ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৪ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোপালগঞ্জে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা

ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দির

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২০৬তম জন্মতিথি উপলক্ষে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব ও তিন দিনব্যাপী মহাবারুণীর মেলা। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যুতিথিতে আয়োজন করা হয় এ স্নানোৎবের।

মতুয়া ভক্তরা পুণ্যের আশায় শনিবার বিকেল ৩টা থেকে থেকে শুরু করে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির দুটি দীঘিতে তাদের পুণ্যস্নান শেষ করবেন। স্নানোৎসব চলাকালে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।

গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি। শনিবার বিকাল ৩টায় হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি ও স্নানোৎসব কমিটির সভাপতি হেমাংশুপতি ঠাকুর এই স্নানোৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় হেমাংশু ঠাকুর ও শচীপতি ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুরসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।  পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ওড়াকান্দির হরি মন্দির ও গুরুচাঁদ মন্দিরে পূজা-অর্চনা শুরু করবেন পুরোহিতরা। 

২০৬ বছর আগে ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে ব্রহ্মমুহূর্তে মহাবারুণীর দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পূর্ণব্রহ্মা হরিচাঁদ ঠাকুর। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাল্যনাম হরি হলেও ভক্তরা হরিচাঁদ নামেই তাকে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি। ক্রমেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দির নাম এবং সারা দেশের হিন্দু-সম্প্রদায়ের কাছে এটি পরিণত হয় তীর্থস্থানে। ৬৬ বছর বয়সে ১২৮৪ বঙ্গাব্দে জন্ম দিবসের একই তিথিতেই তিনি পরলৌকিকত্ব বরণ করেন।

হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি কাশিয়ানীর প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও দেশ ও দেশের বাইরে থেকে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে এ স্নানোৎসবে। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, যশোর, নড়াইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের মতুয়া ভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগ দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান ও ভারত, হাতে বিজয়  ও সত্যের লাল নিশান এবং ডাংখা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলু ধ্বনি দিয়ে ‘হরি বল হরি বল’ ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে মতুয়া অনুসারীরা আসেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ঠাকুরবাড়ির এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে মেলা। মেলায় একদিকে যেমন রয়েছে ধর্মীয়-আবহ, অন্যদিকে রয়েছে লোকজ ঐতিহ্য। বাঁশ, বেত, মৃৎ, ব্রোঞ্জসহ নানা কুটির শিল্প-সামগ্রীর ব্যাপক সমাবেশ ঘটে এ মেলায়। এ ছাড়া নাগর দোলাসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন রয়েছে।

উৎসবকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় বসানো হয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ চৌকি ও সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের স্বেচ্ছাসেবকরাও সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। ভক্তদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ঠাকুরবাড়ি এলাকায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান জানান, অনুষ্ঠানটিকে নিরবিচ্ছিন্ন করতে পোশাকধারী দুইশত ও সাদা পোশাকে একশত পুলিশ সদস্যের একটি শিপটিং তালিকা তৈরি হয়েছে। এছাড়া কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাস্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, স্নানোৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৪ মার্চ ২০১৭/বাদল সাহা/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়