ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফিরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিরে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

কুতুপালং ক্যাম্পের একটি রোহিঙ্গা পরিবার

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার  : নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাচ্ছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তথ্যমতে, এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে গেছেন অন্তত ৯০০ রোহিঙ্গা। আরো অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, নতুন করে ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক মহল উদ্যোগ নিয়ে যেন তাদের নিরাপত্তা জোরদার করে।

বিজিবির টেকনাফস্থ ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ভালো অবস্থাসম্পন্ন রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ৮০০-৯০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ফিরে যাওয়ার তথ্য তার কাছে রয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক রোহিঙ্গা রয়েছেন, যারা স্বদেশে ফিরে যেতে বিজিবির সহায়তা চেয়েছেন।

টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমির হোছাইন জানান, মিয়ানমারে যাদের ধনসম্পদ রয়েছে, তারা ভেতরে ভেতরে অনেকেই মিয়ানমারে চলে গেছেন। এই ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য ফয়েজ আহমদ জানান, এখনো বিত্তশালীদের অনেক আছেন যারা চলে যেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ ছাড়া নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই স্বদেশে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া নুর আয়েশা জানান, বাংলাদেশে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। নিজের দেশে যাতে ফিরতে পারেন তার প্রহর গুনছেন।

সাব্বির আহমদ নামের আরেক রোহিঙ্গা জানান, এর মধ্যে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে অভিযান বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এতেও বিশ্বাস অর্জন করতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। কথিত অভিযান বন্ধ ঘোষণা হলেও নির্যাতন বন্ধ হবে  কি না তা নিয়ে তারা সংশয়ে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিয়ে মিয়ানমারে নিরাপত্তা জোরদার করলে সব রোহিঙ্গা এক দিনে ফিরে যাবেন।

টেকনাফ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা প্রতিদিন মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে। যেতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সীমান্তে যেভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে সেভাবে তারা সীমান্ত দিয়ে পুনরায় চলে যাচ্ছে। তবে যারা যাচ্ছে তাদের নাম-ঠিকানাগুলো আমরা লিখে রাখছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছিলেন তারা। আর চলতি সপ্তাহের বুধবার মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুনকে উদ্ধৃত করে স্টেট কাউন্সেলর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শেষ হয়েছে। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে এবং শান্তি রক্ষার্থে কেবল পুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ কক্সবাজার/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ সুজাউদ্দিন রুবেল/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়