ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চট্টগ্রামে চার উপজেলায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামে চার উপজেলায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের চার উপজেলায় কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। গৃহহীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। ঈদের পূর্ব মুহুর্তে এমন মহাদুর্ভোগের শিকার হয়ে পরিবারগুলোতে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রামে জেলার ভয়াবহ বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা। এই উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে ফটিকছড়ি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং দুটি পৌরসভার প্রায় সব এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এলাকার শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গত তিনদিন ধরে টানা বর্ষনের ফলে স্মরনকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় ফটিকছড়িতে। মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি থেকে যাওয়ায় বন্যার পানি এখন একটু কমতির দিকে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

ফটিকছড়ি উপজেলার প্রধান নদী হালদা, ধুরুং খান, সর্তাখান, বারমাসিয়া, তেলপারই, মন্দাকিনী, ফটিকছড়ি প্রভৃতি নদী ও খালের পানি উপচে পড়ে সমগ্র উপজেলা তিন থেকে ১০ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায় গত সোমবার রাত থেকে। এছাড়া হালদা নদী, ধুরুংখাল এবং সর্তা খালের একাধিক স্থানে নদীর পাড় ভেঙ্গে পানির নীচে তলিয়ে গেছে। হালদার ভাঙনে পুরোপুরি ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে নাজিরহাট-কাজির হাট সড়ক। ধসে পড়েছে নাজিরহাট-মাইজভান্ডার সড়ক। উপজেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র নাজিরহাট বাজার, উপজেলা সদর বিবিরহাট, আজাদী বাজার, নারায়ণহাট বাজার, দাঁতমারা, কাজিরহাট, বৃন্দাবনহাট প্রভৃতি বাজার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব বাজারের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত, নাজিরহাট-মাইজভান্ডার সড়ক পুরোটাই, ফটিকছড়ি-হেঁয়াকো সড়কের বৃন্দাবনহাট থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত এবং একই সড়কের নারায়নহাট থেকে শান্তিরহাট পর্যন্ত এলাকা তিন থেকে ছয় ফুট পানির নিচে ডুবে থাকায় মঙ্গলবার সকালের পর থেকে এসব সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।



এদিকে উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ড ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত। বাড়িঘরে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বহু কাঁচা বসতঘর। উপজেলার ২ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শত শত মুরগির খামার। খালগুলোতে ব্যাপক ভাঙ্গনের কারণে উপজেলার উপর দিয়ে বিস্তৃত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কসহ অভ্যন্তরীণ দুই শতাধিক সড়ক পানিতে ডুবে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। মঙ্গলবার হাজার হাজার পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে শতাধিক মসজিদ। পানিতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ বাজার, দোকানপাট। বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের কারণে ডাবুয়া, সর্তা, খাসখালী ও বেরুলয়া খালের অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে পৌরসভার ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং চিকদাইর, হলদিয়া, ডাবুয়া ইউনিয়নের প্রত্যেক এলাকা তলিয়ে যায়। উপজেলা সদরের ফকিরহাট এবং রাঙামাটি সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়ে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার হালদা, কর্ণফুলী নদী ও বিভিন্ন খালের পানি। শত শত পরিবার গৃহহীন পড়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত এলাকাগুলো হচ্ছে পৌরসভার ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড, হলদিয়া, পূর্ব গুজরা, ডাবুয়া, চিকদাইর, সদর রাউজান ইউনিয়ন, বিনাজুরী, নোয়াজিষপুর, গহিরা, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, উরকিরচর।

ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে এবং বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে ত্রান সহয়তা প্রদান শুরু করেছেন। এলাকাবাসীর পাশে রয়েছেন সাংসদ ফজলে করিম, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। বন্যার্তদের সহায়তায় রাউজান উপজেলায় তাৎক্ষনিকভাবে ২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রায় ১০টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এই উপজেলাতেও প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মঙ্গলবার থেকে। উপজেলার চন্দ্রঘোনা, উত্তর রাঙ্গুনিয়া, পোমরা, বেতাগী, মরিয়মনগর, রাজানগর, শান্তিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। স্থানীয় সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ , উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্যাকবলিত এলাকা ঘূরে ত্রান সহায়তা প্রদান করছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া বিভিন্ন উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, সরকারী উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রান সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত জনগনের পাশে রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রানসামগ্রীও মজুদ রয়েছে।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৩ জুন ২০১৮/রেজাউল/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়