ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কেমন হবে বিপিএলের উইকেট?

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেমন হবে বিপিএলের উইকেট?

ইয়াসিন হাসান: টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার ধুন্ধুমার লড়াই। ২২ গজের ক্রিজে ব্যাটসম্যানরা রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে রান বন্যায় ভাসাবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকরা ব্যাটসম্যানদের দাপটের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে বোলারদের থেকেও নজরকাড়া পারফরম্যান্স প্রত্যাশা থাকে। রোমাঞ্চ, পরতে পরতে উত্তেজনা, শেষ মুহুর্তে জয়-পরাজয় নির্ধারণ; সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্রিকেট প্রেমিদের কাছে আকর্ষণীয় এক প্যাকেজ।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায়। ৪ নভেম্বর পর্দা উঠবে সাত দলের বিপিএলের। গত চার আসরের বিপিএলের পারফরম্যান্সের মূল্যয়ন করে দেখা গেল, পুরো বিপিএলে ব্যাটসম্যানদের থেকে বোলারদের আধিপত্য ছিল বেশি। টি-টোয়েন্টিকে ধুম-ধাড়াক্কা ক্রিকেট বলা হলেও এ ম্যাচের স্কোরগুলো দেখে তা মানার উপায় নেই। 

ক্রিকেটারদের হতাশা
বিপিএলের তৃতীয় আসর চলাকালিন সময়ে রংপুরের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, উইকেট ভালো আচরণ করছে না।’ সিলেটের হয়ে খেলতে আসা ইংল্যান্ডের রবি বোপারা বলেছিলেন,‘এখানকার উইকেটে স্পিন খেলাই শুধু কঠিন নয়; পেস বল খেলাও কঠিন। বল মুভ করছে, পাশাপাশি অনেক মন্থর উইকেট।’ বিপিএলের দ্বিতীয় আসর শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন,‘বিপিএলের উইকেট টা উইকেট ছিল না। দিনের খেলায় হয়তো রান হয়েছে তবে রাতের খেলায় কোনো রানই হয়নি। উইকেট যেমন হয়ে গিয়েছিলো, তাতে রান করা খুব কঠিন ছিল। আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোথাও এমন উইকেট হবে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে।’

পরিসংখ্যান
প্রথম আসর: বিপিএলের প্রথম আসরে খেলেছিল ৬ দল। মোট ম্যাচ হয়েছিল ৩৩টি। ৩৩ ম্যাচে মোট রান হয়েছে ৯৪৪৪।ম্যাচে গড় রান হয়েছে ২৮৬। প্রতি ইনিংসে মাত্র ১৪৩।

দ্বিতীয় আসর: দ্বিতীয় আসরে একটি দল বাড়ে। ফলে বাড়ে ম্যাচ সংখ্যা। ৭ দলের বিপিএলে ম্যাচ হয়েছিল ৪৭টি। তবে আনুপাতিক হারে বাড়েনি রান। ৪৭ ম্যাচে মোট রান হয়েছিল ১৩৭৬০। ম্যাচ প্রতি রান ২৯৩। প্রতি ইনিংসে রান মাত্র ১৪৭।

তৃতীয় আসর: তৃতীয় আসরে একটি দল কমে ৬ দলের বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়। মোট ম্যাচ হয় ৩৩টি। চার আসরে সবথেকে কম রান হয় ওই আসরে। ৮৭৭৭ রান হয়েছিল সেবার। ম্যাচপ্রতি রান হয়েছিল ২৬৬। ইনিংসপ্রতি রান মাত্র ১৩৩।

চতুর্থ আসর: সবশেষ আসরে ৭ দলের বিপিএলে ম্যাচ হয় ৪৬টি। দ্বিতীয় আসরেও খেলেছিল ৭ দল। কিন্তু রান হয়েছে দ্বিতীয় আসরের থেকে কম। ৪৬ ম্যাচে রান হয়েছে ১২৯৯৬। ম্যাচপ্রতি রান ২৮২। ইনিংসপ্রতি রান ১৪১।

সর্বাধিক রান-সর্বনিম্ন রান: বিপিএলের চার আসরে সর্বোচ্চ দলীয় রান ২১৭, সর্বনিম্ন ৪৪। দুইশর উপরে রান হয়েছে ৭ ইনিংসে। একশর নিচে রান হয়েছে ১৯ ইনিংসে।

জয়: রানের হিসেবে একশর বেশি রানে জয়ের ব্যবধান এক ম্যাচে। ১১৯ রানে জিতেছিল ঢাকা, সিলেটের বিপক্ষে ২০১৩ সালে। এছাড়া ১৫ ইনিংসে ৫০ রানের বেশি ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড রয়েছে। ১০ উইকেটে জয়ের রেকর্ড দুই ম্যাচে। দুটি ম্যাচে টার্গেট ছিল ১৬৬ ও ১৪০।

রান কম হওয়ার কারণ: বিপিএলে রান কম হওয়ার প্রথম কারণ উইকেট। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফ্রাঞ্চাইজি লিগে উইকেট থাকে ফাস্ট, স্পোর্টিং। সেখানে বিপিএলের উইকেট মন্থর। মন্থর উইকেটের কারণে বলের আচরণ থাকে ভিন্ন। উইকেটের আচরণের ফলেই স্বহজাত ব্যাটিং করতে পারেন না ব্যাটসম্যানরা। পাশাপাশি ভেন্যুর সংখ্যা কম হওয়ায় উইকেট প্রস্তুত করাও সম্ভব হয় না। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের কিউরেটর গামীনি ডি সিলভা হতাশার সুরে বারবার বলেন,‘পৃথিবীর কোনো মাঠেই এতো বেশি খেলা হয় না।’

আশার দিক: এবারের বিপিএলে বেড়েছে একটি ভেন্যু। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিপিএলের খেলা হবে সিলেটে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দীর্ঘদিন ধরেই খেলা হচ্ছে না। তাই স্পোর্টিং উইকেটের প্রত্যাশা করা যেতে পারে মিরপুরে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রান উৎসব হতে পারে বলে জানিয়েছেন কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। সিলেটে প্রথমবারের মতো বিপিএল হতে যাচ্ছে। কিউরেটর জয়দ্বীপ দাস সুজক বড় রানের সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

দেশি ক্রিকেটারদের প্রত্যাশা: মন্থর উইকেটের পরিবর্তে ফাস্ট উইকেট চান ব্যাটসম্যানরা। বল সহজাতভাবে ব্যাটে আসবে এমন উইকেটের প্রত্যাশা ব্যাটসম্যানদের। আবার বোলারদের প্রত্যাশা বোলারদের জন্য যেন কিছু থাকে উইকেটে। সব মিলিয়ে দেশি ক্রিকেটাররা একটি বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে, প্রত্যেকেরই চাওয়া ‘বিপিএলের উইকেট যেন স্পোর্টিং হয়।’ আগের চার আসরের মতো উইকেটের প্রত্যাশা করছে না কেউই।

ব্যাট-বলের রান উৎসব জমবে বিপিএল এমনটাই প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমিদের। আয়োজকরা কি প্রত্যাশা মেটাতে পারবে? সেটাই দেখার।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ অক্টোবর ২০১৭/ইয়াসিন/শামীম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