ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চট্টগ্রাম নগরবাসীর কাছে মেয়রের খোলা চিঠি

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রাম নগরবাসীর কাছে মেয়রের খোলা চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : পা পিছলে পড়ে গিয়ে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। নিয়মিত কোনো কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারছেন না।

এ অবস্থায় গত শনিবার রাতে নগরবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন মেয়র। চিঠিতে তিনি নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক দায় মাথায় নিয়ে চট্টগ্রাম নগরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার কথা উল্লেখ করে নানা প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার কথা বলেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের খোলা চিঠিটি রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো-

প্রিয় নগরবাসী
পূর্বের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক দায় মাথায় নিয়ে আমি আপনাদের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছি। নির্বাচনকালিন সময়ে দেয়া যেসব প্রতিশ্রুতি আমি উপস্থাপন করেছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার লক্ষ্যে রাতদিন অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছি। তবে আওতা বহির্ভূত নানা সংকট, আর্থিক দৈন্যতার কারণে একটু বিলম্বে হলেও ইনশাল্লাহ আগামী আট মাসের মধ্যেই আমার প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে।

প্রিয় নগরবাসী,
নগরী থেকে বিলবোর্ডের জঞ্জাল সরানোর পর এবার আপনাদের নিরাপদ চলাচলের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের হকার ভাইদের সহযোগিতায় নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধান ও নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে ফুটপাতে সারাদিন ব্যবসা করার পরিবর্তে হকার ভাইরা বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত সময়ে পণ্য বিকিকিনি করবেন। উন্নত বিশ্বের আদলে এ ব্যবসা চালু করা হয়েছে।

জনবল সংকট থাকা সত্বেও আমি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরু করেছি। প্রথমে এ নিয়ে নাগরিক সমাজে নেতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত করা হলেও এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সেবকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এমন সহযোগিতার জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আউটার স্টেডিয়াম নিয়ে অপপ্রচারের সীমা ছিল না। সারা বছর খেলার মাঠকে নানা মহল মেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও বৃহত্তর নাগরিক সমাজ এতে উপকৃত হয়নি। আমি আউটার স্টেডিয়ামকে আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও নান্দনিক সাজে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। নগরীর প্রখ্যাত স্থপতি ও প্রকৌশলীরা এ নিয়ে কাজ করছেন। ইনশাআল্লাহ এর দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।

প্রিয় নগরবাসী,
আমাদের এই প্রিয় শহরকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে সকল প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে যেসব সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে (যদি বৃষ্টি না হয়) সম্পূর্ণ সংস্কার করে আপনাদের নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করে দেব। তবে সিডিএ কর্তৃক নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর কারণে লালখান বাজার থেকে বহদ্দার হাট হয়ে আরাকান রোড পেপসি পর্যন্ত, বায়েজিদ বোস্তামি রোডের দুই নম্বর গেট থেকে বেবি সুপার মার্কেট পর্যন্ত সড়ক পথ এবং বহদ্দার হাট থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক পথটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় আমি তাতে সংস্কার কাজে হাত দিতে পারছি না। তবে আপনাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছি।

আপনাদের অবগতির জন্য আরো জানাতে চাই, শুধু সড়ক সংস্কার নয়, সড়কগুলোর দুপাশে ফুটপাত নির্মাণ এবং আইল্যান্ডগুলোও নান্দনিকভাবে সাজানো হবে। এয়ারপোর্ট রোডটি চারলেন বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণা করে নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে।

সিটি করপোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বাসা বেধেছে তা নিরসনে কাজ করছি। নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম হয় সে লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারিতে ব্যাপক সংস্কারে হাত দেব। এ লক্ষ্যে অনুসন্ধান কাজ চলছে।

গৃহকর নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে নগরবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। মূলত সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমার নিজস্ব কোনো এখতিয়ার নেই। অতীতে যেভাবে গৃহকর আদায় করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। তারপরও করের অংক বেশি মনে হলে আপিল করার সুযোগ আছে।

আপনাদের অবগতির জন্য আরো জানাতে চাই, নগরীর সব সড়কে এলইডি লাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী এ কর্মসূচির আওতায় চলে আসবে। নগরীর সব অলিগলি পাকাকরণের কাজ চলছে। নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের সেবকরা নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

প্রিয় নগরবাসী,
আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন, আমি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে নিজ বাসায় শয্যাশায়ী আছি। তারপরও সেবা যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় ডেকে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদার সহযোগিতা এবং মাননীয় স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছে।

আপনাদের দোয়া এবং আশীর্বাদ নিয়ে আমি এ নগরীকে সবুজ, বাসযোগ্য এবং নিরাপদ একটি জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন। 

নিবেদক

আ জ ম নাছির উদ্দীন
মেয়র
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রেজাউল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়