ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোমান্টিক কবি শেলির প্রেম

কে এম আব্দুল মোমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোমান্টিক কবি শেলির প্রেম

চিত্রকরের তুলিতে মেরি গডউইনের সঙ্গে শেলি

কে এম আব্দুল মোমিন : বাল্যবিবাহের স্বপক্ষে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। সাধারণ লোকদের বেলায় বাল্যবিবাহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হতে পারে। এ সময় তরুণ-তরুণীদের বিশেষ কোনো কল্পনা থাকে না। বাইশ বছর বয়সে বা তার কিছু পূর্বে যাদের পূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটে তারা স্বচ্ছন্দে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তাদের তখন বৃদ্ধি যা ঘটার তা ঘটে থাকে। বেশি কিছু বিকাশ বা হ্রাসের সম্ভাবনা থাকে না। পরস্পরের সান্নিধ্যে এসে তাদের সংসারযাত্রা শুরু হয়।  ক্রমশ তাদের একই রকম চিন্তা-ভাবনা, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়।

কিন্তু প্রতিভাশালী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ প্রায়ই যন্ত্রণাকাতর হয়ে থাকে। উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের যে মানসিক বিকাশ ঘটে তা দেখে দশ বছর পর তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে সম্পর্কে কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ নানাবিধ ঝড়-ঝঞ্ঝা ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং পরিণামে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।

প্রকৃতিগতভাবে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রথম ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সে যদি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অতিসাধারণ ও শীতল প্রকৃতির দম্পতি নির্বাচন করে, পরে সে তার ভুল বুঝতে পারে। যখন তার স্বপ্নের ঈগল পূর্ণরূপে ডানা মেলে উর্ধ আকাশে বিচরণ করতে থাকে, তার সঙ্গিনীকে বাড়ির আঙ্গিনায় মুরগির মতো বিচরণ করতে দেখে। সে উপলব্ধি করে এত উঁচুতে আরোহণ করে এক সঙ্গে বিচরণ করা তার সঙ্গিনীর পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। অথচ বিবাহ মুহূর্তে তাকে তার সমকক্ষ মনে হয়েছিল। সবকিছুতেই তখন অনিবার্য দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

পার্সি বিশি শেলির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণরূপে বিচিত্র। অদ্ভুত পরিস্থিতিতে তার বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। আর সে বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে অদ্ভুতভাবে। শেলি নিজেও ছিলেন এক অসাধারণ সৃষ্টি। তার কৃতকর্মের জন্য জীবদ্দশায় তাকে দোষারোপ করা হয়। তখন থেকেই তার প্রতি কিছু কিছু বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। জীবনের শুরুতেই তিনি  অপ্রত্যাশিতভাবে প্রবঞ্চনার শিকার হন। এ জন্য তার সংক্ষিপ্ত, প্রতিভাদীপ্ত ও ভ্রান্তিপূর্ণ জীবন সম্পর্কে কিছু ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ ঘটে। 

১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। প্যারির ক্ষুব্ধ জনতা তাদের রাজা টিলারিসকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। রাজা তখন ফাঁসির অপেক্ষায় ছিলেন। ইউরোপজুড়ে অরাজকতার থাবা বিস্তার করে। এ ঝড়-ঝঞ্ঝার বছর শেলির জন্ম হয়। এ কারণে তার চরিত্রে সম্ভবত যুগযন্ত্রণার প্রভাবে অস্থির মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়।
শেলির বাল্যকালে যে চিত্তচাঞ্চল্য ও বিদ্রোহ প্রবণতা পরিদৃষ্ট হয়, তা কিন্তু তার পিতা-মাতা থেকে অর্জিত হয়নি। তার পিতা টিমোদি শেলি অত্যন্ত সাধারণ, স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, নিরস ইংরেজ গ্রাম্য জমিদার ছিলেন। তার মাতা দেখতে সুন্দরী হলেও অসাধারণ কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না। তবে তিনিও জমিদার কন্যা ছিলেন। বিয়ের সময় হাজারো সহজ-সরল ও সদালাপী গ্রাম্য ইংরেজ কন্যাদের মতোই সাধারণ ছিলেন।

শেলির রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকারসূত্র খুঁজতে গেলে দেখা যায়, তার পিতামহের নিকট থেকে বংশগতভাবে তিনি কিছুটা এ বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন। তার পিতামহ অত্যন্ত বিখ্যাত ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন।

শেলির পিতামহের নাম ছিল বিশি শেলি। তার যৌবনকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তার জন্মও ইংলান্ডে নয়, আমেরিকায়। সে সময় আমেরিকা বলতে অনিশ্চিত আর অদ্ভুত দেশ হিসেবে লোকে বুঝত।

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ইংরেজ জমিদার বংশের সন্তান বিশি শেলি অনেক অজানা দেশ ভ্রমণ করেন। শোনা যায়, তিনি অনেক কিছু দেখেছেন এবং করেছেন। একটি জনশ্রুতি অনুসারে বলা হয়, তিনি আমেরিকায় বিবাহ করেন। কেউ অবশ্য আজও জানে না, সে মহিলা শেতাঙ্গিনী না কৃষ্ণাঙ্গিনী ছিলেন, অথবা কীভাবে তিনি তাকে ছেড়ে আসেন।

বিশি শেলি হয়তো সারাজীবন আমেরিকায় থাকতে পারতেন। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে তার কিছু ছিল না। এ কারণে তিনি ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করেন। এখানে এসে তিনি উপলব্ধি করেন, এ দেশ সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রকৃত স্থান। তার দৈহিক গঠন ছিল সুন্দর। বিদেশ ভ্রমণের কারণে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। স্বাচ্ছন্দ, মর্যাদা ও প্রভাব সবই তিনি জীবনে উপভোগ করেন। যখন ইচ্ছে তিনি অত্যন্ত অমায়িক ও সন্তুষ্ট হতে পারতেন। খুব শীঘ্রই তিনি এক বিত্তশালী মহিলাকে বিবাহ করেন।

স্ত্রীর বিত্তবৈভবের কারণে শীঘ্রই বিশি শেলি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হন। সমাজের সুধীমহল ও প্রভাবশালী রাজকর্মচারীদের সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘনিষ্টতা অর্জন করেন। বিশেষত নর্দামবারল্যান্ডের ডিউকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এর প্রভাবে সম্ভ্রান্ত ব্রিটিশদের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এ সময় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তিনি অধিকতর বিত্তশালী মহিলাকে বিবাহ করেন। বিশি শেলি ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃতু্যুবরণ করেন। কপর্দকশূন্য ভবঘুরে জীবন শুরু করলেও তার মৃত্যুকালে দেখা যায়, তিনি সে সময় নগদ দশ লক্ষ পাউন্ড ও বার্ষিক লক্ষাধিক পাউন্ড কর আদায়যোগ্য জমিদারি রেখে যান।

কবি শেলির মধ্যে রোমান্টিকতার সূত্র যেটুকু পাওয়া যায় তা তার ক্ষমতাধর, সাহসী, চঞ্চলমতি ও অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী পিতামহ বিশি শেলি হতে উত্তরাধিকারসূত্রে সঞ্জাত বলে অনুমেয়। তিনি ছিলেন আদর্শ ইংরেজ জমিদার। দেশীয় দৃঢ়তার সঙ্গে বিদেশী উদার গুণাবলী তাঁর চরিত্রে বিকশিত হয়।

কিন্তু ভবিষ্যৎ কবি তরুণ শেলিকে দেখে একজন খাঁটি ইংরেজ মনে করা কষ্টকর ছিল। বাল্যকালে তিনি শরীরচর্চা বা খেলাধুলার প্রতি মোটেই আগ্রহী ছিলেন না। তখন থেকেই তিনি প্রচুর পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। তিনি অতিন্দ্রীয় বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ভাবতেন, যা স্কুলবালকগণ কল্পনাও করত না।

ফলশ্রুতিতে শেলি বেসরকারি স্কুলে ও পরবর্তীতে ইটনে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। সে সময় বিদ্যালয়ে ফ্যাগিং প্রথা প্রচলিত ছিল। এ প্রথা অনুসারে শিশুদের কায়িক পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু শেলি কায়িক পরিশ্রমকে রীতিমত ঘৃণা করতেন। তাকে যা বলা হতো তিনি তা করতে পছন্দ করতেন না। বরং নিষিদ্ধ কর্মসমূহে তিনি বেশি আগ্রহী ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে শেলিকে যখন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি করা হলো, তিনি এ কলেজে প্রচলিত নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কাই করেননি। ফরাসী বিপ্লব ও এর ফলাফল দেখে যখন টোরি ইংল্যান্ড আতঙ্কিত, শেলি প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও সাম্যের জয়গান গাইতে শুরু করেন। এ সময় তার সহপাঠী থোমাস জেফার্সন হগের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।

রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে ‘আ ডিফেন্স অব এথেইজম’ প্রকাশের দায়ে শীঘ্রই শেলিকে ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

শেলির এ আচরণে তার পিতা মর্মাহত হন। শেলি নিজেও সম্ভবত বিচলিত হন। কিন্তু এই ভেবে আশ্বস্ত হন যে মুক্তচিন্তা প্রকাশের জন্য তাকে শহীদ হতে হয়েছে। এরপর তিনি তার বন্ধু হগের সঙ্গে লন্ডন চলে যান। সেখানে লজিং থেকে প্রচুর পড়াশুনা শুরু করেন।

এ সম্পর্কে হগ বলেন, তখন শেলি প্রত্যহ ষোলো ঘণ্টা অধ্যয়ন করতেন। জনাকীর্ণ রাস্তায় চলাকালেও এক হাতে একটি বই চোখের সামনে ধরা থাকত এবং অপর হাতে আরেকটি পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকত, যেন একটি বই শেষ করে অন্য একটি বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়।

শেলির ছিল কল্পনাবিলাসী মন। বাল্যকাল থেকেই তিনি সবকিছুতেই সংস্কারপ্রত্যাশী ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রচলিত অধিকাংশ আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। পার্লামেন্টকে তিনি উদ্ভট মনে করতেন। ধর্মকেও তিনি অবজ্ঞা করতেন।

এমন কি তাকে বিবাহ প্রথারও  বিরোধিতা করতে দেখা যায়। অথচ শীঘ্রই তাকে এ বিবাহ প্রথার শিকার হতে হয়েছে।   
তখন শেলির বয়স উনিশ। এ বয়সে ইংরেজ বালকগণ সবেমাত্র স্কুল ত্যাগ করে। তাদের দৈহিক গড়নও কিছুটা অপরিণত থাকে। কেবল হাতে-পায়ে বেড়ে ওঠে। তবে শেলির এ বয়সে অন্যান্যদের মতো ছেলেমি স্বভাব পরিদৃষ্ট হয়নি।

সমবয়সীদের চেয়ে তার জীবনবোধ একটু বেশি ছিল। তবে কোন কিছু সম্পর্কে তার পূর্ণাঙ্গ ধারণা ছিল না। বাস্তব জীবন সম্পর্কে তার ধারণা হয়তো সমবয়সীদের চেয়ে কিছুটা বেশি কিন্তু বয়স্কদের তুলনায় অনেক কম ছিল।

দৃশ্যত পিতার নিকট থেকে ক্ষুদ্র আর্থিক সহায়তা ব্যতীত শেলির জীবন ধারণের আর কোনো উপায় ছিল না। তার চার বোন ক্লাফাম কমোন বিদ্যালয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতেন। তারা তাদের হাতখরচ থেকে জমিয়ে যতটা সম্ভব শেলির জন্য অর্থ প্রেরণ করতেন যেন তাকে উপবাস না করতে হয়। এই বোনেরা প্রায়ই খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য তাদের ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তাদের মাধ্যমেই ষোলো বছর বয়সী বালিকা হ্যারিয়েট ওয়েস্টব্রুকের সঙ্গে শেলির প্রথম পরিচয় ঘটে।

