ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘যারা বাংলাদেশের বোলার হতে চান, তাদের জন্য মাশরাফি ভাই উদাহরণ’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘যারা বাংলাদেশের বোলার হতে চান, তাদের জন্য মাশরাফি ভাই উদাহরণ’

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। ৪.৩৯ ইকোনমি রেটে। হিসেব অনুযায়ী একেকটি উইকেটে পেতে মাশরাফি খরচ করেছেন ১৪ রান।

পুরো মৌসুমেই দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন ডানহাতি পেসার। এক ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ পেয়েছিলেন ৬ উইকেট! লিগে ৫ উইকেট পেয়েছেন দু’বার। ৪ উইকেটও পেয়েছেন দু’বার। ২০ উইকেট পেয়েছেন এমন বোলারদের তালিকায় ইকোনমি রেট বিবেচনায় সেরা তিনে রয়েছেন আবাহনীর এ পেসার।

বয়স যে শুধু একটা সংখ্যা, তা আরেকবার মাশরাফি প্রমাণ করেছেন ঢাকা লিগে। তার এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সবাই। তামিম ইকবাল তো স্পষ্ট করে বলে দিলেন, ‘যারা বাংলাদেশের বোলার হতে চান, তাদের জন্য মাশরাফি ভাইয়ের এ পারফরম্যান্স উদাহরণ।’

দেশসেরা ওপেনার আজ গণমাধ্যমের সঙ্গে মিরপুরে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। নিজের ইনজুরি, জাতীয় দল, ঢাকা লিগ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন। রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ দেওয়া হল:

প্রশ্ন : আপনার ইনজুরি নিয়ে একটা আপডেট…শুক্রবার থেকে পুনর্বাসন শুরু হয়েছে।
তামিম ইকবাল : আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আজ তিন বা চার নম্বর দিন গেল। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কাজ থাকছে, হয়তো ট্রিটমেন্ট চলে বা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলে। পুরো সময় কাটিয়ে যদি সুস্থ্য হতে পারি, তাহলে ইনজুরির জায়গাগুলো শক্তভাবে নতুন করে তৈরি হবে। সেটা ভালো হবে। কারণ, একবার খেলা শুরু হলে বিরতিহীনভাবে চলতে থাকবে। অনেকগুলো খেলা আছে। এ কারণে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি ঠিকভাবে সুস্থ হতে পারি তাহলে সামনে আর সমস্যা হবে না।



প্রশ্ন : তাহলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতভাগ ফিট তামিমকে পাওয়া যাবে?
তামিম ইকবাল : খেলা তো জুন মাসে। মে মাসের ৭-৮ তারিখের দিকে আমার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে। তারপর ১০-১২ তারিখের দিকে ক্যাম্প হবে। আশার কথা হলো হাতে অনেক সময় আছে। আশা করি আফগানিস্তান সিরিজের আগেই পুরোপুরি রিকোভার করে নিতে পারব।

প্রশ্ন : উইন্ডিজ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কোর্টনি ওয়ালশের সাথে?
তামিম ইকবাল :  কম বেশি কথা তো সবার সাথেই হতে থাকে। কোর্টনিও পরিকল্পনা করছেন। সবাই ব্যক্তিগতভাবে ওই সিরিজ মাথায় রেখে খেলছে, কাজ করছে। সিরিজটা এখনও অনেক দূর। তার আগে আফগানিস্তানের সাথে খেলা আছে। আমি নিশ্চিত, যে সিরিজই আমাদের সামনে আসবে না কেনো, আমরা ভালোভাবে পারফর্ম করতে প্রস্তুত থাকব।

প্রশ্ন : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ…বিশ্বকাপের আগে নতুন কোচ নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নেয়ার পর্যাপ্ত সময় কি আছে?
তামিম ইকবাল : অবশ্যই সময় আছে। আমার কাছে মনে হয় ভবিষ্যতে কে আসবে না আসবে তা তো আমি বলতে পারি না। এটা বোর্ড দেখছে, তাদের সেরা চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, বর্তমান কোচিং স্টাফে যারা আছেন তাদের অধীনে তাদের পরিকল্পনায় আমরা এগোচ্ছি। এর মধ্যে যদি নতুন প্রধান কোচ বা অন্য কেউ আসেন, আমরা সেভাবেই যাব। 

প্রশ্ন : ঢাকা লিগ প্রায় শেষ। একটা রাউন্ডের ম্যাচ বাকি। কতোটা মিস করলেন?
তামিম ইকবাল : সত্যিই ঢাকা লিগ খেলাটা খুব উপভোগ করি। ঘরোয়া ক্রিকেটে এ আসরটি আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। এই আসরের ক্রিকেটের মান অনেক উঁচুতে। এই আসরে খেলোয়াড়রা শতভাগের চেয়ে বেশি এফোর্ট দেয়। এ রকম একটা আয়োজনে খেলতে না পারাটা হতাশাজনক। কিন্তু এই মুহূর্তে ইনজুরি থেকে সেরে উঠাই আমার মূল কাজ। কারণ, জাতীয় দলের অনেক খেলা আছে। আশা করি ফিট হয়ে গেলেই আমি খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠব।

