ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করায়...

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করায়...

বিশ্বজিত হালদার ও তার স্ত্রী-পুত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : ‘গ্রামে বাবা ভ্যান চালাত আর আমি মাঠে কাজ করতাম। সবকিছু ফেলে গত দেড় মাস পথে পথে ঘুরছি। এখন খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। প্রাণনাশের ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি না।’

বলছিলেন, যশোরের মণিরামপুরের কুলটিয়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বিশ্বজিত হালদার। গত দেড়মাস বৃদ্ধ বাবা-মাসহ পরিবার নিয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরছেন। এলাকায় ফিরলেই তাকে হত্যা করা হবে এই ভয়ে ঘরে ফেরা হচ্ছে না তার।

বিশ্বজিত বলেন, ‘গ্রামে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে চেয়ারম্যান চক্রান্ত করছে। আমার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করবে বলেও প্রচার হচ্ছে। তাছাড়া চেয়ারম্যান তার অনুসারীদের ডেকে আমাকে এক ঘরে করার ঘোষণা দিয়েছে। আমার আত্মীয় যারা গ্রামে আছে তারা আমাকে ফোন করে সবকিছু জানাচ্ছে।’

কুলটিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন আলীপুর গ্রামের এই বিশ্বজিত। প্রাণভয়ে এখানে-সেখানে মানবেতর জীবন কাটছে তার।

কেন বিশ্বজিতের প্রতি চেয়ারম্যানের এই আক্রোশ? বিশ্বজিতের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের কু-নজর পড়েছিল তার স্ত্রী সুইটি হালদারের ওপর। তারই গ্রামের ভবেন্দ্রনাথের ছেলে পলাশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান কু-প্রস্তাব পাঠায় সুইটির কাছে। সুইটি ঘটনাটি বিশ্বজিতকে জানালে সে পলাশকে সাবধান করতে গেলে শুরু হয় শত্রুতা।

প্রথমেই আক্রান্ত হয় বিশ্বজিতের শিশুপুত্র অয়ন (৭)। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ বছরের ২৯ জানুয়ারি পলাশের বাড়ির লোকজন অয়নের পিছে কুকুর লেলিয়ে দেয়। বিশ্বজিতের মা স্মৃতি হালদার নিষেধ করতে গেলে তাকে মারধর করে পলাশের বাড়ির লোকজন। একই দিনে বিকেলে বিশ্বজিতের ওপর হামলা করে পলাশের লোকজন। এরপর রাতেও (৯টা)দলবল নিয়ে আবারও বিশ্বজিতের বাড়িতে তান্ডব চালায়। বিষয়টি নিরসনের নামে পরের দিন (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শালিস ডাকেন চেয়ারম্যান। সেখানেও পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যানের লোকজন বিশ্বজিত, তার পিতা নিতাই হালদার, মা স্মৃতি হালদার, স্ত্রী সুইটি হালদার, কাকা তপন হালদারসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে তারা মণিরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি বিশ্বজিতের। আবারও হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নেয় সে।

বিশ্বজিত জানান, মারামারির ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি তার বাবা বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। তদন্তভার পড়ে এসআই প্রশান্তর ওপর। তিনি আসামিদের সামনে পেয়েও গ্রেফতার করেননি। এখন আসামিরা জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অন্যদিকে নিজের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্রসহ সাত জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে আরেকটি মামলা করেছেন সুইটি হালদার।

বিশ্বজিত জানান, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ও দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেও জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন না তারা। তবে চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলছেন, বিশ্বজিতের এলাকায় ফেরায় কোন বাধা নেই।

বিশ্বজিত জানান, তাদের মামলার তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে চেয়ারম্যান তাদের নানাবিধ ভয় দেখিয়ে তার পক্ষে নিয়েছে। সম্প্রতি পিবিআই সাক্ষীসহ আসামিদের ডেকেছে। তার যে কাকা (তপন) চেয়ারম্যানের লোকজনের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ছিল, সেও পিবিআই কর্মকর্তার সামনে সব ঘটনা অস্বীকার গেছেন।

সরেজমিন বিশ্বজিতের বাড়িতে গেলে তার ঘর তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়া গেছে। গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতি পেয়ে আশপাশের লোকজন সটকে পড়েছেন। যা দুই একজনকে পাওয়া গেছে তারা কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলেন, ‘কে বলেছে, বিশ্বজিত বাড়ি ছাড়া। তার মা-বাবাতো বাড়ি এসে থাকে। সে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে ষড়যন্ত্র করার জন্য। তার বাড়ি আসতে কোন বাধা নেই।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন,‘আমি কখনও কোন অন্যায় কাজ করিনা। কোন দিন বিশ্বজিতের স্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়নি। অথচ নারী নির্যাতন মামলায় আমাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।’

মণিরামপুর থানার এসআই প্রশান্ত বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন এসেছি। আলীপুরের দুরত্ব থানা থেকে বেশ দূরে। সেখানকার কাউকে আমি চিনি না। বাদী পক্ষ মামলা করে সরে আছে। আসামি ধরার কাজে আমাকে কোন সাহায্য করেনি। আমি কয়েকবার এলাকায় গিয়েছি। আসামিদের চিনতে না পারায় ধরা সম্ভব হয়নি। ওই সুযোগে আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেছি। বিশ্বজিত বাড়ি ফিরলে তার কোন সমস্যা নেই। সে যদি সমস্যা মনে করে তাহলে থানায় আসুক। আমরা তাদের সাথে করে নিয়ে এলাকায় রেখে আসব।’



রাইজিংবিডি/যশোর/১৪ মার্চ ২০১৮/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়