ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আইভী-শামীমের সংবাদ সম্মেলন: প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

হাসান উল রাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইভী-শামীমের সংবাদ সম্মেলন: প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

বুধবার দুপুরে সিটি মেয়র ডা. আইভী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জানান, তিনি হকার উচ্ছেদের পর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চারটি স্থান নির্ধারণ করেছেন। এ ব্যাপারে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। মঙ্গলবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়াজুল ইসলাম অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশেই তাকে হত্যা করতে তার সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে। নিয়াজুল মেয়রের দিকে অস্ত্র তাক করে হামলা চালায়। তাকে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় মামলা করবেন। ডিসি-এসপি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপির সমন্বয়ে হকারদের পুনর্বাসনের সমন্বয় চলছিল। কিন্তু শামীম ওসমান কেন হকারদের উস্কে দিলেন? আমার নিরস্ত্র নেতাকর্মীর ওপর এমন হামলা চলালেন, এটা দেশবাসী দেখেছে।  নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অযাচিতভাবে হকারদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এদিকে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় মেয়র আইভীর সঙ্গে অস্ত্রসহ বিএনপির সন্ত্রাসী এবং তার ঘনিষ্ঠ আবু সুফিয়ানসহ অন্য সন্ত্রাসীরা মিছিলে এসে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে।

তিনি জানান, গতকালের সংঘর্ষ হয়েছে হকার আর মেয়রের সঙ্গে আসা বিএনপির সন্ত্রাসীদের মধ্যে। এ ঘটনা আইভী-শামীম ওসমানের ইস্যু না। এটা হকার-সিটি করপোরেশনের ব্যাপার। তিনি স্বীকার করেন, নিয়াজুল তার দলের নেতা। যে নিয়াজুল ইসলামকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে সে অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে নিয়াজুল একজন ব্যবসায়ী। তাকে আইভীর মিছিল থেকে তিন দফায় মারধর করা হয়। পরে সে বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার্থে তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র বের করে। কিন্তু সে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফোন করে নির্দেশ দেন সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। তিনি বলেন, মেয়র আইভীর সঙ্গে আমার পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমি গরিব মানুষের পক্ষে ছিলাম এবং আছি। যেহেতু আমি রাজনীতি করি আর নিজেকে এমপি মনে করি না, সেজন্য আমি গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবোই। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের কোনো নির্দিষ্ট এলাকা থাকে না। আমার দাবি, আগামি ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকার বসতে দিতে হবে। এর পরে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসন।

এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবারের ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে।

এদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ১২ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লার ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হালিম আজাদ, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম, সাংবাদিক নাফিজ আশরাফ, আফজাল হোসেন পন্টি প্রমুখ।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর বুধবার কোনো হকার শহরের ফুটপাতে বসেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/নারায়ণগঞ্জ/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/হাসান উল রাকিব/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়