দুটি কবিতা॥ জাহাঙ্গীর ফিরোজ
জাহাঙ্গীর ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম
অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার
আজ এই সন্ধ্যায়
ভোরের গন্ধভরা সন্ধ্যার আলো-অন্ধকারে
তোমার অচেনা মুখ খুব মনে পড়ে;
ওই দূর শৈশবের আলো
এখন এ সন্ধ্যায় খুব কাছে ডাকে
নরম শেফালি ফুল বাগানের ঘাসে
ভোরের শিশিরভেজা
গন্ধ তার থেকে থেকে শীতল বাতাসে ভেসে আসে
আজ এই সন্ধ্যায়
সেই ঘ্রাণ সেই ছবি
ডেকে বলে গেল, কবি
এসেছি তোমার কাছে সন্ধ্যায়
অঞ্জলি ভরা ফুল
শেফালি বকুল
তুমি ফুলগুলো
তুলে নাও করে
বিকেল শেষের ভোরে।
প্রার্থনার অশ্রু
শীতসকালে নরম রোদে ভরে গেছে চারিদিক
জানালার ওপাশেই বাতাসে দুলছে দু’টি ফুল
একটি কি দুটি ফড়িং উড়ছে পাখার শীতমুছে ফেলে
এই শীতেও বসন্তের হাওয়া বয়ে গেল সহসা;
আমি আকাশের দিকে তাকালাম
আমার দু’চোখ ভিজে এলো
এরকম দৃশ্য তো আমি বহুবার দেখেছি;
এখন কি সন্ধ্যা নেমে আসছে?
বিদায়ের আগে কারো কারো দু’চোখে সমুদ্র জমা হয়
আমি কি সেই সীমানায় পৌঁছে গেছি?
আজ কেন শিশুর সরল হাসি দেখে
এই দুটি চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়
একটু মমতায় রুদ্ধকণ্ঠ আমার দু’চোখে
কেবলি প্লাবন নামে।
প্রভু, তুমি কেন এতো অশ্রু দিলে।
সকল সুন্দর আজ আমার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে।
হে রব, হে রাব্বুল আলামীন
এতোটা নরম করে দিলে কেন আমার হৃদয়?
আমি তো দেখেছি নৃশংস হত্যার দৃশ্য
বেওনেটে বিদ্ধ বন্ধুর উলঙ্গশরীর নদীজলে;
তার দু’টি চোখ খোলা ছিল আকাশের দিকে
নিশ্চয়ই তুমি সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছ
হে প্রভু, তখন তো আমার চোখে অশ্রু ছিল না
দাবানল জ্বলেছে সেখানে দাউ দাউ
আমি কতবার কাঁদতে চেয়েছি নিভৃতে
তখন তো তুমি একফোটা অশ্রুও দাওনি।
রাজপথে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য
দেখেছে সহস্র লোক; তবু কাউকে তো কাঁদতে দেখিনি
পৈশাচিক উল্লাস আর আতঙ্কে নীল কিছু অবয়ব মনে পড়ে;
আমি তখনও তো কাঁদতে পারিনি
আমার সকল কান্না আমার চোখের জল- প্রভু
তুমি সুন্দরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছ!
হে রব, হে রাব্বুল আলামীন
এতো অশ্রুই যদি দিলে তবে
আমার এ দেশ তুমি আমার চোখের জলে ধুয়ে দাও
আমার চোখের জল, আমার সকল কান্না তুমি
গ্রহণ করবে নিশ্চয়
প্রভু, তবে সকল হলুদপাতা ঝরে যাক
পৃথিবীকে পুষ্পময় করে দাও তুমি
আমিন আমিন বলে আমার চোখের নদী প্রবাহিত হ’ল।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৪/তাপস রায়
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন