান্তি থাকে, জীবনের তুল্যমূল্য দিতে
সাঁকোর ওপারে যাব। সাদা-কালো মিলে যাওয়া ঘ্রাণে
নরম পাতার শব্দ, কেউ যদি রৌদ্র বয়ে আনে ...
দ্বিধা বাড়ে, বলি শোনো, করুণার সিংহাসনে নয়
বসিয়ো আঁচলঘাসে; বারবার ফিরে যেতে হয়
এমন মন্ত্রের টানে পুনরায় মুগ্ধ হতে চাই
মুহূর্তে উড়িয়ে দেব জীবনের গ্লানিদগ্ধ ছাই
পরম প্রণয়ে তৃষ্ণাতুর ছিল নারীর অধর
যদিও গোপন ছিল সে-বাসনা, এমনকি মনও
সে-পিপাসা বুঝতে পারেনি; ঘুণাক্ষরে প্রেমাষ্পদ
জানতে পারেনি তারুণ্যের প্রথম দিনের সেই
অবাক অমোঘ টান- তাই তিরিশ বছর পরে
দুজোড়া অধর কালক্ষেপণের ভ্রান্তিতে ভোলেনি
পুরুষের ওষ্ঠ হতে প্রবাহিত অশান্ত বিদ্যুৎ
নারীর অধর ছুঁয়ে সঞ্চালিত সম্পূর্ণ সত্তায়
চার পাপড়ির চারু স্পর্শে চারপাশ মুছে গেল
নারীর আগ্রাসী ঠোঁট কখনোবা স্মিত সমর্পিত
পুরুষ প্রাধান্য দিলো সম্পূর্ণত নারীর ইচ্ছার
তিরিশ বছর পর নিমজ্জন রচিত আনন্দে
তখন ভিড়লো স্বর্গতীরে অলৌকিক স্বপ্নযান
একটি চুম্বন তবে সার-সুখ সমগ্র আয়ুর!
একটি চুম্বন মানে নরনারী আমৃত্যু-যুগল
এই কি সূচনা, শুভারম্ভ- নাকি এটি যবনিকা?
আকাঙ্ক্ষা পূরণ, নাকি তৃষ্ণাবৃদ্ধি যাদুবাস্তবতা
স্মৃতির ভাস্কর্য হয়ে রবে মূর্ত আগামী তিরিশ
কিংবা অন্য কোনো ঠোঁট হলো চির দিনের নিষিদ্ধ
এক চুমু বেঁধে দিলো জন্মান্তর অদৃশ্য বন্ধন!
উড়তে উড়তে একটি পাখি পায়ের তলায় এসে লুটিয়ে পড়ল, তার ঠোঁটের কোণে একটি গানের আধাখানা, বাকি অর্ধেক শ্রুতির ইতিহাসে (কোন পৃষ্ঠায় খুঁজে পেলাম না), এদিকে ঝড়ের আভাস, বিদ্যুচ্চাবুকে লাল হয়ে গেল আকাশের পিঠ, ঘুরতে ঘুরতে একটি স্বপ্ন পড়ে গেল মুগ্ধ আঁখির পাতার তলায়, ভোরের রাগিনী বসে ছিল বুকে আঁকড়ে শেষ গায়নের তান, অথর্ব জীবন ভাঙা-পা মোচড়ানো-হাত বধির-কর্ণ গন্ধ-দূর নাসারন্ধ্র নিয়ে দুপুরের আলসে কুকুর, একটি পাখি উড়ছে, ঘুরছে স্বপ্ন, বেপথু শেষ রাগিনীর তান...
শূন্যঘরে একটি সাপ ও একটি বেজি পাশাপাশি বসবাস করে
তাদের মাঝে বিভেদের হাই তুলে-দাঁড়িয়ে কাচের দেয়াল।
সাপটি যখন আগুনের ফণা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে-
তখন বেজিটি রণকৌশল বদলে হিংস্র হয়ে ওঠে।
তাদের এই দ্বন্দ্ব-কাচের দেয়ালে প্রতিদিন প্রতিভাত হয়।
মানুষের ক্ষুধার মাঠ ফসলের জলে ডুবে গেলে-
সাপ ও বেজিদ্বয় সেই জলে তাদের দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখে।
রাতের শেষে চাঁদ ডুবে গেলে-কখনো তারা দ্বন্দ্ব ভুলে
জীবন থেকে জীবাশ্মের গান গায় আর নীরবে কাঁদে।
কাচের দেয়ালের মাঝে আলো আর অন্ধকার খেলা করে
অন্ধকারের সাথে আলোর মিলন ঘটলেই-
অন্ধকার কেঁদে কেঁদে আলোকিত হয়ে যায়।
এভাবে আলোর সাথে অন্ধকারের যে দ্বন্দ্ব-
সেই দ্বন্দ্ব সাপ ও বেজির রক্তে কথা কয়।
তাই সাপের রক্ত যতটা শীতল, বেজির রক্ত ততটাই উতপ্ত।
এভাবে তুমি আর আমি সাপ ও বেজি হয়ে খেলা করি-
পৃথিবীর আলোকিত অন্ধকারে-বিভেদের দেয়ালজুড়ে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন