ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কোমল ফুলকে বাঁচাতেও যুদ্ধ করা প্রয়োজন

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ১৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোমল ফুলকে বাঁচাতেও যুদ্ধ করা প্রয়োজন

হাসান মাহামুদ : ‘শিশুরা ফুলের মতো, এই ফুল ফুটতে দিতে হবে’- কথাটি বহুল পরিচিত। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন। এসব কোমল শিশুর জন্য, ফুলের জন্য আমরা কি সাজানো বাগান তৈরি করছি? কিংবা সাজানো বাগানের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে আদৌ পারছি আমরা!

জাতিসংঘের শিশু সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সবাই শিশু। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার কাছে দেশগুলো শিশু নির্যাতন বন্ধে অঙ্গীকারাবদ্ধ। যদিও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা করা প্রতিটি সমাজের তথা দেশের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ শিশুশ্রম। এ আইন আজ শুধু কাগজে-কলমেই আছে, তা মানছেনা কেউ। অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব ও দরিদ্রতার কারণে অনেক শিশুই নামছে রোজগারে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওয়ার্কশপ, জুয়েলারি, মোটর গ্যারেজ, হোটেল রেস্তোরা, কৃষিসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের সস্তায় খাটাচ্ছেন। সরকারি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সেটা পরোয়া করছেন না। এর ফলে দিন দিন শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে আজ থেকে ১৩৩ বছর আগে আজকের এই দিনে (১৪মে) লন্ডনে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ সংস্থার উদ্বোধন হয়। তখন থেকে এ বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সমাধান মিলছে না। ১৮৮৪ সালে করা এই সংস্থাটি বেশকিছু কেস স্টাডিও প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিল এবং দেশের আইন অনুযায়ী, কোনোভাবেই কোনো শিশুর ওপর কোনো ধরনের নিষ্ঠুরতা চালানো যাবে না। এমনকি পিতা-মাতাও সন্তানকে শাসনের নামে নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারবেন না। কিন্তু গত কয়েক মাসে দেশে শিশু নির্যাতন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।

ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে তেমন শিশুসদন দেখা যায় না। অবশ্য আমাদের দেশে শিশুসদনের তেমন প্রয়োজনও নেই, কেননা এখানে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত অটুট। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রধান বাধা হল পরিবারগুলোর অস্বচ্ছলতা।

পৃথিবী জুড়েই চলছে শিশু অধিকার আন্দোলন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে শিশুদের অধিকার আদায় ও সুস্থ জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধার জন্যই এই আন্দোলন বা কর্মসূচী। এই আন্দোলনের প্রথম উদ্যোক্তা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনিসেফ, ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের শিশুদের সমস্যাবলী নিরসনে শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়। এই সনদে শিশুদের মৌলিক ও মানবিক ১০টি অধিকারের প্রতি জোর দেওয়া হয়।

আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে নারীদের সুরক্ষা এবং নারী নির্যাতনের জন্যই আইনের প্রয়োগ হয়, কোনো শিশু নির্যাতনের বিচারে বুঝি কোনো আইন নেই। তা কিন্তু নয়। যেখানে নারীদের নির্যাতনের জন্য আইনের প্রয়োগ আছে, সেখানে শিশুদের ওপর নির্যাতনের জন্যও আইনের প্রয়োগে কোনো বাধা নেই। তা ছাড়া দেশে শিশু আইন ২০১৩ বলবৎ আছে। এ আইনে শিশুর প্রতি আচরণ কেমন হবে, তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই আইনের এখনো বিধি করা হয়নি। তাই আইনটিও কোনো কাজে আসতে পারবে না।

আমরা মনে করি, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। শিশু অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়িত্বই প্রধান। শিশু অধিকার বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা রয়েছে। শিশু অধিকার সনদের ভাষায় রাষ্ট্রই হল শিশুর প্রধান দায়িত্ব বাহক। আর অন্যান্য দায়িত্ব বাহকরা হলেন অভিভাবক, প্রতিবেশি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সেবামূললক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও।

তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একমাত্র রাষ্ট্র এবং অভিভাবক ব্যতীত এ দায়িত্ব অন্যের উপর বাধ্যতামূলকভাবে বর্তায় না। কিন্তু রাষ্ট্র ও অভিভাবক এই দুই কর্তা যদি শিশুর সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে অবশ্যই জবাবদিহিতার বিধান রয়েছে। আমাদের দেশে যথাযথ আইনের শাসন না থাকায় একমাত্র নৈতিক বিবেচনা ছাড়া রাষ্ট্র এ ধরনের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নয়। তাই শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে। শিশুর জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। শিশু অধিকার সংরক্ষণে জাতীয় পর্যায়ে শিশুকে দিতে হবে মানসম্মত শিক্ষা।

শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিশুরাই আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার কর্ণধার। সে ভবিষ্যৎকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

একটি নবজাত শিশুর মধ্যে যে প্রাণের সঞ্চার হলো তা একদিন ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হবে। বড় হয়ে একদিন সে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতে সে দেশের কর্ণধার হবে। তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ, নিশ্চিত পথচলা।

শিশুরা অবহেলার পাত্র নয়। তাদের সুশিক্ষা দিয়ে বড় হওয়ার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে আজকের শিশুরা একদিন এ দেশকে নিয়ে যাবে উন্নত সমৃদ্ধির পথে। তাই আমরা যারা শিশুকাল অতিক্রম করে পরিপূর্ণ যুবক বা পৌঢ়ত্বে পৌঁছেছি। আমাদের সবার উচিত শিশুদের প্রতি সদয় হওয়া, তাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।

লেখক: সাংবাদিক।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৭/হাসান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়