মাউন্ট স্ট্রিটে অবস্থিত এক কফি-হাউসের ব্যবস্থাপক ছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তার নাম জু ওয়েস্টব্রুক। হয়ত তার দৈহিক বর্ণ এবং কৃতকর্মের জন্য এরূপ নামকরণ হয়ে থাকবে। কৃতকর্ম বলতে শূন্য থেকে শুরু করে একটা কফিহাউসের ব্যবস্থাপক হন। হ্যারিয়েট ওয়েস্টব্রুক ছিলেন তার কন্যা। আর্থিক স্বচ্ছলতার কারণেই সম্ভবত এমন একটা ভালো স্কুলে জু ওয়েস্টব্রুক কন্যাকে পড়াতে পেরেছিলেন। কারণ সেখানে শেলির বোনদের মতো স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ত।

হ্যারিয়েট ওয়েস্টব্রুককে অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মনে হতো। অবশ্য ষোলো বছর বয়সের যে কোনো মেয়ে উনিশ বছর বয়সের যে কোনো ছেলের চেয়ে একটু বেশি পরিণত হয়। এ কারণেই সম্ভবত হ্যারিয়েটকে শেলির চেয়ে অন্তত পাঁচবছরের বড় মনে হতো। নিঃসন্দেহে তিনি শেলির প্রেমে পড়েন। কিন্তু কোনো কিশোরী মেয়ের মতো তার এ প্রেমে লাজুক ও ভীরু স্বভাব পরিলক্ষিত হয়নি।

হ্যারিয়েট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যেহেতু তিনি শেলিকে ভালোবেসে ফেলেছেন, যে কোনো মূল্যে তাকে পেতে হবে। তার এটা ছিল একগুঁয়েমী। অপরদিকে শেলীর ছিল সরলতা। হ্যারিয়েট দেখতে আকর্ষণীয়া। মাথায় প্রচুর চুল ছিল। শরীরটা একটু স্থূল কিন্তু দুধে-আলতা গায়ের রং। সব মিলিয়ে তাকে যেন পুতুলের মতো দেখাত। কিন্তু মেয়েরা কেবল পুতুলের মতো দেখতে অনভিজ্ঞ তরুণদের মোহাবিষ্ট করতে পারে। কারণ অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা বিচার করতে পারে না যে প্রকৃত সৌন্দর্য দৈহিক সৌন্দর্য অপেক্ষা সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ।

দৈহিক সৌন্দর্য ছাড়াও হ্যারিয়েটের আরো কিছু গুণ ছিল। তিনি ছিলেন সদালাপী। হাসিমুখে মধুর আলাপে তিনি নিপুণ ছিলেন। শ্রোতা হিসেবেও তিনি মন্দ ছিলেন না। রসায়ন, কবিতা, খ্রিস্টানদের ব্যর্থতা, জাতীয় ঋণ, মানুষের স্বাধীনতা ইত্যাকার বিষয় সম্পর্কে উচ্ছ্বাসপূর্ণ শেলির এলোপাতারি আলোচনা হ্যারিয়েট ধৈর্যসহ শুনতেন। বিশেষত শেলির আবেগময় কবিতা আবৃত্তি তাকে আকৃষ্ট করত। শেলি নিজেও অসাধারণ মোহনীয় সৃষ্টি ছিলেন। সুতরাং তাদের সময় ভালোই কাটতে থাকে।

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মালরেডি বলেন, শেলি চিত্রকর্মের জন্য অত্যন্ত প্রতিভাদীপ্ত ছিলেন। কিন্তু তার এ মন্তব্য যুক্তির ধোপে টেকেনি। শেলির দৈহিক গড়ন ছিল দীর্ঘ ও কৃশ। এ জন্য তিনি অধিকাংশ সময় নিজেকে বাঁকিয়ে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করতেন।

শরীরের তুলনায় তার মাথার আকৃতিও ছিল কিছুটা ক্ষুদ্র। কিন্তু তার মাথায় ছিল প্রচুর দীর্ঘ চুল। এ জন্য মাথার প্রকৃত আকৃতি বোঝা যেত না।  যখন  উত্তেজিত হতেন, চুলগুলোকে তিনি হাজারোভাবে ঘষতেন ও পাকাতেন যেন তা জঙ্গলের মতো দেখায়। তার চোখ ও মুখ ছিল সবচেয়ে সুন্দর। চোখগুলো ছিল গাঢ় বেগুনী-নীল। শেলি যখন চিন্তামগ্ন হতেন, চোখগুলো অপার্থিব উজ্জ্বল আলোকিত দেখাত। আর মুখাকৃতি ছিল নিখুঁত গড়নের যেন নিপুণ শিল্পীর তৈরি ভাস্কর্য।

শেলির এত সুন্দর চেহারায় স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল তার কণ্ঠস্বরও সুমিষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল তীক্ষ্ণ। আবেগাক্রান্ত হলে ময়ূরের কণ্ঠের মতো শোনাত। তিনি অবশ্য এ ত্রুটি তার সৌন্দর্যের সঙ্গে কৌশলে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করতেন। তাই আকর্ষণীয় তারকার মতো চোখ, মেয়েদের মতো কমনীয় ও দৈহিক বর্ণের অধিকারী হলেও শেলি তীক্ষ্ণ স্বরে কথা বলতেন।

কিন্তু তিনি দামি পোশাক পড়তেন। আবার দেখা যেত, তার সে দামি পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তিনি উদাসীনতার পরিচয় দিতেন। পোশাকগুলো এলোমেলোভাবে তিনি মেঝে বা খাটের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতেন।

মাটিতে গড়াগড়ি দেয়া, আগুনের চুল্লীর নিকট মাথা বাড়িয়ে দেয়া অথবা বাড়ির বাইরে গনগনে রোদে শুয়ে থাকা তার অদ্ভুত স্বভাব ছিল। ইটালিতে অবস্থানের সময় গ্রীষ্মের উত্তপ্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এ নিয়ে তিনি ‘দ্য সেন্সি’ নামে চমৎকার একটি কবিতা লিখেন।

এ পর্যায়ে শেলি ততটা বিখ্যাত হয়ে ওঠেননি। স্কুল-বালিকা গোলাপী বদন হ্যারিয়েট ওয়েস্টব্রুক তার প্রেমে পড়েন। সরাসরি তিনি কবিকে প্রেম নিবেদন করেন। হাজারোভাবে মেয়েরা তাদের প্রেমিকদের ভালবাসার ইঙ্গিত দিতে পারে। আর এ সমস্ত কলাকৌশলে ওয়েস্টব্রুক পটিয়সী ছিলেন বলা যায়।

হ্যারিয়েট অনেক সময় শেলির অনুভূতি নিয়ে খেলতেন। হ্যারিয়েট বলতেন যে, তার বাবা প্রায়ই তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেন। হয়ত তার এ নিষ্ঠুরতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। কখনো কখনো হ্যারিয়েট কল্পিত দুঃখজনক ঘটনার কথাও শেলিকে বলতেন। শেলি এগুলো মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। হ্যারিয়েট দেখে মজা পেতেন।

একবার শেলি তার বন্ধু হগকে লিখেন: হ্যারিয়েটের বাবা তার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। হ্যারিয়েট স্কুলে যেতে চায় না। স্কুলের যন্ত্রণা তার সহ্য হয় না। তবু তার বাবা জোর করে তাকে স্কুলে যেতে বাধ্য করে। সে আমার নিকট এজন্য উপদেশ চেয়েছিল। আমি বলেছি, প্রতিবাদ করো। অবশ্য আমি মিস্টার ওয়েস্টব্রুককে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারিনি।

হ্যারিয়েট বলেছে, প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। হয়ত সে আমাকে নিয়ে পালাতে চায়। সে আমার আশ্রয় চায়।’

সম্প্রতি কিছু চিঠি পাওয়া গেছে যেগুলোতে হ্যারিয়েট ও শেলির নাটকীয় দৃশ্য উন্মোচিত হয়েছে। হ্যারিয়েট দু’বাহুতে শেলির ঘাড় জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন ও বিলাপ করেছেন। কিন্তু শেলি তার জন্য প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেননি। হয়ত শেষ পর্যায়ে তার ভালোবাসার কথা তিনি হ্যারিয়েটকে জানিয়েছিলেন। স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে তার ঘরনি হওয়ার পরামর্শ তিনি তাকে জানান।