প্রশ্ন : এবার লিগে ৪৭ সেঞ্চুরি হয়েছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
তামিম ইকবাল : এটা অবশ্যই ইতিবাচক ইঙ্গিত। আপনি যেখানেই রান করুন না কেনো সেটা বড় ব্যাপার, বোলারদের মান কেমন ছিল সেটা বড় নয়। রান করাটাই বড় কথা। অনূর্ধ্ব-১৩ দলে হোক বা জাতীয় দলে হোক, রান করা সহজ কাজ নয়। ৪৭টি সেঞ্চুরি অনেক বড় ব্যাপার। আশা করি সামনে আরো বাড়বে।



প্রশ্ন : তরুণদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা… অনেকের ওপর বড় প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু পূরণ করতে পারেননি?
তামিম ইকবাল : খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শুনেছি, এ বছরের উইকেট খুব ভালো ছিল। তরুণরা যদি আরো একটু ভালো করত, ভালো হত। কিন্তু একেবারে ভালো করে নাই, সেটা বলা ভুল হবে। বিজয় (এনামুল হক) রান করেছে, শান্ত (নাজমুল হোসেন) কিছুটা রান করেছে। এটা বলতে পারেন আরো বেশি তরুণরা যদি রান করতো তাহলে আরো ভালো হত। জাতীয় দলের যারা আছে, তারা খুব চেষ্টা করে। কখনো কখনো তারা আমাদের (সিনিয়রদের) চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে। শুধু ফল পাচ্ছে না। এটা গেমপ্ল্যানের কারণে হতে পারে। আমার বিশ্বাস বেশি দিন নয়, ওরাও বড় বড় পারফরম্যান্স দেয়া শুরু করবে।

প্রশ্ন : কিন্তু ওরা ধারাবাহিক নয় …ওদের থেকে যদি অবদান পাওয়া যায় তাহলে তো জাতীয় দলের জন্যও ভালো?
তামিম ইকবাল : অবশ্যই। তরুণদের কাছ থেকে যদি আরো বেশি অবদান পাওয়া যায়, তাহলে এটা দলের জন্য খুবই ভালো হবে। কিন্তু আমি আসলে সব সময় দেখি ওরা কঠোর পরিশ্রম করে। হয়তো বা ফল পাচ্ছে না। তবে আমি আশা করি খুব দ্রুত ওরা ফলাফলটা পাবে এবং আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে জাতীয় দলের জন্য। যদি আমাদের চার-পাঁচজনের সাথে ওরাও অবদান রাখতে শুরু করে, তাহলে আমরা আরো ভালো দল হয়ে দাঁড়াব।

প্রশ্ন : লিগে বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে মূল্যায়ন…
তামিম ইকবাল : এই একটা জায়গায় আমাদের খুব দ্রুত উন্নতি করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি যে, বোলাররাই আমাদের ম্যাচ জেতায়; বড় বড় জয় যদি দেখেন, ভারত-সিরিজ (২০১৫), দক্ষিণ আফ্রিকা-সিরিজ (২০১৫) বা পাকিস্তান-সিরিজ (২০১৫)। হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করেছে, সঙ্গে বোলাররাও বিশাল দায়িত্ব পালন করেছে দেখেই আমরা জিতেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং বিভাগ যদি সেরা পারফরম্যান্স দেয়, তাহলে ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে যায়। আমাদের যে বোলাররা ফর্মে নেই, তারা দ্রুত তাদের সেরা অবস্থায় এসে যাবে। জাতীয় দলের ব্যাটিং বিভাগটা একটু স্থির এখন। এর সঙ্গে বোলিং বিভাগ যদি পারফর্ম করা শুরু করে, তাহলে কঠিন কঠিন ম্যাচও আমরা জিততে শুরু করব।

প্রশ্ন : মাশরাফি বিন মুর্তজা তো এবার সবগুলো ম্যাচ খেললেন। লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন…
তামিম ইকবাল : উনার ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে। এমন সময়ে এসে এ রকম পারফর্ম করা সহজ নয়। এটাই প্রমাণ করে, উনি ঘরোয়া লিগকেও কতোটা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। উনি যদি পাঁচ বা দশভাগ কম দিয়েও খেলতেন, তাহলে এই অর্জন তিনি পেতেন না। যারা তাঁকে আদর্শ মনে করেন বা বাংলাদেশ দলের বোলার হতে চান, তাদের জন্য মাশরাফির এই পারফরম্যান্স একটা অসাধারণ উদাহরণ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়