ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চন্দ্রাবতী: বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি

পূরবী বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চন্দ্রাবতী: বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি

চন্দ্রাবতী: আবদুস শাকুর শাহ, অ্যাক্রিলিক অন ক্যানভাস

|| পূরবী বসু ||
বাংলা ভাষার তথা সমগ্র বাংলার আদি নারী কবি বলতে আজো খনা, রামী, মাধবী ও চন্দ্রাবতীকে বোঝালেও কেবল বাংলাদেশ বা পূর্ববাংলার প্রথম নারী কবি কে? এ প্রশ্ন করলে এককভাবে এবং অত্যন্ত পরিষ্কার ও দ্বিধাহীনভাবে একজন নারীকে শনাক্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি হলেন কিশোরগঞ্জের চন্দ্রাবতী। অনেকের ধারণা, বাংলা সাহিত্যেরই প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী। কিন্তু নানা সূত্রমতে এই তথ্যটি পুরোপুরি সঠিক নয়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি খনা, দ্বিতীয় নারী কবি রামী বা রামী রজকিনী, বিখ্যাত কবি চণ্ডীদাস যার প্রেমে উতলা হয়ে জগৎ-সংসার ভুলে গিয়েছিলেন, তৃতীয় নারী কবি শ্রী চৈতন্যের সমসাময়িক কবি মাধবী এবং চতুর্থ কবি চন্দ্রাবতী।
বাংলার প্রথম নারী কবি বলে খ্যাত খনার জন্ম ও কর্মবৃত্তান্ত নিয়ে, তার স্থান-কাল-পাত্র নিয়ে এতো বেশি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে যে, আজকাল অনেক গবেষক সন্দেহ পোষণ করেন খনার বচনের রচয়িতা খনা নামের কোনো বঙ্গ ললনা প্রকৃত অর্থেই ছিলেন কিনা, নাকি লোকসমাজের সম্মিলিত কণ্ঠ-ই খনা নামে আবির্ভূত হয়েছিল। ওদিকে নিরক্ষর রামী (পুরো নাম সম্ভবত রামমণি) চতুর্দশ শতাব্দীর কবি বলে পরিচিত। যেহেতু চণ্ডীদাসের প্রেমিকা রামী নিরক্ষর ছিলেন, তিনি হয়তো মুখে মুখে কবিতা রচনা করতেন যা অন্যেরা পরে বাংলা অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। কিন্তু তার একটি বা দু’টি মাত্র কবিতা যা পাওয়া যায়, তার ভাষা মোটেও চতুর্দশ শতাব্দীর নয়। এই ভাষা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকের। ওদিকে পঞ্চদশ শতাব্দীর নারী কবি মাধবী দাসী সম্পর্কেও বেশি কিছু জানা যায় না। শোনা যায়, তিনি শ্রী চৈতন্যের কাছে পুরীতে দীক্ষা নিয়েছিলেন ১৫০৯ সালে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো শ্রী চৈতন্য পুরীতে প্রথম গিয়েছিলেন ১৫০৯ সালের পরে। এছাড়া কথিত নারী কবি মাধবী প্রকৃতপক্ষে নারী ছিলেন কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করে গেছেন স্বয়ং সুকুমার সেন ও বর্তমান কালের সাহিত্য আলোচক সুমিতা চক্রবর্তী। সব কিছু মিলিয়ে নির্দ্বিধায় বলা চলে, প্রাচীনতম চারজন বাঙালি নারী কবির মধ্যে বাংলার যে নারী কবির অস্তিত্ব ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক বা মতভেদ নেই, তিনি হলেন ষোড়শ শতাব্দীর বাংলাদেশের কবি চন্দ্রাবতী। সর্বপ্রথম নারী কবি হিসেবে চন্দ্রাবতীর যে সম্মান, তা বাংলায় খনা, রামী ও মাধবীর জন্যে যদি পুরোপুরি নাও জোটে, বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি হিসেবে চন্দ্রাবতীর স্থান সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত এবং পূর্ব বাংলার বৃষ্টি-ভেজা উর্বর ভূমিতে তা বহুকাল ধরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। ষোড়শ শতাব্দী বা তার আগে চন্দ্রাবতীর মতো উঁচু মাপের নারী কবির অস্তিত্ব ছিল না।
ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাসের একমাত্র আদরের কন্যা চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০)। চন্দ্রাবতীর মায়ের নাম সুলোচনা। বিখ্যাত কবি বাবা দ্বিজ বংশীদাস ‘পদ্মপুরাণ’ এবং ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা। তিনি ভাসান গানের দল নিয়ে গান গেয়ে বেড়াতেন। সুকুমার সেন তার বাঙ্গালা সাহিত্যের কথায় লিখেছেন: ‘পূর্ববঙ্গে রচিত বিস্তর মনসামঙ্গল কাব্য পাওয়া গিয়াছে। সে সবগুলির মধ্যে বংশীবদনের কাব্যই শ্রেষ্ঠ। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হইয়াও বংশীবদন কোথাও অযথা পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করিতে চেষ্টা করেন নাই। অপরদিকে, ইহার কাব্য গ্রাম্যতা দোষ হইতে একেবারে মুক্ত।’ উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার কবিত্ব শক্তি লাভ করেছিলেন চন্দ্রাবতী।

দ্বিজ বংশীদাস কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা ‘মনসামঙ্গল’ ১৫৭৫ সালের দিকে শেষ হয়। কথিত আছে যে, মনসামঙ্গল রচনায় বংশীবদন চন্দ্রাবতীর সাহায্য পেয়েছিলেন। এ সময় চন্দ্রাবতীর বয়স কমপক্ষে পঁচিশ ছিল। কুলকুল করে বয়ে যাওয়া টলটলে স্বচ্ছ জলের ফুলেশ্বরীর তীরে অপূর্ব শ্যামল নিসর্গের কোলে বেড়ে ওঠা চন্দ্রাবতী কেবল পরমা সুন্দরীই ছিলেন না, অসাধারণ প্রতিভাময়ী এক কবি ছিলেন। অত্যন্ত স্পর্শকাতর রোমান্টিক মনের অধিকারী ছিলেন তিনি।
তার রচনাগুলোর মধ্যে মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা ও রামায়ণ কথা অন্যতম। রামায়ণ কথা যা তিনি পিতার পরামর্শে বাংলাতে লিখতে শুরু করেছিলেন। এটি মূল রামায়ণের অনুবাদ নয়। বরং নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এই রামায়ণে সীতার প্রতি অবিচার এবং তার মর্মবেদনা অত্যন্ত দরদের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে। চন্দ্রাবতীর স্বহস্তে লিখিত রামায়ণের পাণ্ডুলিপিটি এখনো সযত্নে রক্ষিত আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দ্বিজ বংশীদাসের মনসার ভাসান গান চন্দ্রাবতীকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক স্বপ্নের কল্পনা-সাগরে। পিতার সঙ্গে চন্দ্রাবতী রচনা করেন মনসার ভাসান গান। ফুলেশ্বরী নদীর তীরে চোখ-জুড়ানো, শান্ত নিরিবিলি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিল-ঝিল, নদীনালা, পুকুর-দিঘি আর প্রকাণ্ড বৃক্ষের শ্যামল ছায়ার সবুজ শান্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠেন চন্দ্রাবতী। প্রেম বিরহগাঁথা, বৈষম্য, অবিচার চন্দ্রাবতীর গীতিকা-সাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। সাড়ে চারশ বছর আগে রচিত তার পালাগান আজো বিভিন্ন আসরে শোনা যায়।
চন্দ্রাবতীর জীবনের ইতিহাসটি বড় করুণ। বাল্যকালে চন্দ্রাবতীর বন্ধু ও খেলার সাথী ছিলেন জয়ানন্দ নামে এক অনাথ বালক। জয়ানন্দের বাড়ি সুন্ধা গ্রামে। জয়ানন্দ তার মাতুলগৃহে পালিত। দ্বিজ বংশীদাসের অনেক রচনায় চন্দ্রাবতী ও জয়ানন্দ, দু’জনেরই রচিত ছোট ছোট অনেক পদ রয়েছে।
 