এ উদ্ভট পরিস্থিতি অনেকের নিকট হাস্যকর হতে পারে। হ্যারিয়েটের এ কথা শোনা উচিত হয়নি। তিনি কেন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করবেন? আর শেলিকে তো প্রথম থেকেই খামখেয়ালি হিসেবে দেখা যায়। তখন তার বয়স মাত্র উনিশ বছর। হ্যারিয়েটের বয়স চলছে ষোলো। তাদের সংকট এ বয়সের উত্তাপ বলে মনে হয়।

হ্যারিয়েটের স্কুলে যেতে মন চাইত না। তার বাবা তাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতেন। সুতরাং হ্যারিয়েটকে এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা শেলি একজন ইংরেজ নাইটের মতো কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এ সময় মিস গ্রুভ নামে শেলি তার কাজিনকে ভালবাসতেন। কিন্তু তিনি গ্রুভের চেয়ে হ্যারিয়েটের বিপন্ন পরিস্থিতির দিকে মনোনিবেশ করা সমীচীন মনে করেন।

অনুমান করা হয়, হ্যারিয়েট ও তার বাবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ নাটকের অবতারণা করেন। জু ওয়েস্টব্রুক জানতেন যে, শেলি বিশাল সম্পত্তির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী। তিনি এক সময় তার বাবার জমিদারির মালিক হবেন। এ বিষয়টি তাদের প্রভাবিত করে থাকতে পারে।

যেভাবেই হোক, তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। আবেগপ্রবণ শেলির পক্ষে সাশ্রুনয়না হ্যারিয়েটকে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়নি। তিনি তাকে সাহায্যের জন্য উদার মনে এগিয়ে আসেন। তার অন্তরে অবশ্য হ্যারিয়েটের স্থান খুব কমই ছিল। তার রোমান্টিক মন তখনও গ্রুভকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন আঁকত। এ সময় শেলির সারা বছরের হাতখরচ ছিল মাত্র দু’শত পাউন্ড। এ পরিস্থিতিতে শেলি হ্যারিয়েটের সঙ্গে জুটি বাঁধেন।

শেলি ও হ্যারিয়েট এডিনবার্গের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তাদের এ যাত্রা ছিল অত্যন্ত ক্লান্তিকর ও অস্বস্তিকর। স্কটল্যান্ডের এ রাজধানীতে পৌঁছে তারা এখানকার নিয়ম অনুসারে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তারা কপর্দকশূন্য। স্থানীয় জমিদার দয়াপরবশ হয়ে তাদের জন্য একটি কক্ষ ও ছোট আকারের ভোজসভার ব্যবস্থা করেন।

হ্যারিয়েট তার স্বামীর প্রতিভা বিকাশে তেমন কোন প্রেরণা যোগাতে পারেননি। এমন কি ভালবাসার মাধ্যমে তার অন্তরে বিশেষ কোনো স্থানও তিনি অধিকার করতে পারেননি। কখনো কখনো তিনি তার স্বামীর মানসিক অবস্থা হয়ত উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন এবং বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি তার প্রকৃত সঙ্গীনী। কিন্তু এমন অসময়োচিত, অপরিণামদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ দম্পতি থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়?

শেলির বিবাহের সংবাদ শোনামাত্র তার পিতা যেটুকু হাতখরচ পাঠাতেন ক্ষুব্ধ হয়ে বন্ধ করেন। অপরদিকে হ্যারিটের পিতা জু ওয়েস্টব্রুকও তাদের জন্য কোনোরূপ ব্যয় নির্বাহে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

নিরূপায় হয়ে এ তরুণদম্পতি বিভিন্নস্থানে উদ্দেশ্যহীনভাবে যাত্রা করতে থাকেন। যথেষ্ট খাবারও জুটত না। তারা অত্যন্ত কায়ক্লেশে জীবন যাপন করতে থাকেন। পেটের তাগিদে তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমান্বয়ে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে থাকে। এমন কি এ সময়ে তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসার উত্তাপও হ্রাস পেতে থাকে।

