ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খালেদার ট্রাস্ট মামলায় পরবর্তী শুনানি ২৯ জুন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ২২ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদার ট্রাস্ট মামলায় পরবর্তী শুনানি ২৯ জুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এরপর বেলা ১১টা ৪২ মিনিটে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ শুনানি আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদকে খালেদা জিয়ার পক্ষে পুনরায় জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল।

শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার কার্যক্রম দেরিতে শুরুর হওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবগত করেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে দশটায় মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। এজন্য আমরা সকাল থেকেই আদালতে এসে বসে থাকি। কিন্তু মামলার কার্যক্রম শুরু হয় অনেক দেরিতে। তিনি মামলার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আগামি তারিখ থেকে আদালতের নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী মামলার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি আদালতকে জানান।

জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘যানজটের কারণে খালেদা জিয়ার আদালতে আসতে দেরি হচ্ছে।’ এরপর খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে তিনি মামলার কার্যক্রম মূলতবি রাখার আবেদন করেন।

তখন বিচারক বলেন, ‘এ মামলার ওকালতনামায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ৪৭৮ জন। আব্দুর রেজ্জাক খান অসুস্থ থাকলে জেরা হবে না ? তাহলে খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য কি এতো আইনজীবী ? আর আপনারা এখানে (আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে করে) সেরা সেরা আইনজীবী। আপনারা যে কোন একজন জেরা শুরু করেন।’

এরপরও জমির উদ্দিন সরকার মামলার কার্যক্রম মূলতবি রাখার আবেদন করেন।

এর বিরোধীতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আদালতে খালেদা জিয়া আসছেন। দুটি প্রশ্ন করবেন না, এটা কেমন কথা। তাদের (আইনজীবী) একেক জনের একেক ইস্যু। সময় বা বক্তব্যের জন্য আছেন জমির উদ্দিন সরকার, জেরার জন্য আব্দুর রেজ্জাক খান আর পিটিশনের জন্য আছেন জাকির হোসেন ভূইয়া। প্রতিটি তারিখে তাদের ইস্যু আছে। আর তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৬টা প্রশ্ন করার জন্য রিকল করেছেন। আর প্রশ্নগুলো দেয়া আছে। প্রশ্ন দেখে প্রশ্ন করতে পারবেন না এটা কেমন কথা। ম্যাডাম আসছেন, আমরাও আসছি। আমরা কিছু কাজ করি।’

তখন বিচারক বলেন, ‘আমরা এখানে এতগুলো মানুষ এখানে এসেছি। আর এখানে খালেদা জিয়া এসেছেন, একজন অত্যন্ত ব্যস্ত আর সম্মানিত মানুষ। আর সরকারেরও তো অপচয়ের একটা ব্যাপার আছে। আমরা এখানে এলাম আর গেলাম তাহলে তো কিছু হলো না।’

তখন জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আব্দুর রেজ্জাক খান এ মামলায় ৩২ সাক্ষিকে জেরা করেছেন। এজন্য আমরা চাচ্ছি তিনিই জেরা করুন।’

তখন বিচারক বলেন, ‘আপনার জেরা শুরু করেন, এরপর আমি সময় দিয়ে দেবো।’

তারপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে জেরা শুরু করেন। প্রায় ২০ মিনিট জেরায় তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করেন। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জেরার তারিখ পেছানোর জন্য বলেন।

তখন বিচারক তাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামি ২৯ জুন জেরার পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলাটিতে হাইকোর্টের দেওয়া পুনরায় তদন্তের আবেদন খারিজ করার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। যা শুনানির জন্য আগামি ৩ জুলাই ধার্য রয়েছে জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবীরা।

ওই মামলায়ও সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত আগামি ২৯ জুন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালত থেকে বাসায় দিকে চলে যান খালেদা জিয়া।

এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে বকশী বাজার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। এদিন খালেদা জিয়ার সাথে আদালতে হাজির হন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবীবুন্নবী খান সোহেল, আবুল বাশার, শায়রুল কবীর। 

আর আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূইয়া, হেলাল উদ্দিন, হান্নান ভূইয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

এ মামলার আসামি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়