চন্দ্রাবতী বাল্যকাল থেকেই বাবার দেখাদেখি কবিতা লেখা শুরু করেন। গানও লিখতেন। শুধু লিখতেনই না, নিজেও গাইতেন। এত সব গুণের কারণে সম্ভ্রান্ত পরিবারের বহু ব্যক্তি চন্দ্রাবতীকে বিয়ে করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু চন্দ্রাবতী সেই ছেলেবেলাতেই মন দিয়ে বসে আছেন জয়ানন্দকে। তাই কারো দিকে আর নজর নেই তার। জয়ানন্দ ছিলেন চন্দ্রাবতীর জনম জনমের সাথী। বাল্যকাল থেকেই পরিচয় তাদের। দু’জনেই একসঙ্গে  পড়ালেখা করতেন, খেলা করতেন। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে প্রেমের বন্ধনে বাঁধা পড়েছেন দু’জনে। কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে তাদের পারস্পরিক অনুভব। দু’জন দু’জনকে কবিতা লিখে ভালোবাসা জানাতেন। আর এভাবেই এক সময় দ্বিজ বংশীদাসের নিজস্ব বিষয়ের বাইরেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা শুরু করেন তারা। কবি দ্বিজ বংশীর পদ্মপুরাণে চন্দ্রাবতী এবং জয়ানন্দ, দু’জনেরই কবিতা রয়েছে। কৈশোর উত্তীর্ণ হলে দু’জনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন বলে স্থির করেন; শুধু তারা দু’জনে নন, পরিবারবর্গও।
জয়ানন্দকে ভালোবেসে তার কাছে হৃদয় সঁপে দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ছিলেন চন্দ্রাবতী। তিনি নিজের মতো করেই জয়ানন্দকে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু অন্যদিকে জয়ানন্দ যত-ই ভালোবাসুক চন্দ্রাবতীকে, একসঙ্গে বসে যতই কবিতা বা ছড়া বাঁধুক, দ্বিজ বংশীদাসকে তার মঙ্গল কাব্য রচনায় চন্দ্রাবতীর মতো যত-ই প্রেরণা যোগাক ছোটখাটো পঙ্‌ক্তি দিয়ে সাহায্য করুক, তার হৃদয়, চোখ, কান সর্বদাই ধেয়ে বেড়াতো অন্য দিকে, তার চারপাশে। ফলে এক সময় গ্রামের আরেক সুন্দরী আসমানীকে চোখে ধরে জয়ানন্দের। পত্রমিতালী করে তার সঙ্গে। গান বাঁধে তার রূপের বর্ণনা করে।
আসমানী (ডাক নাম কমলা) ছিলেন স্থানীয় মুসলমান সমাজনেতা বা কাজীর মেয়ে। আসমানীর অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে জয়ানন্দ আসমানীকে একাধিক প্রেমপত্র লেখেন। এক সময় এই ত্রিকোণ প্রেমের ফলাফল হয়ে ওঠে মারাত্মক। জয়ানন্দের সাথে চন্দ্রাবতীর প্রেমের কথা ও প্রস্তাবিত বিবাহের কথা জানা সত্ত্বেও আসমানী তার পিতাকে জানান তিনি জয়ানন্দকেই বিবাহ করতে চান। এক সূত্র অনুযায়ী, কাজী জয়ানন্দকে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আসমানীর সঙ্গে তার বিবাহ দেন। ভিন্ন মত অনুযায়ী জয়ানন্দ নিজের ইচ্ছেতেই আসমানীর রূপে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিয়ে তাকে বিয়ে করেন, এবং সেটা করেন সেই সন্ধ্যাতেই যে সন্ধ্যায় তার বিয়ের কথা ছিল চন্দ্রাবতীর সঙ্গে, যখন বধূসাজে সজ্জিত হয়ে চন্দ্রাবতী তার আগমনের অপেক্ষায় কাল গুণছিল তার পিত্রালয়ে বসে। আর তখনই সংবাদ পান চন্দ্রাবতী, জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র বিবাহ করেছেন।
প্রথমে তিনি বিশ্বাস করেননি। তারপর উদ্ভাসিত সত্যের নিষ্ঠুর ও তীব্র আঘাতে অপমানিত হয়ে জয়ানন্দের প্রতি চন্দ্রাবতীর একনিষ্ঠ ভালোবাসা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। চন্দ্রাবতীর কোমল হৃদয় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। লুণ্ঠিত হয় তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। এরপর শুরু হয় চন্দ্রাবতীর বিরহবিধুর জীবন। তিনি পিতা দ্বিজ বংশীদাসের কাছে দুটি প্রার্থনা করেন: এক ফুলেশ্বরী নদীর তীরে তার আরাধনার জন্যে একটি শিব মন্দির স্থাপন করা হোক। অন্যটি, তার চিরকুমারী থাকার বাসনা। তিনি পিতার কাছে অনুমতি নেন যে সারা জীবন অবিবাহিতা থেকে শিবের সাধনা করবেন। পিতা কন্যার অনুরোধ মতো দুটি ইচ্ছাই পূর্ণ করেন:

চন্দ্রাবতী বলে ‘পিতা সম বাক্য ধর।
জন্মে না করিব বিয়া রইব আইবর॥
শিবপূজা করি আমি শিবপদে মতি।
দুঃখিনীর কথা রাখ কর অনুমতি’॥
অনুমতি দিয়া পিতা কয় কন্যার স্থানে।
‘শিবপূজা কর আর লেখ রামায়ণে’॥

ফুলেশ্বরী নদীর তীরে পিতা তার জন্য একটি শিব মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন। মন্দির স্থাপনের পরে শিবপূজা আর বাংলায় রামায়ণ লেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন চন্দ্রাবতী। সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগ চন্দ্রাবতীর কৈশোরকাল থেকেই ছিল। তিনি বাকী জীবন শিবের উপাসনা ও সাহিত্যচর্চা করে কাটিয়ে দেবেন বলে স্থির করেন।
এদিকে বেশ কিছুকাল পরে জয়ানন্দ বুঝতে পারেন যে, আসমানীর প্রতি তার টানটা ছিল মোহ মাত্র। আসমানীর অসামান্য রূপেই কেবল আকর্ষিত হয়েছিলেন জয়ানন্দ। মনের থেকে তিনি চন্দ্রাবতীকেই প্রকৃত ভালোবাসেন। জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর সঙ্গে কবিতা রচনার অভিজ্ঞতা ও গাছের ছায়ায় বসে কাব্যপাঠের আনন্দ ফিরে পেতে অস্থির হয়ে ওঠেন। স্থির করেন, চন্দ্রাবতীকে তার মনের কথা জানাবেন। বহুদিন আগে এক সন্ধ্যায় জয়ানন্দ ও চন্দ্রাবতীর বিচ্ছেদ হয়েছিল। তেমনি আরেক সন্ধ্যায় সেই বিচ্ছেদ মুছে গিয়ে মিলন হবে দু’জনার এই আশায় জয়ানন্দ রওনা হলেন পাটোয়ারী গ্রামে। জয়ানন্দ যখন গন্তব্যস্থলে পৌঁছলেন তখন সূর্য অস্ত গিয়েছে। দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ তখন। শিব মন্দিরের ভেতর দরজা বন্ধ করে সন্ধ্যারতি ও তপজপে নিমগ্ন ছিলেন চন্দ্রাবতী। জয়ানন্দ মন্দিরের দ্বারে এসে কয়েকবার ডাকলেন চন্দ্রাবতীকে। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় এবং একাগ্রমনে ধ্যানে নিমগ্ন থাকায় সেই শব্দ প্রবেশ করল না চন্দ্রাবতীর কানে। ব্যর্থ প্রেমিক জয়ানন্দ তখন টুকটুকে লাল রঙের সন্ধ্যামালতী ফুলের রস নিঙড়ে মন্দিরের প্রধান দরোজায় ছোট্ট একটি কবিতা লিখে চন্দ্রাবতীর কাছে আকুতি জানান তাদের আবাল্যকালীন প্রেমের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ক্ষমা করে পুনরায় গ্রহণ করার জন্যে:

‘শৈশব কালের সঙ্গি তুমি যৌবনকালের সাথী।
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী’॥

কিন্তু অভিমানে, অপমানে জর্জরিত চন্দ্রাবতী মুখ ফিরিয়ে দেখেন না প্রাক্তন প্রেমিককে। মন্দিরে দরোজা না খুলে একমনে শিবের ধ্যান করতে থাকেন। সারা না পেয়ে জয়ানন্দ এই পরিচিত জগতকে চিরবিদায় জানিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। না, অন্য কোথাও আর যান না জয়ানন্দ। মন্দিরের পার্শ্ববর্তী ফুলেশ্বরী নদীতে ডুবেই আত্মহত্যা করেন তিনি।
 


আরেক ভাষ্য মতে, চন্দ্রাবতীকে এক নজর দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন জয়ানন্দ। পিতার অনুমতি না থাকায় চন্দ্রাবতী জয়ানন্দকে সাক্ষাৎ দিতে পারেননি। এই দেখা না করা বা পিতার সম্মতি না পাওয়া কি চন্দ্রাবতীর আত্মসম্মানে আঘাত লাগারই বহিঃপ্রকাশ? নাকি মনোকষ্ট, অভিমান? নাকি জয়ানন্দ মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করায় তখনকার সমাজে তাকে ফিরিয়ে নেবার উপায়হীনতা?
দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে ক্লান্ত জয়ানন্দের প্রস্থানের অনেক পরে মন্দির থেকে বেরিয়ে চন্দ্রাবতী কলসী কাঁখে জল আনতে যান পার্শ্ববর্তী ফুলেশ্বরী (স্থানীয় নাম ফুলিয়া) নদীতে৷ ঘাটে পৌঁছেই চন্দ্রাবতী বুঝলেন সব শেষ হয়ে গেছে। ফুলেশ্বরীর জলে নিজেকে সঁপে দিয়ে প্রাণত্যাগ করেছেন জয়ানন্দ। তার প্রাণহীন দেহ ভাসছে ফুলেশ্বরীর জলে। এই অবস্থায় নিজের আবেগ, নিজের অন্তহীন বেদনা ধরে রাখতে পারলেন না চন্দ্রাবতী। তিনিও প্রেমিকের সাথে পরলোকে চিরমিলনের আশায় ফুলেশ্বরীর জলে ডুবে প্রাণত্যাগ করেন। অবশ্য অন্যরা বলেন, জয়ানন্দ মারা যাবার পরেও বেশ কিছুদিন বেঁচেছিলেন চন্দ্রাবতী এবং তার স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছিল পঞ্চাশ বছর বয়সে। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বংশীদাস-কন্যা চন্দ্রাবতী।
ফলে দেখাই যাচ্ছে চন্দ্রাবতীর মৃত্যু নিয়ে সবাই একমত নন। নয়ানচাঁদ নিজেও চন্দ্রাবতী পালাগানে চন্দ্রাবতীর মৃত্যু নিয়ে কিছু বলেন নি। কারো কারো মতে নদীর ঘাটে জলে মৃত অবস্থায় জয়ানন্দের লাশ ভাসতে দেখে তীব্র অনুশোচনায় চন্দ্রাবতীও ফুলেশ্বরী নদীর জলে ঝাঁপিয়ে জয়ানন্দের অনুগামী হন, তবে সঙ্গে সঙ্গে নয়, কিছু পরে। আবার কারো মতে, জয়ানন্দের জলে ডুবে আত্মহত্যার কিছুদিন পরপরই মর্মান্তিক আঘাত প্রাপ্ত শোকাবিভূত চন্দ্রাবতী স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ-গীতিকার ভূমিকায় লিখেছেন: ‘প্রবাদ এই যে, প্রেমাহতা চন্দ্রা জয়চন্দ্রের শিব দর্শন করার অল্পকাল পরেই হৃদরোগে লীলা সংবরণ করেন।’
ব্রজেন্দ্রকুমার দে তার মঞ্চনাটক ‘কবি চন্দ্রাবতী’-তে দেখিয়েছেন যে, শোক এবং অপমান থেকে বাঁচার জন্য চন্দ্রাবতী নিজেই ফুলেশ্বরীর বুকে ঝঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত যেভাবেই তার মৃত্যু হোক না কেন, মানসিকভাবে গভীর আঘাত পেয়ে তীব্র মনোযাতনায় যে এই অসামান্য প্রতিভাবান বাংলাদেশের প্রথম নারী কবির মৃত্যু হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার মতো দুঃখের জীবন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। নিজেকে ধূপের মতো পুড়িয়ে তিনি যে কাব্যগাথা, অসাধারণ পালাগান পরিবেশন করে গিয়েছেন তার খবর শহুরে মানুষেরা ভালোমতো না জানলেও গ্রামের মানুষ তা ভোলে নি। তাদের মুখে মুখে তার জীবনীভিত্তিক পালাগান গীত ও অভিনীত হয়ে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত। আর এভাবেই দুঃখিনী কবি চন্দ্রাবতী আজো বেঁচে আছেন বাংলাদেশের পল্লীহৃদয়ে বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে।
১৯১৬ সালে ময়মনসিংহের কবি চন্দ্রকুমার দে প্রথম সেই এলাকার প্রচলিত পালাগান বা গাথাগুলি সংগ্রহ করেছিলেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের উৎসাহে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ (১৯২৩) এবং ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ (১৯২৩-১৯৩২) নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬ নাগাদ ক্ষিতীশ মৌলিক (প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা) এই ময়মনসিংহের পালাগুলির আরও একটি সম্পাদিত রূপ প্রকাশ করেন। প্রকাশিত হবার পরেই এই গাথাগুলি রসিক সমাজে যথেষ্ট সমাদর লাভ করে। কাব্যগুণ, সহজ সরলতা, বাংলার পল্লীজীবনের রূপ, রস, গন্ধে সমৃদ্ধ এই সকল পালা, বাংলার লোক সাহিত্যের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তবে এগুলো আসলেই কত পুরাতন, সেই সম্পর্কে পণ্ডিতেরা এখনও সহমত পোষণ করতে পারেন নি। লোক সাহিত্য বলা হলেও এই পালাগুলি বিশেষ বিশেষ কবিদের লিখিত রচনা। তাই এগুলি কোনো সমাজের সাধারণ সম্পত্তি নয়। লোকমুখে ফিরে ফিরে, সংগ্রাহক, সম্পাদক এবং প্রকাশকদের হাত পড়ে যে এগুলি প্রাচীনতা ও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনেকটাই হারিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: ‘বাংলা প্রাচীন সাহিত্যে মঙ্গলকাব্য প্রভৃতি কাব্যগুলি ধনীদের ফরমাসে ও খরচে খনন করা পুষ্করিণী; কিন্তু ময়মনসিংহ গীতিকা পল্লী হৃদয়ের গভীর স্তর থেকে স্বত উচ্ছ্বসিত উৎস, অকৃত্রিম বেদনার স্বচ্ছ ধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্ম-বিস্মৃত রসসৃষ্টি আর কখনো হয়নি।’
মৈমনসিংহ গীতিকাগুলিতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি সংস্কৃতিই দেখতে পাওয়া যায়। এদের বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য প্রধানত ধর্মাশ্রিত ও দেবদেবীকেন্দ্রিক হলেও মৈমনসিংহ গীতিকবিতার উপর ধর্মের প্রভাব খুবই অল্প। এগুলি অধিকাংশই প্রণয়মূলক। এদের মধ্যে ফুটে উঠেছে পূর্ববঙ্গের সহজ সরল পল্লী-জীবনের অপূর্ব আলেখ্য। এই পল্লী-জীবনের পটভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে নায়ক নায়িকাদের প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি, তাদের প্রেম ভালোবাসা-বিরহ। এছাড়া তখনকার পল্লীবাংলার দৈনন্দিন সমস্যা, গ্রামীণ জীবনের প্রকৃত অবস্থা এইসব গীতিকাব্যগুলির মধ্যেই আমরা পেয়েছি। ঘনঘন সংক্রামক ব্যাধির উৎপাত, বন্যা, ফসল বিনষ্ট, দুর্ভিক্ষ, অনাহার, বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন হিসেবে শেষ পর্যন্ত হালের গরু, জায়গা জমিন বিক্রি বা বন্ধক দেয়া, তাতেও না কুলালে অবশেষে দেশান্তরী হবার মতো ঘটনা চন্দ্রাবতী লিখে গেছেন তার মলুয়া ও কেনারাম দস্যু পালার ছত্রে ছত্রে। আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য এখানে, আর সেটা হলো কতো অনায়াসে একই কবিতায় হিন্দু ও মুসলমান সমাজে দৈনন্দিন ব্যবহৃত শব্দ পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন তিনি, একদিকে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা বলছেন, অন্যদিকে, দোয়া, পানি, ছাওয়াল-এর মতো শব্দ অতি স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে চন্দ্রাবতীর কাব্যে। মলুয়া পালা কবি চন্দ্রাবতীর একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। এটি লোককাহিনি। চন্দ্রাবতীর নিজের রচিত বিভিন্ন গীতিকবিতার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকগাথা হলো মলুয়া। পালাগানের বন্দনাটির একাংশ এরকম:

