ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শিক্ষক সংকট চরমে

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শিক্ষক সংকট চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে। এমন কী অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষকও নেই। ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এ জেলার শিক্ষাব্যবস্থা।

তাই এ পার্বত্য জেলার প্রাথমিক শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরিভাবে শিক্ষক সংকট সমাধানের দাবি উঠেছে।

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ জাতীয়করণকৃত ২০৩টি বিদ্যালয়সহ রাঙামাটি জেলার ৬১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ ৫৮৭টি। বর্তমানে জেলায় কর্মরত আছেন ৪১১ জন। প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ১৭৬টি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে রাঙামাটি সদর উপজেলায় ১৪টি, কাউখালী উপজেলায় ১৫টি, নানিয়ারচর উপজেলায় ১৪টি, বরকল উপজেলায় ২৪টি, জুরাছড়ি উপজেলায় ৪টি, লংগদু উপজেলায় ৩৩টি, বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২৮টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৯টি, রাজস্থলী উপজেলায় ২১টি, বিলাইছড়ি উপজেলায় ২টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে।

প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি বর্তমানে রাঙামাটিতে ১৯৯ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের মধ্যে রাঙামাটি সদর উপজেলায় ২৩টি, কাউখালী উপজেলায় ২০টি, নানিয়ারচর ১৪টি, বরকল উপজেলায় ৩৬টি, জুরাছড়ি উপজেলায় ৬টি, লংগদু উপজেলায় ৩০টি, বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৩২টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৯টি, রাজস্থলী উপজেলায় ১৯টি এবং বিলাইছড়ি উপজেলায় ১০টি পদ শূন্য রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাঙামাটি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত হিসাবে যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে প্রকৃত পক্ষে সেই সংখ্যা কম বলে জানা গেছে। এই হিসাবে পূরণকৃত পদ দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই বলে জানা গেছে। এই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের কর্মরত শিক্ষকদের একটি অংশ রাঙামাটি জেলা সদরের পিটিআইএ দেড় বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণে নিয়োজিত আছেন। পরিসংখ্যানগতভাবে তাদেরকে বিদ্যালয় কর্মরত শিক্ষক হিসাবে দেখানো হচ্ছে।

অপর দিকে পিডিপি-৩, স্লিপসহ প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন প্রশিক্ষণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক বিধায় বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সময় প্রধান শিক্ষকগণকে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণে বিদ্যালয়ের বাইরে থাকতে হয়। এ ফলে বিদ্যালয়ে না থেকেও তাদেরকে কর্মরত হিসাবে দেখানো হয়। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের মেডিকেল ছুটি, সিএল ছুটিতো আছেই।

বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে জেলা কিংবা উপজেলা সদর কিংবা যোগাযোগ সুবিধায় অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক সংকট তুলনামূলকভাবে কম হলেও দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। প্রত্যন্ত এলাকার এমন একাধিক বিদ্যালয় আছে যেখানে ১জন কিংবা ২ জন শিক্ষক কর্মরত। আবার এমন বিদ্যালয়ও আছে যেখানে সর্ব সাকুল্যে শিক্ষার্থী ১৫ থেকে ২০ জন।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন বলে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ১৯৯০ সাল থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত। এ কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিও জেলা পরিষদে ন্যস্ত। জেলা পরিষদই শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।

তবে সম্প্রতি পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় রাজস্ব খাতে প্রাক-প্রাথমিক শাখায় ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রধান শিক্ষকের পদ ২য় শ্রেণিতে হওয়ায় এই পদে নিয়োগ আপাতত পরিষদের এখতিয়ার বহির্ভূত। তাই বিগত সময়ের ন্যায় এখনো প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ক্ষমতা পরিষদের কাছে অর্পণ করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক হাজী মো: মুছা মাতব্বর জানান, জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে দ্রুততার সাথে সরকারি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে উপজেলাসমূহে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের এক উপজেলা হতে অন্য উপজেলায় বদলি বন্ধ রাখা হয়েছে। যে উপজেলায় যতটা পদ খালি আছে সেই উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে হতে যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী দিয়ে পদ পূরণ করা হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রেজাউল করিম/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়