ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৩২ জন দস্যুকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ২০ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৩২ জন দস্যুকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবন ও সাগরে দস্যুতা করে জীবিকা নির্বাহ করা ১২টি দস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্যকে স্বাবলম্বী করতে অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। আগামী ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা বিতরণ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাগেরহাট আসছেন।

বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে এই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

২০১৬ সালের ৩১ মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’র প্রধান ও তার ৯ সহযোগীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু হয়। এরপর ১৩ জুলাই বনদস্যু মজনু এবং ইলিয়াস বাহিনীর সদস্যরাও আত্মসমর্পণ করেন। এই নিয়ে  প্রায় এক বছরে ১২টি দস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্য দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তারা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেন।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান বলেন, উপকূলীয় বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালীর কয়েক লাখ মানুষ সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল। মাছ, শুঁটকি, মধু, গোলপাতা, কাঁকড়া ও কাঠ সংগ্রহ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এ সব পেশার মানুষ সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে থাকে। অথচ  বিপথগামী কিছু ব্যক্তি নিজ নামে বাহিনী গড়ে তুলে এই পেশাজীবীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধ করে আসছিল। সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৮) দস্যু দমনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।

তিনি আরো জানান, সুন্দরবনে র‌্যাবের বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে। গত সাত বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বনদস্যু বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাবের অসংখ্য গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত চার বছরে সুন্দরবনে র‌্যাব বরিশাল-৮ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’১৬৭ জন জলদস্যু-বনদস্যু নিহত হয়েছেন। নিহত ওই দস্যুদের মধ্যে ৩৮ জন রয়েছে বাহিনী প্রধান। এ সময়ে দস্যুদের ব্যবহৃত প্রায় ৪০০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বনদস্যুরা অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরে তারা দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের কাছে আবেদন করলে সরকার তাদের সেই সুযোগ তৈরি করে দেয়। তারই অংশ হিসেবে গত এক বছরে ১২টি দস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, দস্যুবৃত্তি ছেড়ে আত্মসমর্পণ করা ১৩২ জনকে সরকার আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদের স্বাবলম্বী করতে পর্যায়ক্রমে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব বিপথগামীদের পুনর্বাসন করতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া এদের পরিবারের সদস্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হাতিয়া ও সন্দ্বীপের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুম আসলেই দস্যুরা তাদের অপহরণ করে চাঁদাবাজি করত।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গত দুই বছর সুন্দরবন ও সাগরে চাঁদাবাজি ও অপহরণ অনেকাংশে কমে গেছে। তাদের কঠোর নজরদারির কারণে বনদস্যুরা এখন কোনঠাসা। গত কয়েক বছরে জেলে, মহাজন ও আড়ৎদাররা দেনার দায়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে গত দুই বছরে তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।  বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। সরকার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।




রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/২০ আগস্ট ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রুহুল/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়