ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বন্ধুর লাশ ঘরে পুঁতে সেখানে ৫৬ দিন বসবাস

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বন্ধুর লাশ ঘরে পুঁতে সেখানে ৫৬ দিন বসবাস

গ্রেপ্তারকৃত মামুন শেখ

পাবনা প্রতিনিধি : বন্ধু রবিউল ইসলামকে হত্যার পর শোবার ঘরের মেঝেতে তিন-চার ফুট মাটি খুঁড়ে লাশ পুঁতে রাখেন মামুন শেখ। ভেবেছিলেন এ ঘটনা কেউ জানবে না। এভাবে কেটে গেছে প্রায় দুই মাস। বুঝতে পারেননি বাড়ির মানুষ বা এলাকাবাসী। সবাই জানে, হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়েছে রবিউল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল মামুন। স্বীকার করলেন বন্ধুকে হত্যার কথা, সন্ধান দিলেন মরদেহের।

এমন রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে। নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর শুক্রবার সকালে ওই গ্রামের মামুন শেখের শোবার ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা কলেজছাত্র রবিউল ইসলামের (২২) গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে অপরহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত মামুন শেখসহ (২৪) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন- একই গ্রামের হৃদয়, শাহিন, মমিন ও মিঠু।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে খাওয়া শেষে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে উলাট গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে রবিউল ইসলাম। পরের দিন ভোরে পরিবারের লোকজন দেখতে পায় রবিউল তার ঘরে নেই। খোঁজ না পেয়ে পর দিন  থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রবিউলের বাবা আব্দুল মালেক। এরমধ্যে মোবাইলে ফোন করে ও এসএমএস দিয়ে রবিউলের পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। টাকা না পেলে রবিউলকে হত্যার হুমকিও দেয় তারা। নিখোঁজ রবিউলের সন্ধান দাবিতে সুজানগরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তার সহপাঠী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ও স্বজনরা।

৫ অক্টোবর নিখোঁজ রবিউলের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে হৃদয় নামের এক যুবককে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে সুজানগর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর বিভিন্ন সময় এজাহার নামীয় আসামি হৃদয়সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ও মোবাইল ট্রাকিং করে মূল আসামি মামুন শেখকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে শুক্রবার সকালে মামুনের শোবার ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা রবিউলের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, মূলত প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কলেজ ছাত্র রবিউলকে প্রথমে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে তার বন্ধু প্রতিবেশী মামুন শেখ। পরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে । লাশ গুম করতে ঘরের মেঝেতে ৩ থেকে ৪ ফুট মাটি খুঁড়ে লাশ সেখানে চাপা দিয়ে রাখে। মামুন নিজেই লাশের জানাজা পড়ে। সেই ঘরেই প্রায় ৫৬ রাত কাটিয়েছে মামুন।

পুলিশ সুপার আরো জানান, তদন্ত চলছে। হত্যার পিছনে আর কোনো কারণ আছে কি না- তা খুঁজে দেখা হবে।



রাইজিংবিডি/পাবনা/১৭ নভেম্বর ২০১৭/শাহীন রহমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়