চরম হতাশায় শেলি মদ ও আফিমের সংমিশ্রণে তৈরি লডেনাম গ্রহণ করতে থাকেন। স্বামীর উৎসাহে হ্যারিয়েট যে পড়াশোনা করতেন তাও তিনি বন্ধ করেন। বরং তার সমাজের চিরপরিচিত অসৎ সঙ্গে লিপ্ত হন। এ সময় তার নিষ্ঠুর প্রকৃতির ও বৈষয়িক জ্ঞানসম্পন্ন মধ্যবয়স্কা বোন এলিজা তাকে শেলির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণে পরামর্শ প্রদান করেন। এতে শেলি ও হ্যারিয়েটের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। এলিজা এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। তার এ আচরণ তাদেরকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে। হ্যারিয়েট প্ররোচিত হয়ে শেলির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন।

এমন এক দুঃসময়ে তাদের ঘরে নতুন অতিথির আগমন ঘটে। নবজাতকের কথা ভেবে শেলি উদার মনে ইংরেজ আইন অনুসারে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এ বিবাহ কোনো রেখাপাত করেছে বলে মনে হয় না। হ্যারিয়েটকে তার সন্তানের প্রতি কোনোরূপ আদর-যত্ন করতে দেখা যায়নি। এতে শেলি মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে এলিজার পরামর্শে শিশুটিকে স্তন্য দান করতেও হ্যারিয়েট অনীহা প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে শেলির হাতে বেশ কিছু অর্থ আসে। কিন্তু এ অর্থ হ্যারিয়েট ও তার বোন এলিজা অপচয় করেন। শেলির প্রতি হ্যারিয়েট কোনো মনোযোগ দেননি। এভাবে বিবাহের তিন বছর শেষে এলিজার প্ররোচনায় হ্যারিয়েট তার স্বামীকে পরিত্যাগ করে লন্ডন চলে যান, সেখান থেকে বাথ। এ সময় হ্যারিয়েট অন্তঃসত্তা ছিলেন।

শেলি ও হ্যারিয়েটের দুর্ভাগ্যজনক বিবাহের এভাবে করুণ সমাপ্তি ঘটে। শেলি অবগত হন যে হ্যারিয়েট তার প্রতি বিশ্বস্ত নন। তিনি তখন কিছুটা আবেগবশত স্কুল শিক্ষিকা মিস হিচেনারের সঙ্গে পত্রালাপ করতে থাকেন। কিন্তু তখন তিনি জীবনের প্রারম্ভেই মারাত্মক ভ্রমের শিকার হয়ে অস্থির ও অস্বস্তিকর জীবন যাপনের কারণে রীতিমত আশাহত। খ্যাতির স্পর্শ তখনো তার জীবনে আসেনি। এমন সময় কিছুটা অনিবার্যভাবেই যেন কারো সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। এ সাক্ষাৎ আরো আগে ঘটা উচিত ছিল।

তদানীন্তন প্রখ্যাত লেখক ও প্রগতিশীল দার্শনিক উইলিয়াম গডউইনের প্রতি ছাত্রজীবন থেকে শেলির গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ১৮১৪ সালের কোনো এক দিন শেলি গডউইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ১৭ বছর বয়সী এক বালিকার সঙ্গে দেখা হয়। তার সুডৌল মাথা ছিল সোনালি চুলে আবৃত, মুখ ছিল হালকা রঙিন ও স্নিগ্ধ। তার ছিল প্রশস্ত কপাল, উৎসুক ও হালকা বাদামী চোখ। তার চেহারায় ছিল সুস্পষ্ট বুদ্ধিমত্তার ছাপ। এ ছাড়া ছিল ঈষৎ বঙ্কিম ও কমনীয় ওষ্ঠাধর। এ বালিকার নাম মেরি গডউইন। তার মায়ের নিকট থেকে প্রচণ্ড মানসিক ক্ষমতা, আত্মমর্যাদা বোধ ও সুশীল আচরণের মতো গুণাবলী অর্জন করেন।

