ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইউএনওকে হাতকড়া : সমালোচনার ঝড়, তীব্র ক্ষোভ

জে.খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২২ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইউএনওকে হাতকড়া : সমালোচনার ঝড়, তীব্র ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : বরিশালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অপবাদ দিয়ে দায়েরকৃত মামলায় ইউএনও গাজী তারিক সালমানকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের অভ্যন্তরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবারও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর ইউএনও তারিক সালমানের হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে দাবি করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য যদি মনে করেন, আসামি পালিয়ে যেতে পারে কিংবা পালিয়ে যাওয়ার সামর্থ তার আছে, তাহলে তিনি আসামিকে হাতকড়া পরাতে পারেন। একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় এবং পালিয়ে যাওয়ার ভয় না থাকায় ইউএনও তারিক সালমানকে হাতকড়া পরানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, ছবিতে দেখা গেছে ইউএনওকে হাতকড়া পরানো হয়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘জামিনযোগ্য ধারার মামলা। আবেদন করলে দুই মিনিটের মধ্যে জামিন হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে দুই ঘণ্টা হাজতবাস করানো হয়েছে। অভিযোগ যাই থাক না কেন, সেটা আদালতে প্রমাণিত হবে। তার আগে জামিন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করা, বিচার বাঁধাগ্রস্ত করা এবং হাতকড়া পরানো; এতে চরমভাবে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।’ তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের সেরেস্তাদার মো. শওকত হোসেন জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবী শুনানির সময় বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। এ কারণে কিছু সময়ের জন্য আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে প্রমাণাদি উপস্থাপন করার পর শুনানি নিয়ে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী বিচারের জন্য মামলা অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন ২০৫ ধারায় আসামিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী ধার্য তারিখে আসামির অনুপস্থিতিতে তার আইনজীবী মামলা পরিচালনা করবেন।’

জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, ‘জামিন দেওয়া না দেওয়া আদালতের বিষয়। কিন্তু একবার জামিন নামঞ্জুর করে পুনরায় জামিন আবেদন মঞ্জুর করার কোনো বিধান নেই।’

সিনিয়র আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, ‘আসামিকে হাতকড়া পরানোর ক্ষেত্রে কোনো বিধি নিষেধ নেই। তবে কোনো সম্মানিত কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি পালিয়ে যাবেন না বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না, তাকে পুলিশ হাতকড়া না পরালেও পারে।’ আসামিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করার কোনো এখতিয়ার পুলিশের নেই বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আগৈলঝাড়ায় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। চিত্রাংকনের বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। সিদ্ধান্ত ছিল ওই প্রতিযোগিতায় আঁকা যে ছবি প্রথম হবে, সেই ছবি স্বাধীনতা দিবসের কার্ডের পেছনে ছাপা হবে। সেটাই করা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায় বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি ছাপানোয় মানহানি হয়েছে অভিযোগে গত ৭ জুন আগৈলঝাড়ার তৎকালীন ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় গত বুধবার (১৯ জুলাই) বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন গাজী তারিক সালমান।

ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুরের মৌখিক আদেশ দেন। এরপর পরই আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই শচিনসহ কয়েকজন সদস্য ইউএনও তারিক সালমানকে হাত ধরে টেনে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যান। ওই সময় তোলা ছবিতে দেখা যায়, এটিএসআই শচিন তার দুই হাত দিয়ে ইউএনও সালমনের ডান হাত ধরে আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাচ্ছেন। ছবিতে এটিএসআই শচিনের ডান হাতে হাতকড়ার একাংশ এবং বাকি অংশ তার বাম হাত দিয়ে ইউএনও সালমানের ডান হাতে চেপে ধরা দেখা যায়। তার চারপাশে পুলিশ বেস্টনি দিয়ে তাকে গারদে নিতে দেখা যায়।

বতর্মানে বরগুনা সদরে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমান জানান, আদালতের কাঠকড়া থেকে নামানোর পর পুলিশ সদস্যরা তার হাতে হাতকড়া পরাতে উদ্যত হয়েছিল। তখন তিনি তাদের হাতকড়া না পরানোর অনুরোধ করেন। তখন পুলিশের এক সদস্য একটি হাতকড়াসহ তার (সালমান) ডান হাত চেপে ধরেন এবং অপর হাত চেপে ধরেন পুলিশের আরেক সদস্য। এ সময় ফের তিনি পুলিশ সদস্যদের টানা হেচড়া না করার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুলিশ তাকে বলেছে, এটাই নিয়ম। এভাবেই নিতে হয়।



রাইজিংবিডি/বরিশাল/২২ জুলাই ২০১৭/জে. খান স্বপন/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়