ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে কর্মযজ্ঞ

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে কর্মযজ্ঞ

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বড় একটি চরাঞ্চলে এখন অবকাঠামো নির্মিত হয়ে ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী চরের ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।

সরেজমিন অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে এর কর্মযজ্ঞ পরিলক্ষিত হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি,  বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এখানে এখন সড়ক এবং প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এই অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে বিদেশি সংস্থা চায়না হারবার। সড়ক ও প্রশাসনিক অবকাঠামো নির্মাণের পর শুরু হবে শিল্পস্থাপনের উপযোগী প্লট, অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণ। চলতি ২০১৮ সালের মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বড় অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ হাজার একর চরাঞ্চল জুড়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে নির্দিষ্ট করা ৭ হাজার ৭১৬ একর জমি ছাড়াও সমুদ্রতীরে নতুন করে চর জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে প্রথম অবস্থায় চারটি মৌজায় ৬৩৯০ একর জায়গার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে সম্পন্ন হওয়া জাপানের সমীক্ষা অনুযায়ী মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে অত্যাধুনিক রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল শিল্প, অটোমোবাইল শিল্প, শিপবিল্ডিং, ইস্পাত শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এই শিল্পাঞ্চলে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

 



বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাই হবে বাংলাদেশের বিনিয়োগের রাজধানী। মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে এখন মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। দেশি, বিদেশি বড় বড় শিল্পগ্রুপ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অঞ্চলটি। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আবু তোরাব সড়ক হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে এই জোনে যেতে হয়। এখানে যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। চার লেনের এই সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি। চলতি বছরের মধ্যে সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হবে। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবে। সমুদ্রের জোয়ারের পানি থেকে জোনকে রক্ষা করতে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং চায়না হারবার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চায়না হারবারের প্রকৌশলীরা রাত-দিন কাজ করছেন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। কোম্পানিটি ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি ও সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভবন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। জোনে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে মিরসরাইয়ে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্যও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।

 



মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক আহসান উল্লাহ জানান, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশি, বিদেশি বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের কাছ থেকে বড় বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব আসছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ পিএইচপি এখানে ইস্পাত, গ্লাসসহ বিভিন্ন খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই জোনে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। চীনের ঝেজিয়াং জিনদুন হোল্ডিং গ্রুপ ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান কুনমিং স্টিল ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে স্টিল মিল করার প্রস্তাব দিয়েছে বেজা’র কাছে। চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং বস্ত্র, বিদ্যুৎ ও ইস্পাত শিল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই গ্রুপ এখানে ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

এখানে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে- সামিট চিটাগং পাওয়ার ১ হাজার ৭৬০ কোটির, সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি ২০০ কোটির, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন ১ হাজার কোটি টাকার, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি টাকার, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটির, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি টাকার, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটির এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকার।

সর্বশেষ গত শনিবার দেশের স্বনামধন্য শিল্প গ্রুপ র‌্যাংকনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান র‌্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেডের সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাছাই করতে জোন পরিদর্শন করেছেন।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/০৬ এপ্রিল ২০১৮/রেজাউল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়