প্রথম সাক্ষাতে শেলি ও মেরি পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। উভয়ে উভয়কে মনেপ্রাণে উপলব্ধি করেন। তাদের মধ্যে যখন দেখা হতো তারা পরস্পরের প্রতি চুম্বকের মতো রোমাঞ্চকর আকর্ষণ অনুভব করতেন। একে অপরের কথা তারা গভীর মনোযোগসহ শুনতেন। একে অন্যের অনুপস্থিতিতে তাদের কেউ কোনো কিছু নিয়ে ভাবতেন না বা কেউ কোনো কিছু পরোয়া করতেন না। হয়ত ঐশ্বরিক ইঙ্গিতে তাদের এ জুটি গড়ে উঠেছে। এদের নিকট যেন হ্যারিয়েটের প্রেম বড় বিশুষ্ক, করুণাপূর্ণ ও অনুদার মনে হয়।

প্রথম সাক্ষাতের প্রায় একমাস পর শেলি ও মেরি গডউইন সকাল চারটায় গডউইনের বাড়ি ত্যাগ করেন। তারা কালাইসের উদ্দেশে দ্রুত ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ভবঘুরেদের মতো তারা ফ্রান্স ভ্রমণ করতে থাকেন। তাদের তখন খাবার ছিল কালো রুটি আর সাধারণ বাস ভাড়া। বাস ভাড়া না জুটলে হাইওয়ের ধার বেয়ে হাঁটতে থাকেন। এ সময় তারা সব রকম দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে থাকেন।

এরূপ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কেউ কারো প্রতি তখন বা পরবর্তী সময়ে এ সমস্ত বিষয়ে দোষারোপ করতে দেখা যায়নি। এভাবে তারা অবিচ্ছিন্ন ছিলেন।

পরবর্তীতে হ্যারিয়েটকে শেলি কিছু ভাতার ব্যবস্থা করেন। তখন হ্যারিয়েট বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি জলে ডুবে আত্মহত্যা করেন। হয়ত শেলির সঙ্গে বিচ্ছেদ যন্ত্রণায় তিনি বিষণ্নতার শিকার হন বলে কেউ কেউ মনে করেন। অপরদিকে ফ্যানি ইমলেও আত্মহত্যা করেন। বলা হয়ে থাকে তিনিও শেলিকে ভালোবাসতেন কিন্তু শেলি তাকে গ্রহণ করেননি। এ জন্য তিনি আত্মহত্যা করেন। কিন্তু এ যুক্তি পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়নি।

শেলি ও মেরির আত্মিক সুখ প্রকৃতপক্ষে কোনো বাধা-বিঘ্ন দ্বারা প্রভাবিত বা বিনষ্ট হয়নি। ইটালি ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণকালে তাদের অনেক স্বদেশীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বিশেষত ল্যানডর, লেহান্ট ও বায়রনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটায় মেরি অভিভূত হন। এ সময় তাদের কন্যা সন্তান আলেগ্রা জন্মগ্রহণ করে।

শেলি ও মেরির মিলন সুখের ছিল। উভয়ে উভয়ের প্রতি বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের এ প্রেমময় জীবন কবির কবিতার চেয়েও শ্রেষ্ঠ ছিল। শেলি এ বিবাহের মাধ্যমে জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পান। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে কবি জলে ডুবে মৃত্যুবরণ করলে তার শেষকৃত্যে লর্ড বায়রন ও মেরি উপস্থিত ছিলেন।

অমিত সম্ভাবনা, বিরল প্রতিভা ও বিস্ময়কর মেধার অধিকারী শেলি হয়ত কবি হিসেবে পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক প্রবঞ্চনা, প্রতিকূলতা ও হতাশার শিকার হয়েছেন। এত বাধা বিঘ্ন ও প্রতিকূলতা  সত্ত্বেও তিনি তার জীবনের স্বল্প পরিসরে ইংরেজি সাহিত্যে যা দিয়ে গেছেন তা রীতিমত অবিস্মরণীয়, অতুলনীয় ও দুর্লভ।
প্রেমিক ও স্বামী হিসেবে শেলির নিকট থেকে মেরি গডউইনের আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার ছিল না।

লেখক: গবেষক ও অনুবাদক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়