ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এত অর্জনের পরও পূরণ হবে না রাফীর স্বপ্ন!

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 এত অর্জনের পরও পূরণ হবে না রাফীর স্বপ্ন!

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান”। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে কেউ কেউ সামনে শুধু অন্ধকারই দেখে। কখনো কখনো অনেক ভালো কিছু অর্জন করলেও সামনের অন্ধকার দূর হয় না দারিদ্র্যের কারণে। ঠিক তেমনই অবস্থা হয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার রাফী হাসানের।

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে রাফী হাসান।

শিক্ষা-সরঞ্জামের পর্যাপ্ত অভাব-অনটন, দারিদ্র্যের কষাঘাত, লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব স্বত্বেও, রাফী মেধার জোরেই ছিনিয়ে এনেছেন গৌরবোজ্জ্বল এ সাফল্য। কিন্তু রাফী জিপিএ-৫ পেলেও তার পরিবারে এ অর্জনের কোনো মূল্যায়ন নেই। কারণ কলেজে পড়ানোর সামর্থ্য নেই রাফীর মা রুনা বেগমের। 

রাফীর বাক প্রতিবন্ধী মা রুনা বেগম ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। বাবা শামীম মিয়া রাফীর তিন বছর বয়সে তাদের ছেড়ে বাড়ি থেকে চলে যান। বাবা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন এটা তাদের কাছে অজানা। ছোট বোন মেহজাবিন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে কালীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই ভাই-বোনের লেখা পড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খান মা রুনা বেগম।

২০১১ সালে পিএসসিতে এবং ২০১৪ সালে জেএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে রাফী। ২০১৪ সালে জেএসসি মেধা তালিকা অনুসারে বৃত্তিও পায় রাফী। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কোনো সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না। তখন তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন রাফীর স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক নূর মহল বেগম, তার স্কুলের ছাত্র কল্যাণ তহবিল ও বালীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ওমর আলী মোল্লা। শিক্ষক নূর মহল বেগম বিনা টাকায় রাফীকে প্রাইভেট পড়াতেন। স্কুলের ছাত্র কল্যাণ তহবিল তার বকেয়া পরিশোধ করত। আর শিক্ষক ওমর আলী মোল্লা প্রতি বছর রাফীকে বই যোগাতেন। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বাঁলীগাও গ্রামের নানার বাড়ির জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস রাফীদের। সেই সুবাদে মামারাও তার সাহায্যে এগিয়ে আসতেন মাঝেমধ্যে। আর এভাবেই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ রাফীর।

রাফী ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু রাফীর সেই স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা দারিদ্র্য। তাই উচ্চ শিক্ষা ও স্বপ্ন নিয়ে চিন্তিত রাফী। ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে কি না, তার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না- ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিকে ছেলের স্বপ্ন পূরণে হতাশা অন্যদিকে পরিবারের ঘানি। বাক প্রতিবন্ধী মা রুনা বেগম নিজেও নানা দুশ্চিন্তায় ভূগছেন। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে তো? ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে পারবেন তো?

বালীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ওমর আলী মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটি দরিদ্র। কিন্তু খুবই মেধাবী ও ভদ্র। আর তার এই মেধা ও ভদ্রতা দেখে আমি সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছি। এখন সমাজের বিত্তবান মানুষগুলোর সহযোগিতায় রাফীর উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। সম্ভব তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ।’

কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুবনা ইয়াসমিন বলেন, দরিদ্র ও মেধাবী রাফী এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে স্কুলে পড়া অবস্থায় যতটা সম্ভব সহযোগিতা করেছি। এই ছেলেটির ভবিষ্যৎ সহযোগিতায় কোনো বিত্তবান মানুষ এগিয়ে এলে হয়তো তার উচ্চ শিক্ষা ও স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।

 

 

রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ/২২ মে ২০১৭/রফিক সরকার/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়