ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিশ্ববরেণ্য কবিদের প্রেমের কবিতা: শেষ পর্ব

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্ববরেণ্য কবিদের প্রেমের কবিতা: শেষ পর্ব

 

এলেন গিন্সবার্গ

 

আয়নায়, আমার নিজের ঠোঁটে চুমু খাই,

বলি, ‘আমি আমার আমিকেই ভালোবাসি,

আমি তোমাকে ভালোবাসি যে কারো চেয়ে বেশি।’

 

আরউইন এলেন গিন্সবার্গ আধুনিক মার্কিন কবিতায় আলোচিত এক নাম। পঞ্চাশের দশকে বিট প্রজন্মের কবিদের অন্যতম গুরু গিন্সবার্গ পরবর্তী সময়ে একাধিক কাব্য ধারার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রভাবিত করেন বহু কবিকে। সমরবিদ্যা, অর্থনীতি, বস্তুবাদ, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। অন্যদিকে প্রাচ্য দেশীয় ধর্মতত্ত্ব, সমকামিতা ও নানা ধরণের মাদকে আসক্ত ছিলেন তিনি। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘হাউল’ একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের বয়ান। যে সময়ে তিনি সমকামিতা নিয়ে কথা বলেন, তখন আমেরিকাতেও এ বিষয়ে কথা বলা রীতিমতো অপরাধ ছিলো।

 

চালার্স বুকোস্কি

 

পোশাক খুলো না আমার ভালোবাসা

তুমি হয়তো একটা ম্যানিকুইন পেয়ে যাবে:

ম্যানিকুইনের পোশাক খুলো না

তুমি হয়তো

ভালোবাসা পেয়ে যাবে।

 

লস এঞ্জেলেসে বসবাস করা বুকোস্কি’র লেখা একই সঙ্গে যেমন আদৃত, আলোচিত, তেমনি সমালোচিতও। তার লেখা এবং চালচলন- উভয়ই ছিলো ভীষণ বিতর্কের। বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, প্রকাশ্যে মদ্য ও ধূমপান, সাহসী রচনা শৈলী, খিস্তি-খেউড়ের ব্যবহার তাকে বরাবর আলোচনায় রেখেছে। ছয়টি উপন্যাস, কয়েকশ গল্প এবং কয়েক হাজার কবিতার জনক বুকোস্কির প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬০-এর অধিক। লস এঞ্জেলেসের আন্ডারগ্রাউন্ড নিউজপেপার ওপেন সিটিতে তিনি দীর্ঘদিন ‘নোটস অফ আ ডার্টি ওল্ডম্যান’ নামে কলাম লিখেছেন। এই সব কলাম লেখার কারণে এফবিআই-এর মতো সংস্থা তার উপর নজরদারি জারি রেখেছিলো। জনপ্রিয় এই কবি এলোমেলো জীবনযাপন করতেন। এক অর্থে তিনি খুবই সাধারণ হয়ে থাকতেন। টাইম পত্রিকা তাকে ‘মার্কিন সাধারণ জীবনের কবি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

কার্ল স্যান্ডবার্গ

 

হয়তো আমাকে বিশ্বাস করে ও, হয়তো করে না।

হয়তো আমি ওকে বিয়ে করতে পারি, হয়তো নয়।

 

হয়তো তৃণভূমির হাওয়া,

হয়তো সমুদ্রের হাওয়া, হয়তো,

কেউ একজন, কোনখানে, হয়তো বলতে পারে।

আমি ওর কাঁধে মাথা রাখবো

আর যখন সে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে আমি হ্যাঁ বলবো,

হয়তো।

 

আমেরিকান কবি, লেখক ও সম্পাদক কার্ল স্যান্ডবার্গ তিনবার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন। দুইবার কবিতার জন্য এবং একবার আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনী লেখার জন্য। তার সময়ের অন্যতম সাহিত্য প্রতিভা হিসেবে তিনি গণ্য হতেন। ‘শিকাগো পোয়েম’, ‘কর্নহাস্কার’, ‘স্মোক এ- স্টিল’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ১৯৬৭ সালে তার মৃত্যুতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিনডন বি জনসন বলেছিলেন, ‘তিনিই ছিলেন আমেরিকা।’

 

রেনে মারিয়া রিলকা

 

আবার এবং আবার, যাহোক আমরা জানি

ভালোবাসার ভূমিচিত্র

আর ওইখানে ছোট্ট গির্জার আঙিনা, তার

বেদনাবিধুর নামের সাথে,

আর তীব্র নীরব অতলের মাঝে যেখানে

অন্যরা

পড়ে যায়: আবার এবং আবার আমরা দুজন হেঁটে আসি

একসাথে

প্রাচীন বৃক্ষের নিচে, শুয়ে থাকি আবার এবং

আবার

ফুলেদের মাঝে, আকাশের সাথে মুখোমুখি হয়ে।

 

রেনে কার্ল উইলহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকাকে আদতে বিশ্বের কবিতাপ্রেমীরা ‘রেনে মারিয়া রিলকা’ নামেই চেনেন। অস্ট্রিয়ার বোহেমিয়ান এই কবি ও ঔপন্যাসিক জার্মান ভাষার একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবেই পরিচিত। তিনি গীতিময় গদ্য ও গভীর মরমী কাব্যের জন্যে প্রশংসিত।

 

গার্টুড স্টাইন

 

খুব দারুণ আমার ভ্যালেন্টাইন

খুব দারুণ আর একান্ত

খুব একান্ত আমার ভ্যালেন্টাইন খুব একান্ত আর খুব সুন্দর।

 

খুব সুন্দর আমার ভ্যালেন্টাইন আর একান্ত, খুব সুন্দর খুব একান্ত

আর এ আমারই ভ্যালেন্টাইন।

 

গার্টুন্ড স্টাইন আমেরিকান কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং শিল্পকর্ম সংগ্রাহক। ১৯০৩ সাল থেকে তিনি অবশ্য আমৃত্যু ফ্রান্সেই বসবাস করেছেন। ইহুদি এই লেখিকার জীবনে প্যারিসের সম্পর্কই বেশি। প্যারিসে তিনি একটি শিল্প-আড্ডা (স্যালুন) চালাতেন যেখানে পাবলো পিকাসো, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, এফ. স্কট ফিটজারেল্ড, সিনক্লেয়ার লুইস, এজরা পাউন্ড, অঁরি মাতিসের মতো ব্যক্তিরা নিয়মিত আসতেন। স্টাইন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।

 

উমবার্তো সাবা

 

তোমার সান্নিধ্যে যখন গেলাম আমি বললাম বিদায়, ভালোবাসা,

যেহেতু এই বয়স আর এই ধূসরতাই আমার কাজে লাগে শুধু।

সেখানে ছিলো পৃথিবীর ছায়া এবং সূর্যের এবং, ওহ, এক হৃদয়হীন

বালকের হৃদয় ছিলো তোমার ভেতর।

 

আধুনিক ইতালির কাব্যজগতে ইউজিনো মন্তালো এবং গুইসেপে উনগারেত্তির মতো উমবার্তো সাবা অনিবার্য নাম। ১৯৫৭ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে তার খ্যাতি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। মন্তালে, উনগারেত্তি এবং পাভেজের কবিতা থেকে ব্যক্তি আমি বাদ পড়েছে, অন্যদিকে উমবার্তো সদাই আমি সচেতন কবি।

 

ফার্নান্দো পেসোয়া

 

ভালোবাসা অপরিহার্য।

যৌনতা, অবিমিশ্র দুর্ঘটনা

হতে পারে সমান

অথবা আলাদা।

মানুষ তো পশু নয় 

মেধাবী দেহ,

যদিও মাঝে মাঝে খারাপ।

 

পর্তুগিজ কাব্যজগতে ফার্নান্দো এন্তোনিয়ো নগুয়েইরা পেসোয়া এক বিস্ময়কর প্রতিভা। একাধারে কবি, লেখক, সমালোচক, অনুবাদক, প্রকাশক ও দার্শনিক পেসোয়া বিশ শতকের অন্যতম সেরা কবিদের একজন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। পর্তুগিজ ছাড়াও তিনি ফরাসী ও ইংরেজিতে লেখালেখি করেছেন। গার্ডিয়ান পত্রিকার বিশ্বসেরা শত বইয়ের তালিকায় তার ‘অশান্তির কবিতা’ ঠাঁই পেয়েছে। নিজের নাম ছাড়াও ছদ্মনামে তার অসংখ্য কবিতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়