ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আসতে পারব না’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘যতদিন ইচ্ছা সাজা দিন, আসতে পারব না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আমাকে সাজা দেওয়ার জন্য এখানে আদালত বসানো হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার নেই। ইচ্ছামতো বিচার হচ্ছে। তাছাড়া আমি অসুস্থ, বারবার এখানে আসতে পারব না। আপনাদের যা মন চায়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন।

বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘আমার বাম হাতে সমস্যা, নাড়াতে পারি না। পায়ে সমস্যা, পা ফুলে গেছে। দাঁড়াতে পারি না। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। এখানে ডাক্তারের রিপোর্ট আছে, দেখলে বুঝতে পারবেন আমি কতটা অসুস্থ।’

মামলার শুনানির আগের দিন আদালত স্থানান্তর করতে গেজেট জারি করায় ক্ষোভ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই মামলায় শুনানির জন্য আজকের দিন তো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু একদিন আগে তড়িঘড়ি করে আদালত স্থানান্তর করে গেজেট দেওয়া হয়েছে। আমার সিনিয়র আইনজীবীরা এখানে আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে সাজা দেওয়ার জন্য এখানে আদালত বসানো হয়েছে। ন্যায়বিচার বলে কিছু নাই। অবিচার হচ্ছে। কথা বলা যায় না। আপনার যা খুশি সাজা দিয়ে দেন।’

এর আগে এদিন বেলা সোয়া ১২টার কিছু পরে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। আর বেলা ১১টা ৭মিনিটে বিচারক আদালতে উপস্থিত হন। এর আগে বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ার বসিয়ে কয়েকজন নারী কারারক্ষী তাকে আদালতে নিয়ে আসেন। তার পরনে ছিল হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি, চোখে কালো চশমা। হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় তার পায়ের ওপরের অংশ থেকে সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল।

আদালতে বসার এজলাসের সামনে তার জন্য একটি চেয়ার ও ছোট একটি টেবিল রাখা হয়। টেবিলের ওপর একটি টিস্যু বক্স ও পানির বোতল রাখা ছিল। কিন্তু মামলার বিচারকাজ চলাকালে পুরোটা সময় তিনি হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন। আর তার পাশে গৃহকর্মী ফাতেমা পানির বোতল ও একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এদিন শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজ মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত আদালতে হাজির করা যায়নি। তার অসুস্থতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনটি যথাযথভাবে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে আইনজীবীদের অবহিত করেছি।

এমনকি বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা-সংলগ্ন অস্থায়ী আদালত যেখানে বসত সেখানেও তা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি আদালতের কার্যক্রম শুরুর আরজি জানান। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সহযোগিতা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। 

এরপর বিচারক আসামি জিয়াউল হক মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান, তাদের আইনজীবীরা কোথায়? তারা সে বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেন। এ সময় বিচারক তাদের আইনজীবীরা যেন আদালতে আসে এজন্য যোগাযোগ করতে বলেন। এজন্য বিচারক একঘণ্টা আদালত মুলতবি রাখতে চান।

এ সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘আমি এখানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে এসেছি। খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করেন এমন কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে আদালত বসবেন এ ধরনের প্রজ্ঞাপন গত রাতে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটা যথাযথভাবে আসামিপক্ষকে জানানো হয়নি। তাই আদালতকে সার্বিক বিবেচনা করে সুবিধাজনক ও সন্তোষজনক একটা নতুন তারিখ ধার্য করতে অনুরোধ জানান তিনি।

এ সময় বিচারক বলেন, আজ তো মামলার ধার্য তারিখ। আসামিদের পক্ষে তো পিটিশন দিতে হবে। বিচারক গোলাম মোস্তাফা খানকে আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ কররা পরামর্শ দেন।

তখন গোলাম মোস্তফা খান বলেন, আমরা এখানে মোবাইল নিয়ে আসতে পারিনি। কারো সাথে যোগাযোগ নেই। আজ মামলা চালানো সমীচীন হবে না জানিয়ে একটা তারিখ সন্তোষজনক তারিখ দিতে বলেন তিনি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করলাম। এ সময় তিনি গোলাম মোস্তাফা খানের আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জামিনের পিটিশন জমা দিতে বলেন।

বেলা ১২ টা ৩৯ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়।

আদালত থেকে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এতো ব্যস্ত করে আমাকে আনা হল। আমার কোনো সিনিয়র আইনজীবী আদালতে ছিল না। তাদের যথাযথভাবে নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর তিনি তার অসুস্থতার কথা আবারও সাংবাদিকদের জানান। বেলা ১২টা ৪০মিনিটের দিকে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি অব্যাহত রয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকি আছে।

এদিকে একই বিচারক গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠান। তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। এরপর থেকে তাকে আর আদালতে হাজির করা হয়নি।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।

মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়