ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অকাল বন্যা ভাসিয়ে নিয়েছে হাওরের ঈদ আনন্দ

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৫ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অকাল বন্যা ভাসিয়ে নিয়েছে হাওরের ঈদ আনন্দ

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ : হাওর পাড়ের কৃষকরা কয়েক মাস ধরেই কখনো এক বেলা খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিনাতিপাত করে আসছেন।এরই মধ্যে এলো মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ।

একের পর এক বাঁধ ভাঙা আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে যেন থমকে গেছে হাওর পাড়ের ঈদুল ফিতরের আনন্দ। বেঁচে থাকতে নিরন্তর জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে হাওর পাড়ের কৃষক।

এবারের অকাল বন্যায় সোনালী ফসলের সঙ্গে তলিয়ে গেছে হাওরের কৃষকের সকল চাওয়া পাওয়াও। বানের জলে ভেসে গেছে হাওর পাড়ের ঈদ আনন্দ।

যে ধানকে পুঁজি করে তাদের বেঁচে থাকা, সে ধান তো আর নেই। ঋণের বোঝা কাধে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দিনের পর দিন। সেখানে ঈদের আনন্দ আজ তারা ভুলতে বসেছে। বুক ভরা কষ্ট আর চাপা কান্না নিয়ে দিন পাড়ি দিতে হচ্ছে অসহায় কৃষকদের। যেখানে মহাজন ও এনজিওদের ঋণের বোঝা মরণ কামড় বসিয়েছে, সেখানে ঈদের আনন্দ আজ নিরানন্দ।

 



বাঁচা মরার লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে তারা ভুলে গেছে সবচেয়ে বড় ঈদ আনন্দ ঈদুল ফিতরের কথা। এবারের ঈদ জামাতে হয়তো তারা আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনাই করবেন, সকল ঋণের বোঝা কাধ থেকে নামিয়ে যেন সামনের বোরো মৌসুমে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। পরিবারের সকালের মুখে হাসি ফুটাতে পারেন। আগামী ঈদের আনন্দে সকলের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করতে পারেন।

মিঠামইন উপজেলার কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘এমন অইবো হেইডা তো বুঝতে পারি নাই। আমার ঘরে পাঁচ বছরের একটা মাইয়্যা আছে। আমি মাইয়্যাডার দিহে চাইতারি না, খুব খারাপ লাগে। হে তো আর অভাব বুঝে না, হের তো ঈদই আনন্দ। অল্প জমাইন্যা টেহা আর এনজিও থেইক্যা ঋণ নিয়া জমি চাষ করছি। কিন্তু অত দেনা লইয়্যা কেমনে বাঁচুম, আর ঈদের কতা তো ভাবতাম পারি না।’

ইটনা উপজেলার কৃষক জমশেদ মিয়ার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে পাঁচজনের সংসার। অল্প কিছু জমিতে ভরা মৌসুমে বোরো আবাদ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘ভাই মহাজনী ঋণ নিয়া আবাদ করছিলাম, প্রতি বছরই তাই করি। কিন্তু এখনতো মরণের পথে, আফনে জিগাইন ঈদের কথা। আগে তো বাঁইচ্যা লই, পরে ঈদের কথা ভাববাম।’

ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ছোট বড় মার্কেট ও বস্ত্র বিপণী ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবছর যেখানে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষজন ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পাড় করতেন। সেখানে এ বছর এ সকল বস্ত্র বিপণীগুলো ক্রেতা শূন্য।

 



কাপড় বিক্রেতারা জানান, প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরে আমরা বেশ ভাল কাপড় চোপড় বিক্রি করে থাকি। কিন্তু এ বছর অকাল বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তারা মার্কেটে আসছেন না। যারা আসছেন তারা মধ্যম আয়ের। কিন্তু তারাও খুব একটা বেশি দামের কাপড় কিনছেন না। আর নিম্ন আয়ের কৃষকদেরতো দেখাই মিলছে না। 

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, এবারের অকাল বন্যায় জেলার হাওর বেষ্টিত অঞ্চল ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী, তাড়াইল, হোসেনপুর, কটিয়াদী, বাজিতপুর ও ভৈরবে এই বছর এক লাখ ৩৮ হাজার ৯২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দুর্যোগে কৃষকের আবাদকৃত ধানের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ হেক্টর। টাকার হিসেবে যা প্রায় নয়শ’ কোটি টাকা। তার মধ্যে অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন ও নিকলীতে ক্ষতির পরিমাণ অধিক।

হাওর পাড়ের অসহায় কৃষকদের দাবি শুধু ত্রাণ নয়, পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো যদি ঈদে নতুন বস্ত্র বিতরণ করত, তাহলে হয়তো তারা পরিবারের সকলের সঙ্গে ঈদ আনন্দে অংশীদার হতে পারতেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারতেন। সামনের মৌসুমে নতুন করে বোরো আবাদের মাধ্যমে বাঁচার স্বপ্ন দেখতেন।



রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/২৫ জুন ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়