ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন রাজশাহীর বজলুর রহমান

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন রাজশাহীর বজলুর রহমান

বজলুর রহমান বাদল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন নৃত্যগুরু বজলুর রহমান বাদল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন।

এর আগে রাজশাহী জেলা প্রশাসন নৃত্যগুরু বজলুর রহমানের নাম মনোয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করে। বাদলের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আতাউল গণি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তার স্বাধীনতা পুরস্কারে জেলা প্রশাসনও গৌরববোধ করছে।

ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ওস্তাদ তার হাতে-পায়ে নাচের যে মুদ্রা তুলে দিয়েছিলেন, তা এখনো সচল। দীর্ঘজীবনে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন রাজা-মহারাজার দরবারে নৃত্য পরিবেশন করেছেন তিনি। এখনো মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত তিনি। শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন নৃত্যগুরু উপাধি। এ বছর তিনি সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ।

বৃহস্পতিবার রাতে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তির খবর পৌঁছালে বজলুর রহমান বাদল  আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার জীবনের এটাই স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া। আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এ পর্যন্ত ৭৪টা সংবর্ধনা পেয়েছি। আমার ঘরে ৬১টি ক্রেস্ট রয়েছে।’

শিল্পীজীবনের কথা বলতে বলতে হারিয়ে যান ৮০ বছর আগের স্মৃতিতে। ‘তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। মালদহ জমিদারবাড়ির একজন লোক ডেকে বললেন, এই ছেলে নাচ শিখবে? আমি তোমাকে নাচ শেখাব। কথাটা মাকে এসে বললাম। তার কাছেই আমার নাচের হাতেখড়ি। এরপর কখন যে ঘুঙুরের মতো নাচের সঙ্গে জীবনকেই বেঁধে ফেলেছি, বুঝতে পারিনি।’

বজলুর রহমান ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষ কলকাতার মানুষ ছিলেন। তার দাদা আশাক হোসেন আমের ব্যবসা করতে এসে মালদহে বাড়ি করেছিলেন। সেখানেই তার জন্ম। বাবার নাম আবুল কাশেম। মায়ের নাম সখিনা বিবি। ১৯৪৫ সালে মালদহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরের বছর নাটক করতে রাজশাহী আসেন। আর ফেরা হয়নি। এখনো রাজশাহীতেই আছেন। সপ্তাহে দুদিন রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে নাচের ক্লাস নেন। শহরের সব বড় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখনো তার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। জীবনে তিনি নাচ ছাড়া আর কিছুই করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। থাকেন রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় মেয়ের বাসায়। ধ্রুপদি নৃত্যের চারটি বিভাগেই বজলুর রহমানের দক্ষতা সমান। এ ছাড়া ভরতনাট্যম, কথাকলি, মণিপুরি ও কত্থক নৃত্যেও রয়েছে তার অসামান্য দখল।

ওস্তাদ বজলুর রহমানের বসার ঘরে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন সংবর্ধনার ক্রেস্ট। ঢাকাসহ সারা দেশে তাকে ৭৪টি সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আগে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন রাজা-মহারাজার দরবারে নাচের আমন্ত্রণ পেতেন।

১৯৫১ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার সঙ্গে নাচের মুদ্রা রপ্ত করে ফেলেন। বিদ্রোহী নৃত্যের জন্য ২০১১ সালে তিনি নজরুল একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পান।

দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী নিপা, শিবলী, লায়লা হাসান, জিনাত বরকতুল্লাহ সবার সঙ্গে রয়েছে তার সখ্য। নৃত্যশিল্পী রিংকু, ওলি ও সাকিবকে তিনি নৃত্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এ গুণীজন আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বরেন্দ্র একাডেমি (১৯৮৩), উত্তরা সাহিত্য মজলিস (১৯৮৩), রাজশাহী থিয়েটার (১৯৮৫), শাহজাদ পুর নাট্যসংঘ (১৯৯০), রাজশাহী বৈশাখী মেলা (১৪০১), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মন্নুজান হল (১৯৯৬), সঙ্গীত শিক্ষা ভবন (৫০ বছর পূর্তি, ১৯৯৭), রাজশাহী সিটি করপোরেশন (১৯৯৭), জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট (১৯৯৭), জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন (১৪০৪ বঙ্গাব্দ), ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন স্মৃতিপদক (১৯৯৮), রাজশাহী সাংস্কৃতিক সংঘ (২০০০). পাবনা থিয়েটার (২০০১), অবকাশ নাট্যদল (২০০১), ঢাকা নৃত্যাঞ্চল সম্মাননা (২০০২), তুলসী লাহিড়ী পদক (২০০২) এবং রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন স্বর্ণ পদক (২০০২)।

এদিকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নৃত্যগুরু ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. তসিকুল ইসলাম রাজা।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/তানজিমুল হক/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়