ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নরসিংদীতে এবার মেক্সিকান ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক আবাদ

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২০ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নরসিংদীতে এবার মেক্সিকান ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক আবাদ

নরসিংদী সংবাদদাতা : বিদেশি ফল রাম্বুটান ও মাল্টার পর এবার নরসিংদীতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে মেক্সিকান ড্রাগন ফল।

প্রথমবারের মতো সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের আবাদ করেছেন শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা। উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পূবেরগাঁও গ্রামে আবাদ করা এ ড্রাগন বাগানে চারার সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি।

২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা এই বাগানে ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে ড্রাগন ফুল। চলতি মে মাসেই আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সৌখিন কৃষক উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা।

আরিফুল ইসলাম মৃধা জানান, উন্নত ফল উদ্ভাবনে জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প, খামারবাড়ি ঢাকার আওতায় এবং নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ড্রাগন ফলের তিন হাজারেরও বেশি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এসব চারা দিয়ে সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ড্রাগন বাগান। সাদা ও লালসহ মোট তিন ধরণের ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে বাগানটিতে। শ্রমিকের মজুরি, গোবর সার প্রয়োগ, ড্রাগন চারা বেড়ে উঠার জন্য সিমেন্টের খুঁটি, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, বাগানে তারের বেড়া ও ফুল পরাগায়ণের জন্য বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা করতে গিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন বাগানে।

তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে বাগান তৈরি করতে এককালীন খরচ একটু বেশি মনে হলেও নিয়মিত খরচ খুব বেশি নয়। বছরের ৭ থেকে ৮ মাসই ড্রাগনের ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি ফল যদি ওজনে ৫শ’ গ্রামের ওপরে হয় তাহলে ৫শ’ টাকা কেজি দরে বাগানেই এই ফল বিক্রি করা যায়। ৫শ’ গ্রামের নিচে হলে তিন থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি করা যায়।’

বছরের বেশিরভাগ সময়ই ফল পাওয়া যাওয়ায় ড্রাগন চাষে সফলতা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

কৃষি কর্মকতাদের দেওয়া তথ্য মতে, সাধারণত চারার বয়স এক বছর না হলে ড্রাগন ফলের ফলন পাওয়া যায় না। আট মাসের মাথায় আরিফুল ইসলাম মৃধার বাগানের ড্রাগনের প্রায় প্রতিটি চারায় ফুল আসতে শুরু করায় সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানের আবহাওয়া ও মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী বলেও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘বাগান তৈরির পর থেকে স্থানীয় মানুষের উৎসুক দৃষ্টি ছিল বাগানের প্রতি। ফুল ধরার পর থেকে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলছে। প্রায় প্রতিদিনই শিবপুরসহ আশপাশের উপজেলা থেকেও আগ্রহী মানুষ ড্রাগন বাগান পরিদর্শনে, ব্যয় ও রোপণ পদ্ধতি জানতে ছুটে আসছেন। চারা উৎপাদন হলে আগামীতে ড্রাগনের বাগান আরও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা আছে।

ব্যস্ত একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলায় আগ্রহী হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে যুবকরা লেখাপড়ার পর চাকরি না পেলে বসে বসে বেকার সময় পার করেন। কৃষিকাজে নামতে লজ্জাবোধ করেন। ড্রাগন চাষ সৌখিন কৃষি কাজ ও লাভজনক নিঃসন্দেহে। আমার বাগান দেখে কোনও বেকার যুবক যদি ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয় তাহলে আমার বাগান করা স্বার্থক হবে বলে মনে করি। বাকি জীবনটা কৃষি কাজ নিয়ে কাটাতে চাই। তাই ড্রাগনসহ অন্যান্য ফসল ও ফল চাষের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি।’

নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে এই প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যানের ড্রাগন ফল বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যে কোনও ফলের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি এই ফল চাষ করে সফলতা অর্জন সম্ভব। এজন্য অনেকেই এখন ড্রাগন চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আগ্রহী চাষিদের ড্রাগন চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ড্রাগন চারা একটানা ২৫ বছর ধরে ফল দিয়ে থাকে। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফল ও চারা বিক্রি সম্ভব।’



রাইজিংবিডি/নরসিংদী/২০ মে ২০১৮/গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়