জল বন্দুম স্থল বন্দুম আকাশ পাতাল।
হর শিরে বন্দিয়া গাই কাল মহাকাল ॥
তারপরে বন্দিলাম শ্রীগুরু চরণ।
সবার চরণ বন্দিয়া জানাই নিবেদন ॥
চার কুণা পৃথিবী বন্দিয়া করিলাম ইতি।
সলাভ্য বন্দনা গীতি গায় চন্দ্রাবতী ॥

লক্ষণীয়, তখনো চন্দ্রাবতীর মতো শিক্ষিত, রুচিশীলা নারী যিনি নিজে কাব্য রচনা করেন, পৃথিবীকে গোলাকার না বলে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ‘চার কুণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
মলুয়ার পালার ‘জলপ্লাবন ও দুর্ভিক্ষ’ অধ্যায়ে তৎকালীন পল্লী-জীবনের দুর্দশা ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবন পরিপূর্ণভাবে প্রকৃতির খেয়ালখুশী মতো পরিচালিত হতো তখন। সংক্রামক ব্যাধি, বন্যা, ফসল বিনাশ, দুর্ভিক্ষ, মানুষের উপায়হীনতা জীবনের অবধারিত অংশ হয়ে গিয়েছিল। মলুয়া পালায় বন্যা ও দুর্ভিক্ষ কেমন করে পল্লী-জীবনের সকল আশাভরসা বিনাশ করে দুঃখে আর কষ্টে নিমজ্জিত করে দিত ব্যক্তি জীবন, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন চন্দ্রাবতী।
দস্যু কেনারামের পালাতেও ‘কেনারামের জন্ম ও নানা কষ্ট’ পরিচ্ছেদে ফুটে উঠেছে মানবিক দুর্ভোগের যাতনা। কবিতার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে এই সীমাহীন দারিদ্র্য ও কষ্টের ছবি প্রতিফলিত। গ্রামে মাতৃত্বজনিত কারণে অবেলায় মায়ের মৃত্যু, বন্ধ্যাত্বের জ্বালা ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে এই কাব্যে।
তার লেখা ‘রামায়ণ কথা’ একটি এমন রচনা যেখানে রামের গুণগানের বদলে সীতার দুঃখ দুর্দশাই তিনি বর্ণনা করেছেন। একজন নারীর দৃষ্টিতে এই মহাকাব্য রচনা স্বাভাবিকভাবেই পণ্ডিত সমাজে অবাঞ্ছিত বলেই তাকে দুর্বল ও অসমাপ্ত সাহিত্য আখ্যা দিয়ে গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছিল। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পাঠে বিস্ময়াভূত নবনিতা দেব সেন বলেছেন, এটি দুর্বল বা অসমাপ্ত কোনোটিই নয়। এটি একজন নারীর দ্বারা রচিত কাব্য যেখানে রামের গুণগান না করে তিনি সীতার দুঃখ ও দুর্দশার দিকটাই বেশি তুলে ধরেছিলেন যা তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধাচারণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। ফলে তিনি অন্য পালার জন্য খ্যাতি পেলেও রামায়ণ রচয়িতা হিসেবে গুরুত্ব পান নি।’
দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণের সাথে মেঘনাদবধের আশ্চর্য মিল খুঁজে পেয়েছেন। তার ধারণা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনার আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পড়েছেন এবং তারই প্রভাব পড়েছে মেঘনাদবধে। রামের বদলে রাবণকে বড় করে এঁকেছেন তিনি প্রথা ভেঙে, যেমনটি করেছিলেন চন্দ্রাবতী রামের বদলে সীতাকে দাঁড় করিয়ে। দীনেশচন্দ্র সেন পূর্ববঙ্গ গীতিকায় মন্তব্য করেন যে: ‘এই রামায়ণের অনেকাংশের সঙ্গে মেঘনাদবধ কাব্যের আশ্চর্য রকমের ঐক্য দৃষ্ট হয়, আমার ধারণা, মাইকেল নিশ্চয়ই চন্দ্রাবতীর রামায়ণ গান শুনিয়াছিলেন, এই গান পূর্ববঙ্গের বহুস্থানে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে।’
