মেয়েশিশুর বদলে ছেলের লাশ, অতঃপর...
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মহানগরীর গোলপাহাড় এলাকায় বেসরকারি চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কন্যাশিশুর পরিবর্তে মাকে ছেলে শিশুর লাশ ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের পর মৃত শিশুর পরিবর্তে জীবিত কন্যাশিশুটিকে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালীর মাইজদী এলাকার রোকসানা আক্তার (২১) গত ১৪ এপ্রিল ফেনীর স্থানীয় ক্লিনিকে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর শিশুর নিউমোনিয়া ধরা পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। এরপর প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন গত ১৫ এপ্রিল।
সেখানে ভর্তির পর পার্শ্ববর্তী দুটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় শিশুটিকে কন্যাশিশু হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ মঙ্গলাবার চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কন্যাশিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে শিশুর লাশ প্যাকেট করে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়।
নবজাতকের মা রোকসানা আক্তার জানান, নবজাতক মারা গেছে ডাক্তারদের এই কথা মেনে নিয়ে তারা লাশ নিয়ে নোয়াখালীর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সন্ধ্যার দিকে নবজাতককে কবর দেওয়ার জন্য জানাজার পূর্বে গোসল করার সময় প্যাকেট খোলা হলে রোকসানা দেখতে পান ছেলেশিশুর লাশ।
রোকসানা বলেন, ‘‘আমি কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছিলাম এবং কন্যাশিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম।’’ ছেলেশিশুর লাশ দেখে রোকসানা ও তার পরিবারের সদস্যরা রাতেই অ্যাম্বুলেন্সযোগে চট্টগ্রামে ফিরে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে যান। তারা তাদের কন্যা শিশুকে ফেরত দিতে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আকুতি করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোকসানার পুত্র শিশু ছিল এবং সেটি মারা গেছে বলে জানায়।
রোকসানা তাৎক্ষণিক নিকটস্থ পাঁচলাইশ থানায় যান ছেলে শিশুর লাশ নিয়ে। পুলিশ প্রথমে সাধারণ ডায়েরি করে ঘটনা অনুসন্ধান শুরু করে। পুলিশি তৎপরতা শুরু হলে বুধবার দুপুরের দিকে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোকসানা আক্তারকে তার জীবিত কন্যা সন্তান ফেরত দেয়।
পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘নবজাতকের মায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করে। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা মৃত শিশুর ডিএনএ টেস্ট করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ছেলে শিশুর লাশ ফেরত নিয়ে মায়ের কাছে জীবিত অবস্থায় কন্যা শিশুটি ফেরত দিয়েছে।’’
এ ব্যাপারে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা ‘ভুল হয়েছে’ স্বীকার করলেও গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। শিশুটি উদ্ধারের পর তাকে নগরীর রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৮ এপ্রিল ২০১৮/রেজাউল/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন