ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান

বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অবকাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম, আসিফ ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেক ইকবাল অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন।   ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)- এর কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম নির্ধারিত আলোচনা সঞ্চালনা করেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশ গত ৮ বছরে ১৮ শতাংশ হারে রাজস্ব আহরণ করেছে, যার ফলে বর্তমানে আভ্যন্তরীন সম্পদের মাধ্যমে বাজেটের ৯০ ভাগ অর্থায়ন মেটানো সম্ভব হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অর্থনীতির নানাক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধন হলেও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হওয়ার এখনই সময়।'

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র, স্থল ও বিমান বন্দরগুলোর আন্তর্জাতিক মান অর্জনে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার মাতারবাড়ীতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাখাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’  

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের উদ্যোক্তারা কম সময়ে ট্রেড লাইসেন্স, আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি ও অন্যান্য ব্যবসায়িক সেবা পাবেন, যার ফলে ব্যবসায় ব্যয় হ্রাসের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের অবকাঠামো খাতে সংষ্কারে বদ্ধপরিকর।’ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাকে সচল রাখার জন্য অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। উন্নত অবকাঠামোর অভাবে আমরা জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির ধারাকে কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত করতে পারিনি।'

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন  অবকাঠামো খাতে অগ্রগতির ফলে অর্থনীতিতে উন্নতি সাধন করেছে। চীন ২০৩০ সাল পর্যন্ত অবকাঠামো খাতে জিডিপি’র ৮ শতাংশ বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৭৫ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।’ তিনি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে দেশের বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম বাংলাদেশের অবকাঠমো খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেক ইকবাল জানান দেশের কন্টেনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ এবং কার্গো ও জাহাজ পরিবহনের ৭২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর সারা পৃথিবীর বন্দরগুলোর মধ্যে ৭৬ তম স্থানে রয়েছে এবং গত আট বছরে এই বন্দরের অবস্থানে ২২ ধাপ সামনে এগিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনে কন্টেইনারের পাশাপাশি জাহাজের আকারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই আমাদেরকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বন্দরের সংষ্কার কার্যক্রম বজায় রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দরের কার্যক্রম সপ্তাহে ৭ দিন চলমান থাকলেও শুল্ক বিভাগ ও ব্যাংকিং কার্যক্রম সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক সময় পণ্য খালাস ও অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়।’ তিনি পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় কমানোর লক্ষ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর কাছাকাছি এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরামর্শ দেন।

আব্দুল মোনেম লিমিটেড- এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাইনুদ্দিন মোনেম বলেন, ‘সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তবে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম এখনও কাঙ্খিত গতি পায়নি। বর্তমানে ১৯৫০ সালের আইনের মাধ্যমে আমাদের ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তাই এ আইনের সংষ্কার একান্ত আবশ্যক।’

মূল প্রবন্ধে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)- এর কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর ৪৫তম অর্থনীতির দেশ এবং অবকাঠামো খাতে ১১৪ তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহন ও বিতরন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কার্যকর করার জন্য এর সাথে সংশ্লিষ্ট নানাবিধ সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই প্রাক্তন সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান, মোঃ সবুর খান, এফবিসিসিআই- এর প্রাক্তন পরিচালক আব্দুল হক, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ওসামা তাসীর অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দ সমুদ্র, স্থল ও বিমান বন্দরগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, পরিবহন খাতে ব্যয় হ্রাস, যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মে ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়