অন্যদিকে সুকুমার সেন এই মতের বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, ঘটনা উলটো। এই গাথাটি প্রাচীন হলেও এর সংগ্রাহক বা সংস্কর্ত্তা মাইকেল পরবর্তী যুগের এবং এর কিছু অংশ মেঘনাদবধ কাব্য থেকে রূপান্তরিত। অথচ দীনেশচন্দ্র সেন একাধিক স্থানে লিখেছেন, ‘আমার ধারণা, মাইকেল নিশ্চয়ই চন্দ্রাবতীর গান শুনিয়াছেন।’ বা ‘আমার বিশ্বাস মাইকেল মৈমনসিংহের কবির রামায়ণটি কোন স্থানে শুনিয়া মহিলা কবির দ্বারা প্রভাবান্বিত হইয়াছিলেন।’
চন্দ্রাবতীর গান ময়মনসিংহে সুপরিচিত এবং সুপ্রচারিত। চন্দ্রকুমার দে বলেছেন, ‘শ্রাবণের মেঘভরা আকাশতলে ভরা নদীতে যখন পাইকগণ সাঁজের নৌকা সারি দিয়া বাহিয়া যায়, তখন শুনি সেই চন্দ্রাবতীর গান, বিবাহে কুলকামিনীগণ নব বর-বধূকে স্নান করাইতে জলভরণে যাইতেছে, সেই চন্দ্রাবতীর গান, তারপর স্নানের সংগীত, ক্ষৌরকার বরকে কামাইবে তাহার সংগীত, বরবধূর পাশাখেলা, তার সংগীত সে কত রকম!’
চন্দ্রাবতীর লেখা পাশাখেলার একটা সংগীত নিচে দেয়া হলো:

‘কি আনন্দ হইল সইগো রস বৃন্দাবনে,
শ্যামনাগরে খেলায় পাশা মনমোহিনীর সনে।
আজি কি আনন্দ
উপরে চান্দোয়া টাঙ্গান নিচে শীতলপাটি,
তার নিচে খেলায় পাশা জমিদারের বেটি
আজি কি আনন্দ
চন্দ্রাবতী কহে পাশা খেলায় বিনোদিনী
পাশাতে এবার হারিল শ্যামগুণমণি!
আজি কি আনন্দ’

চন্দ্রাবতীর রচনা আজ বিশ্বে আলোচিত। পৃথিবীর একুশটি ভাষায় তার লেখা অনুদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কবি চন্দ্রাবতীর রচনা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশে। বিদেশী গবেষকবৃন্দ প্রায়ই আসছেন কবির তীর্থভূমি কিশোরগঞ্জে।
জয়ানন্দের গ্রাম সুন্ধা খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত পাটোয়ারী গ্রাম আজও আছে। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে উত্তর পূর্বদিকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। আর আছে ফুলেশ্বরী নদীর ধারে চন্দ্রাবতীর পূজিত সেই বিখ্যাত শিব মন্দির। প্রায় পাঁচশ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানে ফুলেশ্বরী নদী বিলীন হয়ে গেছে, কিন্তু তার পাড়ের শিবমন্দির, সংস্কারের অভাবে যত জীর্ণ হোক না কেন, আজো দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রাবতীর স্মৃতির সাক্ষ্য হয়ে। গত কয়েক বছর ধরে চন্দ্রাবতীর শিব মন্দিরকে ঘিরে বাৎসরিক মেলা বসছে এই বিরল কবিকে শ্রদ্ধা জানাবার জন্যে, তাকে স্মরণ করার জন্যে। দেশের জ্ঞানী গুণীজনেরা এসে এই মেলাকে সাফল্যমণ্ডিত করছেন। ইদানীং তাই দেখা যাচ্ছে নতুন করে চন্দ্রাবতীর কবি প্রতিভার মূল্যায়ন ঘটছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়