ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে লাগবে আরো দুই বছর

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১২, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে লাগবে আরো দুই বছর

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে আট শতাধিক ক্যামেরায় তোলা ছবি পর্যালোচনা করে বাঘের ঘণত্ব নিরুপণের চেষ্টা চলছে। পুরো সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো দুই বছর।

সম্প্রতি ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ মনিটরিং সার্ভের সাতক্ষীরা রেঞ্জে প্রথম ধাপের মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাঘ মনিটরিং সার্ভে প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ বনবিভাগ ও ওয়াইল্ড টিম যৌথভাবে এ সার্ভে পরিচালনা করছে।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘের হ্রাস-বৃদ্ধি, চলাচলের ঘণত্ব ও জীবনাচরণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তবে প্রথম ধাপের সার্ভে শেষে খুলনা, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জেও কাজ শুরু হবে। পুরো সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো দুই বছর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার কাজ মার্চে শেষ হয়েছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা রেঞ্জে থেকে এ পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ পরিবীক্ষণ (গণনা) শুরু হয়। সুন্দরবনের শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪০২টি স্টেশনে গাছ বা খুঁটির সঙ্গে ৮০৪টি ক্যামেরা বসিয়ে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার গণনার কাজ করা হয়।

বাঘ মনিটরিং সার্ভে প্রকল্পের পরিচালক ও খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধূরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ছবি তোলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন তা ল্যাবে সফটওয়ারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এসব ছবি পর্যালোচনা করছেন। এর মাধ্যমে সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের বিচরণ ও ঘণত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তবে খুলনা, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে সার্ভে কাজ সম্পন্ন হলে পুরো সুন্দরবনে বাঘের মোট সংখ্যা জানা সম্ভব হবে। এ কাজ শেষ করতে আরো প্রায় দুই বছর সময় লাগবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানান, প্রথম দফায় সুন্দরবনের ২৬ শতাংশ এলাকায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারি করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের দক্ষিণ দিক থেকে বনের ৫০ শতাংশ এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করে এবারের গণনা কার্যক্রম চালানো হয়। এর আগে যেসব এলাকায় বাঘের উপস্থিতি বেশি এমন এলাকাগুলো বেছে নেওয়া হয়েছিল। ইউএসএইডের অর্থায়নে বাঘ প্রকল্পের অধীনে ডিসেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা করা হয়।

সূত্রটি জানান, ৮ সদস্য বিশিষ্ট ৬টি দলের ৪৫ জন সদস্য বাঘ গণনার কাজ করে। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের পাশাপাশি খাল সার্ভের মাধ্যমেও বাঘ গণনা করা হয়েছে। এখন তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এই কাজে সহযোগিতা করবে বন্যপ্রাণী বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড টিম।

যেভাবে কাজ করে ক্যামেরা ট্র্যাপিং : ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্যপ্রাণীদের ছবি পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণী চলাচলের রাস্তায় দীর্ঘ মেয়াদের ব্যাটারিচালিত ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এরপর মানুষহীন এ ক্যামেরার সামনে যেকোনো নড়াচড়া হলেই উঠতে থাকে একের পর এক ছবি। এভাবে গবেষকেরা পেয়েছেন দিন বা রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকা বন্যপ্রাণীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসহ নতুন সব তথ্য।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সাইদ আলী জানান, সুন্দরবনের শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪০২টি স্টেশনে ৮০৪টি ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের ছবি তোলা হয়। প্রতিটি ক্যামেরা ৫/১০ সেকেন্ড পর পর একটি করে ছবি তোলে। ছবির ডোরাকাটা পর্যালোচনা করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সাতক্ষীরা রেঞ্জের বাঘের প্রকৃত সংখ্যার প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

সুন্দরবন বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনা শুরু হয়েছিল। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে গাছ বা খুঁটির সঙ্গে ৯০টি ক্যামেরা বসিয়ে ওই গণনার কাজ করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ জন কর্মী। ২০১৫ সালের মার্চে শেষ হয় গণনার কাজ। ওই শুমারি অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি।

গত চার দশকে সুন্দরবনে বাঘ গণনা পরবর্তী মনিটরিংয়ের কার্যক্রম এই প্রথম। ২০১০ সালের বাঘ সম্মেলনের ঘোষণার সুপারিশ অনুযায়ী গত ডিসেম্বর থেকে ইউএসএইডের বাঘ অ্যাকটিভিটি প্রকল্পের অর্থায়নে এই সার্ভে শুরু করে বনবিভাগ। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ২৭৭টি গ্রিড পয়েন্ট চিহ্নিত করে প্রতি পয়েন্টে দুটি করে অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানো হয়। বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে টানা ৪৫ দিন বাঘের ছবি ধারণ করা হয়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘের বাড়া-কমার সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা যাবে। ছবিগুলো পর্যালোচনা করে ৩০ জুনের মধ্যে সার্ভের চূড়ান্তভাবে ফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩টি, ২০০৪ সালে ৪৪০ এবং সর্বশেষ শুমারিতে পাওয়া যায় ১০৬টি।




রাইজিংবিডি/খুলনা/২২ মে ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়